‘মৌচাকে হাত দিয়ে কেউ যেন অসুবিধায় না পড়েন’

রোয়িং ক্লাবের গেট দিয়ে লেকে ঢুকেছিলেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল। নীলের রকমফের দু’জনের ট্র্যাকস্যুটে। লাল ও নীল স্নিকার্সধারী দম্পতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২৮
Share:

নিরাপদে: স্ত্রীর সঙ্গে রবীন্দ্র সরোবরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

হাঁটতে এসেছিলেন। হাঁটলেন। ১০-১৫ মিনিট। বললেনও। অন্তত আধ ঘণ্টা!

Advertisement

বৃহস্পতিবার সাতসকালে লেক কালীবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অভিমানী রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান, ‘‘আমি তো বোলার নই! রাজ্যের আম্পায়ার। তবু ক্রিকেট টিমের মতো আমার সামনে পরপর ব্যাটসম্যান পাঠাচ্ছে কেন?’’ পরক্ষণেই, ‘‘এমন যেন না-হয়, সবাই মৌচাকে হাত দিয়ে অসুবিধায় পড়ে গেলেন।’’ হুল বোঝাও গেল। ‘বোন চন্দ্রিমা’ (মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য), ‘ভাই ববি হাকিম’ (মেয়র ফিরহাদ হাকিম) থেকে মুখ্যমন্ত্রী— সকলের কথাই একে একে টেনে এনেছেন।

রোয়িং ক্লাবের গেট দিয়ে লেকে ঢুকেছিলেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল। নীলের রকমফের দু’জনের ট্র্যাকস্যুটে। লাল ও নীল স্নিকার্সধারী দম্পতি। সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে ঘণ্টাখানেকের লেক-পর্বে হাঁটার সময় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। আস্তে হাঁটা। জগিংয়ের আভাস। দফায় দফায় থেমে নিজস্বী তুলেছেন। সঙ্গে কথা। জগদীপ ধনখড় নিজেই বলেছেন, ‘‘প্রো-অ্যাক্টিভ (অতি সক্রিয়) নই, আমি তো অ্যাক্টিভ (হয়তো সচল বলতে চেয়েছেন) রাজ্যপাল। ভিক্টোরিয়াতেও হেঁটেছি। হাওড়া-হুগলিতেও যাব।’’ আফশোস করেছেন, ‘‘সবাই ছুটি পায়। আমি কিছুতেই পাচ্ছি না! সবার সঙ্গে দেখা করতে চলে এসেছি।’’

Advertisement

বেঞ্চিতে বসে সামান্য খেজুরে আলাপ। জটলার সামনে কুশলপ্রশ্ন। রোয়িং ক্লাবের গেট দিয়েই বেরোনোর আগে কিশোরদের ফুটবল খেলায় ঢুকে পড়েছেন। বলে শট মেরে রাজ্যপাল সহাস্যে বলেন, ‘তাকত হ্যায়’! মন্ত্রী, মেয়রদের ঠেস-পর্বের পরের অর্ধে। লেক কালীবাড়িতে পুজো সেরে বেরিয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবসের আগে বলুন, রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে আমি কি ন্যূনতম সম্মান পাই? কেন পাই না?’’ ধনখড় ব্যথিত, অন্য মন্ত্রীদের তাঁর ব্যাপারে মুখ না-খুলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই না-হয় বলুন। মেয়রকে তাঁর ‘পরামর্শ’, শহরের অবস্থাটা নিজের চোখে দেখুন। ‘‘রাজভবন থেকে রবীন্দ্র সরোবর, আসার পথে শহরের চেহারাটা যা দেখলাম, নিজের চোখে দেখেছেন?’’ মেয়র পরে বলেন, ‘‘উনি কলকাতা কত দিন দেখছেন? এ সব ইচ্ছে করে বলা।’’

চন্দ্রিমাকেও রাজ্যপালের উপদেশ, ‘‘আপনি আমার কথা ছেড়ে নিজের দফতরের রাশি রাশি সমস্যায় মন দিন।’’ শুনে চন্দ্রিমা স্তম্ভিত, ‘‘সমস্যা থাকলে, মুখ্যমন্ত্রীকেই বলব।’’

শরীর ভাল রাখতে রাজ্যপালকে মুখ্যমন্ত্রীর মতো ১৯-২০ কিলোমিটার হাঁটতে বলেছিলেন চন্দ্রিমা। তা হাঁটেননি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় লেক কালীবাড়িতে মিনিট পনেরো কাটিয়েছেন রাজ্যপাল। মমতা এই মন্দিরে প্রায়ই আসেন, আচমকা। মন্দিরের সন্তোষী মা, মা বগলার মূর্তিটিও মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই।

এ দিনই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের জন্য দিল্লি গিয়েছেন রাজ্যপাল। তবে সেখানে রাজ্যের প্রসঙ্গে কোনও কথা হবে না, জানিয়েছেন নিজেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন