‘অসাধারণ’ ফুটপাতে ঝেঁপে এল মনখারাপ

সাধে কি স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গড়িয়াহাটের ফুটপাত তো এক কথায় মুশকিল আসান। কী নেই ওখানটায়! হঠাৎ উপহার দেওয়ার দরকারে জাস্ট জুড়ি নেই ওই তল্লাটের।’’ 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৫
Share:

নবনীতা দেবসেন, স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় ও অলকানন্দা রায়।

মধ্যদিনে দলে দলে ফুটপাত বদল দেখে এই চত্বর।

Advertisement

কারণ ওই ফুটপাত জুড়েই ‘সব পেয়েছি’-র অনন্ত পসরা। ভিড়ে পা-মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কাজের জিনিসটা চিনে নেওয়া, তার পর দরদাম করে অথবা না-করে কিনেও ফেলা। অভিজাত দোকানের শাড়ি-পাঞ্জাবি, ফুটপাতে টাঙানো ন্যায্য মূল্যের ঘর-পরা পোশাক, সোনা-রুপো থেকে শান্তিনিকেতনি ‘জাঙ্ক’, বই থেকে ইলেকট্রনিক্স, খেলনা। মেহেন্দি, রোল-মোমো, জোয়ান-হজমি, ডিভিডি। সাধে কি স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গড়িয়াহাটের ফুটপাত তো এক কথায় মুশকিল আসান। কী নেই ওখানটায়! হঠাৎ উপহার দেওয়ার দরকারে জাস্ট জুড়ি নেই ওই তল্লাটের।’’

আপনি মধ্য কলকাতার বাসিন্দা হোন বা উত্তরের— অন্তত পুজোয় ঠাকুর দেখার ছুতোয় নিশ্চয়ই ছুঁয়েছেন দক্ষিণের এই চত্বর। সুমনের গান থেকে বিজ্ঞাপনের জিঙ্গল, বাংলা রসিকতার ‘শাখাপ্রশাখা’— ফিরে ফিরে এসেছে ‘গড়িয়াহাটার মোড়’ আর সেখানকার কোনও না কোনও স্বনামধন্য বিপণি।

Advertisement

এখন সেই ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বিধ্বস্ত ‘ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি’, স্তূপাকার ছাই, জলকাদা। আর রাস্তায় হতাশা, আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা মাখা অনেকগুলো চেহারা।

এই অঘটনটার কথা না-ভাবার খুব চেষ্টা করছেন নবনীতা দেবসেন। বিশিষ্ট অধ্যাপিকা-সাহিত্যিকের জন্ম হিন্দুস্তান পার্কের বাড়িতে। বললেন, ‘‘আমার প্রথম শাড়ি পরার সময় থেকেই এই দোকানগুলো ছিল। পুজোর বাজার, বিয়ের বাজার সব ওই দোকান থেকে। ট্রেডার্স বা আদি ঢাকেশ্বরীতে হেন শাড়ি নেই, যা পাওয়া যেত না। ভাবলে মন খারাপ হচ্ছে। তবে বেশি কষ্ট ফুটপাতের দোকানগুলোর জন্য। ওদের তো ইনশিয়োরেন্স নেই৷’’ নবনীতাও বলছেন, গড়িয়াহাটের ফুটপাতে ঘুরে ঘুরে কেনার মজাই ছিল আলাদা।

স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু দিন ওই সব দোকানে যাওয়া হয়নি। তবে যাতায়াত তাঁর ছোটবেলা থেকেই। বললেন, ‘‘নানা রকম জিনিস, নানা রকম মানুষ। আমার পায়ের ব্যথাটা যখন ছিল না, পাঁচ বছর আগেও গড়িয়াহাটে ঘোরাটা এক রকম নেশা ছিল আমার। আগুনের খবরটা পেয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে।’’

নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়ের প্রথম ওড়িশি নাচের কস্টিউম কেনা গড়িয়াহাটের দোকান থেকেই। বলছিলেন, ‘‘আমার বাপের বাড়ি ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক, তার পরে লেক টেরেস, যতীন দাস রোড। জীবনটাই কেটে গেল গড়িয়াহাট তল্লাটে। অনেক শপিং মল-টলে যাই, কিন্তু তা যেন খানিক নৈর্ব্যক্তিক। গড়িয়াহাট চত্বরের আন্তরিকতা আর কোথায় পাব!’’ আগুনের খবর পাওয়ার পর থেকে অলকানন্দার মনে হচ্ছে, যেন মুছে যাচ্ছে জীবনেরই একটা অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন