বন্ধ হোক ধর্মের তাস খেলা, মিলুক বিরোধিতার অধিকার

রাস্তায় না বেরিয়ে বাড়িতে, কর্মস্থলে কিংবা অন্য কোথাও টিভির সামনেই প্রায় গোটা দিন কাটিয়েছেন সিংহভাগ মানুষ। ফলে এ দিন দীর্ঘ সময় ধরেই কলকাতা শহরের রাস্তা ছিল ফাঁকা, সুনসান।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০২:০৫
Share:

বিরাটির একটি মাঠে ভোটের ফল দেখতে মোবাইলে চোখ নতুন ভোটারদের। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

কেউ চাইছেন রাজনীতির আঙিনায় বন্ধ হোক ধর্মের তাস খেলা। কেউ চাইছেন নতুন প্রজন্মের হাতে আসুক কাজের সুযোগ। কেউ আবার চাইছেন গণতন্ত্রে বিরোধিতার ছাড়পত্রও। আগামী পাঁচ বছর নতুন প্রজন্মের কোন চাহিদা শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের সরকার মেটাতে পারবে, দেশের রাজনৈতিক বাতাবরণ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবে— তা বোঝা যাবে আগামী দিনেই। তবে বৃহস্পতিবার লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিন শহরের কমবয়সি ভোটারদের মুখে শোনা গেল অনেক প্রত্যাশার কথাই।

Advertisement

এক দিকে প্রবল গরম। তার উপরে ভোটের ফলাফল প্রকাশ। ফলে রাস্তায় না বেরিয়ে বাড়িতে, কর্মস্থলে কিংবা অন্য কোথাও টিভির সামনেই প্রায় গোটা দিন কাটিয়েছেন সিংহভাগ মানুষ। ফলে এ দিন দীর্ঘ সময় ধরেই কলকাতা শহরের রাস্তা ছিল ফাঁকা, সুনসান। তার মধ্যেও রাস্তায় দেখা মিলল এ বার প্রথম ভোট দিয়েছেন এমন কয়েক জন তরুণ-তরুণীর। কাউকে দেখা গেল ফলাফল নিয়ে খুশি হওয়া সত্ত্বেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ না করে কথা বলতে। কাউকে আবার দেখা গেল রাখঢাক না করেই ফলাফল নিয়ে হতাশা প্রকাশ করতে।

টালিগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন বছর উনিশের সাকলিন খান। এ বারই প্রথম ভোট দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের ফলাফল দেখেছেন? জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ছাত্রী সাকলিনের কথায়, ‘‘হ্যাঁ দেখেছি। বেশির ভাগ মানুষই যা চেয়েছিলেন তারই প্রতিফলন ঘটেছে।" নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী? সাকলিনের সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘রাজনীতি নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তবে উন্নয়নের প্রশ্নে যেন বিভেদ না থাকে। সকলকে নিয়ে দেশ এগিয়ে চলুক।’’

Advertisement

আবার সমাজতত্ত্বের ছাত্রী রিজওয়ানা নাসরিন যেমন বললেন, ‘‘নির্বাচনে হার-জিত থাকবেই। তবে চাইব ধর্ম যেন রাজনীতির সঙ্গে না মেশে।’’ সত্যিই তো, ফলাফল নিয়ে এ দিনের রাজনৈতিক পর্যালোচনায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির মিশে যাওয়ার প্রসঙ্গই বারবার উঠে এসেছে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনুপমা সিংহের নাম বছর কয়েক আগেই ভোটার তালিকায় উঠেছিল। তবে এ বারই তিনি প্রথম ভোট দিতে গিয়েছিলেন। বেহালার বাসিন্দা অনুপমা যে ভোটের ফলাফলে খুশি নন, তা স্পষ্টই জানালেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার ভোট নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল। তবে ফলাফল হতাশ করেছে।’’ তাঁর প্রত্যাশা গণতান্ত্রিক দেশে যেন স্বেচ্ছায় মত প্রকাশের অধিকার থাকে। গণতন্ত্রে বিরোধিতার পরিসরও যেন খোলা থাকে, এমনটাই চান এই তরুণী ভোটার।

বছর কুড়ির সুজয় রক্ষিত দক্ষিণ কলকাতার একটি ম্যানেজমেন্ট কলেজের পড়ুয়া। পূর্ববর্তী সরকার নতুন প্রজন্মের সামনে চাকরির ক্ষেত্র উন্মুক্ত করতে পারেনি বলেই নির্বাচনে বিরোধী দলগুলি বারবার তা নিয়ে প্রচার করেছে। সুজয়ের কথায়, ‘‘কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার থাকলে সুবিধা। তবে সরকার যেন কর্মসংস্থানেও জোর দেয়। পড়াশোনা শেষ করার পরে চাকরি পাওয়াটা খুবই জরুরি।’’

এমনই বিভিন্ন আশা-আকাঙ্ক্ষার কথাই এ দিন জানিয়েছে নতুন প্রজন্মের ভোটারেরা। রানিকুঠির বাসিন্দা ছাত্রী দেবাঞ্জনা পালের কথায়, ‘‘প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেন আয়ত্তের মধ্যেই থাকে। রাজনীতির নামে কথায় কথায় হিংসাও বন্ধ হোক।’’ আবার কুঁদঘাটের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী বছর উনিশের সুদেষ্ণা হোম বলেন, ‘‘কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার থাকাটা খুব জরুরী। দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নও খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির দিক থেকেও দেশের উন্নতির প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন