অনলাইন ম্যাপ চালু, ফোন ছিনতাই করে পুলিশের জালে

রবিবার ওই ঘটনা ঘটে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই দুষ্কৃতীদের নাগাল পেয়ে যায় পুলিশ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০৩:১২
Share:

আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় গ্রেফতার হওয়া তিন অভিযুক্ত। নিজস্ব চিত্র

মোবাইলে চালু থাকা অনলাইন ম্যাপই ধরিয়ে দিল ছিনতাইকারীদের।

Advertisement

তরুণী শিক্ষিকার হাত থেকে মোবাইল ছিনতাই করেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু কোনও ভাবে সেটি লক হয়ে যায়। অনেক চেষ্টাতেও সেই ফোন দুষ্কৃতীরা বন্ধ করতে পারেনি। উল্টে মোবাইলে চালু করা ছিল অনলাইন ম্যাপ। তাই মোবাইল ছিনতাই করে গা ঢাকা দিলেও পুলিশের নাগাল এড়াতে পারল না ছিনতাইকারীরা। শিক্ষিকার মোবাইলে চালু থাকা সেই অনলাইন ম্যাপ অনুসরণ করেই ছিনতাইকারীদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল পুলিশ।

রবিবার ওই ঘটনা ঘটে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই দুষ্কৃতীদের নাগাল পেয়ে যায় পুলিশ। বিকাশ মল্লিক, মিলন ডোম এবং রাজা হরি নামে ধৃত তিন অভিযুক্তকে আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ধৃতদের প্রত্যেকেরই বয়স কুড়ি থেকে তেইশের মধ্যে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, পানিহাটির একটি কলেজের অতিথি শিক্ষিকা বিবিতা মজুমদার নামে বছর সাতাশের এক তরুণী গত রবিবার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন। পুলিশকে তিনি জানান, ওই দিন চাকরির পরীক্ষার জন্য বইপাড়ার সূর্য সেন স্ট্রিটের একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। হাওড়ার বাড়ি থেকে বাসে মহাত্মা গাঁধী রোডে নেমে বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট ধরে হাঁটছিলেন। রাস্তা চিনতে না পারায় সেই সময়ে মোবাইলে অনলাইন ম্যাপ চালু করেন তিনি। তার কিছু পরেই সূর্য সেন স্ট্রিটের দিক থেকে মোটরবাইকে আসা তিন যুবক মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় বলে তাঁর অভিযোগ।

ঘটনার পরে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এক স্থানীয়ের সাহায্যে তিনি প্রথমে বৌবাজার থানায় যান। যদিও ঘটনাস্থল আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার অন্তর্গত বলে জানানো হয় তাঁকে। এর পরে দেরি হবে ভেবে পরীক্ষা কেন্দ্রে চলে যান তিনি। পরীক্ষা শেষ হলে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিবিতা।

তদন্তে নেমে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসি কৌশিক দাস এবং ভি পি জি সাউ নামে এক পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে যান। সেখানকার একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের গায়ে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে একটি সবুজ-কালো রঙের মোটরবাইক থেকে তরুণীর মোবাইল ছিনতাইয়ের ছবি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে তরুণী পুলিশকে জানান, তাঁর মোবাইলে অনলাইন ম্যাপ চালু রয়েছে। একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সেই ম্যাপের সূত্র ধরে মোবাইলটির অবস্থান কোথায় রয়েছে, তা দেখার চেষ্টা হয়। বৈঠকখানা বাজারের একটি জায়গায় বেলা দেড়টা নাগাদ শেষ বার মোবাইলটি দেখা গিয়েছিল বলে জানায় অ্যাপটি।

সেই জায়গায় হানা দিয়ে এর পরে পুলিশ সবুজ-কালো রঙের মোটরবাইকটি আটক করে। শুরু হয় সেটির মালিকের খোঁজ। সেই সূত্রেই ভি পি জি সাউ এবং অরূপ চৌধুরী নামে আর এক পুলিশকর্মী বিকাশকে আটক করে। বাইকটি তার মায়ের নামে কেনা। জেরায় বিকাশই বাকিদের নাম বলে দেয়। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা সূত্রের দাবি, ‘‘কলেজ স্ট্রিট এলাকায় এই রকম বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ জমা পড়ছিল। গ্রেফতার হওয়া ছেলেগুলির মধ্যে এক জনের পুরনো অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। অন্য দু’জনেরটাও দেখা হচ্ছে।’’

ববিতার বাবা অমল মজুমদার বলেন, ‘‘পুলিশ যে ভাবে কাজ করেছে তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন