পোড়া বাজারেই ফের ভেটকি, গলদা

মঙ্গলবারই দোকান খুলে বসলেন গোরাবাজারের বিজয়, তারক, শৈলেনরা। নিজের দোকানে তো কোনও জায়গাতেই কাজ করার মতো অবস্থা নেই। কেউ বাইরে অন্য জায়গায়, কেউ বা বাজারের মধ্যেই খানিকটা জায়গা পরিষ্কার করে ভেটকির ফিলে কাটা শুরু করলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৯
Share:

ফাইল চিত্র।

দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।
মজুত করা মাছও পুড়ে নষ্ট। কিন্তু তাতে কী! বিয়েবাড়ির মাছ-মাংসের বায়না নেওয়া আছে যে!
তাই হা-হুতাশ সরিয়ে রেখে, মঙ্গলবারই দোকান খুলে বসলেন গোরাবাজারের বিজয়, তারক, শৈলেনরা। নিজের দোকানে তো কোনও জায়গাতেই কাজ করার মতো অবস্থা নেই। কেউ বাইরে অন্য জায়গায়, কেউ বা বাজারের মধ্যেই খানিকটা জায়গা পরিষ্কার করে ভেটকির ফিলে কাটা শুরু করলেন। কেউ আবার মুরগির মাংস কেটে রাখতে লাগলেন বড়সড় ডেকচিতে।

Advertisement

চার দিকে পুড়ে যাওয়া বাজারের ধ্বংসস্তূপ। আধপোড়া আনাজ, ডিম, চাল-ডাল, আলু তখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। রবিবার আগুনের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তারক দাস। গলা দিয়ে শব্দ বেরোচ্ছে না। হাতে ওষুধ। লক্ষাধিক টাকার মাছ আগুনে পুড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন করতেই কোনও রকমে বললেন, ‘‘ছ’টা বিয়ে বাড়ির অর্ডার নেওয়া আছে। কোথায় যাবেন তাঁরা? তাই সব কিছু ভুলে নতুন মাছের ব্যবস্থা করেছি। সে মাছ কাটাও হচ্ছে।’’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিয়ের মরসুম চলছে। সোমবারও প্রচুর বিয়ে ছিল। কিন্তু কে জানত, আগুনের একটা মাত্র ফুলকি ছাই করে দেবে একটা গোটা বাজারকে। বিয়ে বাড়ির জন্যই তারক দাস, আনন্দ সাহা, বিজয় নস্কর, শৈলেন মণ্ডলরা দোকানে মাছ, মাংস মজুত করেছিলেন। বড় কাতলা, ভেটকি, ভোলা ভেটকি, গলদা চিংড়ি, তোপসে মাছ আরও কত কী! কিন্তু রবিবার সে সবই আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছে।

Advertisement

একই অবস্থা বিজয় নস্করেরও। রবিবার রাতে লাগা আগুনে ক্ষতির পরিমাণ বলতে গিয়ে কিছু ক্ষণ চুপ করে গেলেন তিনি। থেমে থেমে বললেন, ‘‘বিয়েবাড়ি এবং পুজোর বাজারে ১০-১২ লাখ টাকার মাছ মজুত করেছিলাম। ৬-৭ লাখ টাকার যন্ত্রপাতিও ছিল। সব শেষ। কিন্তু হার মানব না।’’ বিজয়বাবুর ক্ষতির তালিকার মধ্যে রয়েছে হাজার কিলো ভেটকি, ৮০০ কিলো বোম্বে ভেটকি, ৬০০ কিলো রুই-কাতলা, ২৫০ কিলো গলদা এবং বাগদা চিংড়ি ইত্যাদি। সব পুড়ে ছাই। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ বিজয়বাবু। সকাল থেকেই কর্মীদের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে মাছ কেটে, জলে ধুয়ে ডেকচিতে জমা করছেন। যাঁরা বিয়েবাড়ির অর্ডার দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েক জন এই অবস্থা শুনে অন্য জায়গা থেকে মাছের ব্যবস্থা করেছেন। বাকিদের অবশ্য মাছের জোগান দিয়েছেন বিজয়বাবু ও তাঁর কর্মীরা।

বিজয়বাবুকে মাছের বরাত দিয়েছিলেন বেলঘরিয়ার বসন্ত সাউ। এ দিন সকালেই তিনি গোরাবাজারে হাজির। তিনি বলেন, ‘‘আগুনের কথা শুনে চিন্তায় পড়েছিলাম। কিন্তু বিজয়বাবু বললেন মাছ দিতে পারবেন। তাই সকালেই চলে এসেছি। ওঁদের অবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছে না।’’

এরই মধ্যে শৈলেন মণ্ডলের মুরগির দোকান কোনও রকমে আগুনের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু মারা গিয়েছে বেশ কিছু মুরগি। এ দিন পোল্ট্রি খামার থেকে নতুন মুরগি নিয়ে এসে বিয়েবাড়িতে জোগান দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন