প্রতীকী ছবি।
শহরের অন্যতম পুরনো গণেশ পুজোর উদ্যোক্তা তিনি। তাই পুজো ছেড়ে যেতে পারবেন না। নিজের স্বাস্থ্য-পরীক্ষা ছিল অন্য জনের। পুজোর আগে পূর্ব-নির্ধারিত সেই পরীক্ষা বাতিল করা সম্ভব নয়! তাই হাজির থাকতে পারেননি। কেউ-কেউ আবার অসুস্থ। এমন বহুবিধ কারণ। আর তাতেই শুক্রবার কলকাতা পুরসভায় ডেঙ্গি পর্যালোচনা বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলরদের একাংশ।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডেঙ্গি-রোধে সকলকে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তার পরেও এ দিনের বৈঠকে অনুপস্থিতের তালিকায় ছিলেন ডেপুটি মেয়র, মেয়র পারিষদ, বরো চেয়ারম্যান-সহ পুরবোর্ডের শীর্ষ ব্যক্তিরা! ফলে পুর প্রশাসনের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে যে, এমন বৈঠকে মেয়র পারিষদ, কাউন্সিলরেরাই যদি হাজির না থাকেন, তা হলে ডেঙ্গি সচেতনতার কাজ কতটা সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব?
পুরসভা সূত্রের খবর, ডেঙ্গি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে চলতি বছর থেকে বরোভিত্তিক একটি বৈঠক শুরু হয়েছে। সেখানে কাউন্সিলর, পুরসভার বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের আধিকারিকেরাও উপস্থিত থাকছেন। থাকছেন পুলিশের প্রতিনিধিও। বরোর অধীনস্থ ওয়ার্ড ধরে ধরে ডেঙ্গি পরিস্থিতি দেখা হচ্ছে। ডেঙ্গি রোধে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, কাউন্সিলরদের কাছ থেকে শোনা হচ্ছে তা-ও। শুক্রবার ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বরো নিয়ে এমনই একটি পর্যালোচনা বৈঠক হয়। বৈঠকে মোট ৩৯ জন কাউন্সিলরের উপস্থিত থাকার কথা। দেখা যায়, বৈঠকে বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরই অনুপস্থিত।
অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হলে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু বলেন, ‘‘গণেশ পুজো বলে যেতে পারিনি। ন’বছরের পুরনো পুজো এটা।’’ আবার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রাজেশ খন্না বলেন, ‘‘হেলথ চেক-আপ ছিল। আগের থেকেই ঠিক করা ছিল। নিজের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে অন্যদের দেখভাল করব কী করে?’’ অনুপস্থিত ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘‘খানাকুলে গিয়েছিলাম। অনেক রাতে ফিরেছি। শরীর খারাপ ছিল, তাই যেতে পারিনি।’’
ডেঙ্গি রোধে কাউন্সিলরদের যে সর্বাগ্রে দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা বারবারই বলে এসেছে পুর স্বাস্থ্য দফতর। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে যাতে কাউন্সিলরেরা সচেতনতার প্রচার করেন, সে জন্য গত বছর কাউন্সিলরদের নির্দেশও দিয়েছিল দফতর। অথচ দেখা গিয়েছে, এ কাজে কাউন্সিলরদের একাংশ এখনও ততটা উদ্যোগী নন! বৈঠকে অনুপস্থিত মেয়র পারিষদ (আলো) মনজর ইকবাল বলেন, ‘‘পুরসভায় দেরি করে গিয়েছিলাম। তাই বৈঠকে যেতে পারিনি।’’ আরেক মেয়র পারিষদ (বাজার) আমিরুদ্দিন ববি বলেন, ‘‘অন্য কাজ ছিল। তাই যাওয়া হয়নি।’’ পাঁচ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অপরাজিতা দাশগুপ্ত জানান, তিনিও যেতে পারেননি।
তবে শুধু শাসকদলের কাউন্সিলরেরাই নন, অনুপস্থিত ছিলেন বিরোধী কাউন্সিলরেরাও। ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সুনীতা ঝাওয়ারের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হলে অন্য এক জন বলেন, ‘‘উনি রাজস্থানে গিয়েছেন।’’ বৈঠকে অনুপস্থিত কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠককে ফোন করা হলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘‘কীসের বৈঠক?’’ ডেঙ্গি বৈঠক হচ্ছে শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের বড় বৈঠক ছিল। তাই যেতে পারিনি।’’
উপস্থিত কাউন্সিলরদের সকলেই স্বীকার করেছেন যে, এ ধরনের বৈঠক যত হয়, ততই সুবিধা। কারণ ডেঙ্গি প্রতিরোধ করতে গিয়ে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তা বলা যায়। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌসুমী দে বলেন, ‘‘খুব ভাল বৈঠক হয়েছে। পুর স্বাস্থ্য দফতর সব রকম সাহায্যের চেষ্টা করছে।’’ আরেক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘সব থেকে বড় কথা, বৈঠকে নিজেদের সমস্যার বিষয়টি বলা যাচ্ছে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করার সুযোগ থাকছে।’’
কিন্তু সেই সুযোগ অনেক কাউন্সিলর নিচ্ছেন না। ফলে ওই ওয়ার্ডগুলির ডেঙ্গি পরিস্থিতি কেমন, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় থাকছে পুর স্বাস্থ্য দফতরও।