জেলেই জোট বাঁধে চুরির মানিকজোড়

এ-ও এক যুগলবন্দি! একার প্রতিভায় যে এ কাজ হাসিল হবে না, বিলক্ষণ তা বুঝেছিল দু’জনেই। তাই একের গানে অন্যের সঙ্গত। দু’জনেই একবালপুরের লোক। তবে ভুট্টোর সঙ্গে নাটাবাহাদুর ছেত্রীর আলাপটা হয়েছিল আলিপুর জেলে। নাটা ট্যাক্সিচালক, ট্যাক্সির মালিকও বটে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:২৬
Share:

এ-ও এক যুগলবন্দি!

Advertisement

একার প্রতিভায় যে এ কাজ হাসিল হবে না, বিলক্ষণ তা বুঝেছিল দু’জনেই। তাই একের গানে অন্যের সঙ্গত।

দু’জনেই একবালপুরের লোক। তবে ভুট্টোর সঙ্গে নাটাবাহাদুর ছেত্রীর আলাপটা হয়েছিল আলিপুর জেলে। নাটা ট্যাক্সিচালক, ট্যাক্সির মালিকও বটে। আর ভুট্টোর তুখোড় কেরামতি গাড়ির ‘লক’ খোলা বা ভাঙায়।

Advertisement

আলাপ থেকে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব গাঢ় হলে দু’জনে বুঝতে পারে, একে অন্যের সহায় হলেই কেল্লা ফতে। শ্রীঘরে বসে মনস্থির করেও ফেলে তারা— এ বার ‘বড় কিছু করতে হবে।’ গত সেপ্টেম্বর মাসেই তাদের জেলবাসের মেয়াদ ফুরিয়েছে। বাইরে বেরিয়েই পরিকল্পনা মতো মাঠে নেমে পড়ে তারা।

এ দিকে, দক্ষিণ কলকাতায় নিউ আলিপুর-মাঝেরহাট ব্রিজের আশপাশে পর পর কয়েকটি গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটে যাওয়ায় স্থানীয় পুলিশ খুবই বিব্রত। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও কোনও মতেই চোরেদের টিকি ছোঁয়া যাচ্ছে না। হঠাৎই এক দিন নিউ আলিপুর থানার ওসি কৌশিক দাস গোপন সূত্রে জানতে পারেন, রাতে এক ট্যাক্সিচালক পাশে কোনও এক শাগরেদকে বসিয়ে এ-দিক ও-দিক ঘুরে বেড়ায়। তাকে কখনওই যাত্রী ওঠাতে বা নামাতে দেখা যায় না।

সন্দেহ হয় পুলিশের, ওত পাততেই গত সপ্তাহে তাদের জালে ধরা পড়ে যায় নাটা। তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, নিউ আলিপুর-মাঝেরহাট ব্রিজের আশপাশে একের পর এক গাড়ি উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনার পিছনে রয়েছে সে নিজেই।

তবে পুলিশের কাছে নাটা তার বন্ধু ভুট্টোকে বেশিক্ষণ আড়াল করতে পারেনি। তার কাছ থেকে চেহারার বিবরণ নিয়ে গত শুক্রবার ভুট্টোকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সেডান গাড়িও।

পুলিশ জানিয়েছে, নাটা তার ট্যাক্সি নিয়ে বেরোত, তাতে সওয়ার হত ভুট্টো। রাতের শহর জরিপ করত তারা। কোথাও ফাঁকা গাড়ি দেখলে নাটার মোবাইল থেকে ভুট্টো ফোন লাগাত সাঁতরাগাছিতে। সেখানে অপেক্ষা করত এ কাহিনির তৃতীয় কুশীলব জাভেদ। তার সবুজ সঙ্কেত পেলে মওকা বুঝে গাড়ির ‘লক’ ভাঙত ভুট্টো। নাটা চম্পট দিত তার ট্যাক্সি নিয়ে, আর চুরির গাড়ি নিয়ে ভুট্টো চলে যেত সাঁতরাগাছি। ভুট্টো ও জাভেদের মারফত গাড়ি চলে যেত মজফ্ফরপুর অথবা দ্বারভাঙায়। সেখানে জাল নথি তৈরির পরে গাড়ি বিক্রি হয়ে যেত। নাটা ও ভুট্টোকে জেরা করে আপাতত পাঁচটি গাড়ি চুরির কথা জানা গিয়েছে।

ভুট্টোর প্রতিবেশী জাভেদ। কিন্তু এখনও তার হদিশ পায়নি পুলিশ। তবে নাটা আর ভুট্টো এখন ফের এক সঙ্গেই রয়েছে। তবে জেলে নয়, পুলিশ হাজতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন