ঋণের খোঁজে গিয়ে প্রতারণার শিকার

অভিযোগের তদন্তে নেমে জানা যায়, রাতারাতি বিক্রিও হয়ে গিয়েছে ওই গাড়ি ও ফোনগুলি। পুলিশের অনুমান, দাম উঠেছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

ব্যাঙ্ক থেকে উপভোক্তা ঋণ নিলে পরে ‘সোর্স’ খাটিয়ে তা ব্যক্তিগত ঋণে বদলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তারই অংশ হিসেবে তিন যুবকের নামে ১০টি দামি মোবাইল ফোন ও একটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনে চম্পট দিলেন প্রতারক। অভিযোগের তদন্তে নেমে জানা যায়, রাতারাতি বিক্রিও হয়ে গিয়েছে ওই গাড়ি ও ফোনগুলি। পুলিশের অনুমান, দাম উঠেছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।

Advertisement

এই প্রতারণার জেরে গাড়ি-ফোনের উপভোক্তা ঋণ বাবদ মাসে মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে অভিযোগকারী তিন যুবককে। তদন্তে নেমে হরিদেবপুর এলাকা থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত সন্দীপ দাসকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী অভিজিৎ দাস, শুভময় চক্রবর্তী এবং মিঠুন চক্রবর্তী নামে তিন জন সম্প্রতি কল সেন্টারের ব্যবসা করবেন বলে ঠিক করেন। সে জন্য তাঁদের চার লক্ষ টাকা ঋণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অভিজিতের নামে একটি ব্যক্তিগত ঋণ চলছে বলে তাঁর পক্ষে নতুন করে ঋণ পাওয়া সম্ভব ছিল না। পুলিশকে অভিজিৎ জানিয়েছেন, সে সময়ে শুভময়ের এক পরিচিতের সূত্রে সন্দীপের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁদের। সন্দীপ নিজেকে একটি ব্যাঙ্কের ঋণ বিভাগের কর্মী হিসেবে দাবি করেন। জানান, ওই যুবকদের তিনি সরাসরি ব্যক্তিগত ঋণ পাইয়ে দিতে পারবেন না। কিন্তু তাঁরা উপভোক্তা ঋণ নিলে পরে তা ব্যক্তিগত ঋণে বদলে দিতে পারবেন। এর পরে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ উপভোক্তা ঋণের জন্য অভিযোগকারীদের নিয়ে শহরের বিভিন্ন শপিং মল থেকে মোবাইল ফোন কিনতে শুরু করেন সন্দীপ। বেশির ভাগই আইফোনের সবচেয়ে দামি মডেল।

Advertisement

অভিজিৎ বলেন, ‘‘সবই ব্যাঙ্কের ঋণ হিসেবে কেনানো হয়। শুভময়ের এক পরিচিত একই ভাবে ঋণ পেয়েছিলেন বলে জেনেছিলাম। তাই অবিশ্বাস করিনি। কয়েকটি মোবাইলের ক্ষেত্রে সামান্য যা টাকা দিতে হয়েছে, তা-ও সন্দীপই দিয়েছিলেন। ফলে বিশ্বাস আরও বাড়ে।’’ এর পরে তাঁদের নামে কেনা হয় ছ’লক্ষ টাকার একটি সেকেন্ড হ্যান্ড বিলাসবহুল গাড়ি। ফোন এবং গাড়িটি সন্দীপ নিজের কাছেই রাখবেন বলে চেয়ে নেন। অভিজিতের দাবি, ‘‘সন্দীপ বলেছিলেন, মোবাইল ফোন এবং গাড়িটি ব্যাঙ্কে দিয়ে দিলে মোট ঋণের টাকা ব্যক্তিগত ঋণ হিসেবে অ্যাকাউন্টে চলে আসবে!’’ কিন্তু গত ডিসেম্বরের পরেও টাকা অ্যাকাউন্টে না আসায় ওই মাসের শেষের দিকে টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অভিজিতেরা। যে যে এলাকা থেকে মোবাইল ফোনগুলি কেনা হয়েছে, সেই এলাকার থানাতেও গত দু’মাসে অভিযোগ দায়ের করেছেন অভিজিতেরা। চাঁদনি চক এলাকা থেকে কয়েকটি মোবাইল ফোন কেনায় গত শনিবার বৌবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অভিজিৎ।

তদন্তে নেমে টালিগঞ্জ থানার পুলিশ গাড়ির নম্বর ধরে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। হরিদেবপুর এলাকা থেকে গাড়িটি উদ্ধারের পরে জানা যায়, সেটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তার বর্তমান মালিক পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিজিতের নাম করে এক ব্যক্তি গাড়িমালিক সেজে তাঁর কাছে গাড়ি বিক্রি করেছেন।

টালিগঞ্জ থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক জানাচ্ছেন, সন্দীপের নামে তাঁদের থানায় একইরকম আরও একটি অভিযোগ দায়ের রয়েছে। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করতে সন্দীপ যে আধার কার্ড দেখিয়েছিলেন, তা আদতে ভুয়ো। ওই আধার কার্ডে যে ঠিকানা লেখা রয়েছে, সেখানে গেলে দেখা যায় ১৫ বছর আগেই ওই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন সন্দীপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন