Police

সল্টলেকের রাস্তায় বোমা, পুলিশের সামনে নিষ্ক্রিয় করলেন স্থানীয় যুবক!

দত্তাবাদ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২২৮ দত্তাবাদে দুষ্কৃতীরা বৃহস্পতিবার ভোররাতে বোমা মারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ১৩:৫১
Share:

জল ঢেলে বোমা নিষ্ক্রিয় করছেন স্থানীয় যুবক, পিছনে দেখছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

রাস্তায় পড়ে রয়েছে তাজা বোমা। সেই বোমা জল দিয়ে ভিজিয়ে নিষ্ক্রিয় করছেন স্থানীয় এক যুবক। একটু পিছনে দাঁড়িয়ে তা দেখছেন উর্দিধারী পুলিশ কর্মীরা। সাত সকালে এমন দৃশ্যই দেখা গেল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের দত্তাবাদ এলাকাতে।

Advertisement

দত্তাবাদ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২২৮ দত্তাবাদে দুষ্কৃতীরা বৃহস্পতিবার ভোররাতে বোমা মারে। সকালে রাস্তার উপর দু’টি তাজা কৌটো বোমা দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে বিধাননগর দক্ষিণ থানার আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু রাস্তায় পড়ে থাকা বোমা নিষ্ক্রিয় করতে স্থানীয় এক যুবককে ডেকে নেন তাঁরা। সেই যুবক বালতি করে জল এনে সেই বোমার উপর ঢালেন। তারপর লম্বা বাঁশ দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখা হয় বোমাটি ফাটার কোনও সম্ভবনা আছে কি না? তার পর পুলিশ সেই বোমা বাজেয়াপ্ত করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওই ভাবে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মল দত্তও পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনলাম স্থানীয় সব্জি বিক্রেতা এক যুবককে দিয়ে পুলিশ বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করিয়েছে। এটা অত্যন্ত অন্যায়। ওই ধরনের দেশি বোমা কখন কী ভাবে ফেটে যায় কেউ বলতে পারে না। সেখানে ওই যুবকের বোমা ফেটে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কে দায় নেবে? আমি এ বিষয়ে থানার ওসিকেও জানিয়েছি। পুলিশ এ রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করতে পারে না।”

নির্মল দত্তের কথায় একমত সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াডের এক আধিকারিক। তিনি ওই বোমার ছবি দেখে সেটিকে এক ধরনের দেশি কৌটো বোমা বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন,‘‘ এই ধরনের বোমা কখন ফেটে যায় তা বলা যায় না। আমরাও ঝুঁকি নিই না কারণ এক এক জন এই বোমা একেক পদ্ধতিতে বানায়। ফলে ,সামান্য ভুল নাড়াচাড়ার জন্য হঠাৎ ফেটে যেতে পারে ওই বোমা। কাছ থেকে ফাটলে ওই বোমা যথেষ্ট ভয়ঙ্কর।” তিনি বলেন, ‘‘থানার পুলিশ কর্মীরা একটা বড় বালতিতে জল নিয়ে তার মধ্যে বোমা গুলো ফেলে দিতে পারতেন। বালতিটা বেশ কয়েক ঘণ্টা বালির বস্তা ঘিরে রাখা প্রয়োজন। তা হলে নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া অনেক নিরাপদ হয়। এবং সেটা পুলিশ কর্মীদের নিজেদের করা উচিত।”

Advertisement

আরও পড়ুন: এত দিন নিজেকে মহিলা বলেই জানতেন, ক্যানসার চেনাল আসলে তিনি পুরুষ!

২০০৯ সালে লালগড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর জুন মাসে সংবাদমাধ্যমে একটি ছবি প্রকাশিত হয়। সেই ছবিতে দেখা যায়, যৌথ বাহিনী স্থানীয় যুবকদের হাতে লোহার রড দিয়ে রাস্তায় ঘাটে মাওবাদীদের পেতে রাখা ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) খুঁজতে ব্যাবহার করছে। তার পরই সেই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তাঁরা যৌথ বাহিনীকে অবিলম্বে ওই পদ্ধতি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আমি গোটা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তার পর বলতে পারব কী হয়েছে।”

আরও পড়ুন: ত্রাণের ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ শুনে বার্তা মমতার

এর আগে মার্চ মাসের ৭ তারিখ রাতে দত্তাবাদের কালীমন্দিরের সামনে পাঁচটি বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। সেই সময়ও বোমা গুলো ফাটেনি। পরের দিন সকালে বোমা নিষ্ক্রিয় করে নিয়ে যায় পুলিশ। সেই সময় স্থানীয় কাউন্সিলর নির্মল দত্ত বিধাননদর দক্ষিণ থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। তিনি দুষ্কৃতীদের বোমা ছোড়ার সিসিটিভি ফুটেজও দিয়েছিলেন পুলিশকে। কিন্তু তারপরও কোনও দুষ্কৃতী ধরা পড়েনি। তার পর ফের এই ঘটনা ঘটায় পুলিশ নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন