আলিপুরে মৃত কিশোরী সঞ্জনা সিংহ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দিন দশেক আগে আলিপুরে ঘরের আলমারি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল আরজি কর-কাণ্ডের দোষী সঞ্জয় রায়ের ভাগ্নির দেহ। বছর দশেকের নাবালিকার ‘রহস্যমৃত্যু’ ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন পাড়াপড়শিরাও। সেই ঘটনায় এ বার পুলিশের দ্বারস্থ হলেন মৃত কিশোরীর ঠাকুমা। নিজের ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধেই দায়ের করলেন খুনের অভিযোগ!
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগেই ছেলে ভোলা সিংহ এবং বৌমা পূজা সিংহের বিরুদ্ধে আলিপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন ঠাকুমা প্রতিমা সিংহ। তাঁর দাবি, ছেলে-বৌমা মিলে খুন করেছেন তাঁর নাতনি সঞ্জনা সিংহকে। এর আগে কিশোরীর দেহ উদ্ধারের পরেও ঠাকুমা দাবি করেছিলেন যে, নাতনি প্রায়ই লুকিয়ে তাঁর কাছে এসে জানাত, বাবা ও সৎমা মিলে তাকে মারধর করেছে। এমনকি, তাঁর ঘরে ঢোকার অনুমতিও ছিল না নাতনির। পড়াশোনা থেকে শুরু করে ছোট ছোট কারণে শাসনের নামে বেধড়ক মারধর করা হত তাকে। ঠাকুমা এ-ও দাবি করেছিলেন, পূজার সঙ্গে ছেলে ভোলার সম্পর্কের কানাঘুষোর কারণেই আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন ভোলার প্রথম পক্ষের স্ত্রী, অর্থাৎ পূজার দিদি ববিতা।
গত ২০ অক্টোবর, কালীপুজোর রাতে দক্ষিণ কলকাতার আলিপুর থানার বিদ্যাসাগর কলোনি এলাকার বাড়ি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ওই নাবালিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। আলমারির হ্যাঙ্গার থেকে আংশিক ঝুলছিল দেহটি। পরে জানা যায়, নিহত কিশোরী আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয়ের ভাগ্নি। প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়ের বড়দি ববিতা রায়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ভোলার। সঞ্জনা তাঁদেরই মেয়ে। বছরখানেক আগে ববিতার মৃত্যুর পর ভোলা তাঁর শ্যালিকা, অর্থাৎ সঞ্জয়ের ছোড়দি পূজাকে বিয়ে করেন। পূজাও কলকাতা পুলিশে কাজ করতেন। সেই পূজাই মাসি থেকে হয়ে ওঠেন সঞ্জনার সৎমা। অভিযোগ, এর পরেই নাকি শুরু হয় অত্যাচার।
কিশোরীর দেহ উদ্ধারের পর একই অভিযোগ তুলেছেন এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা। ভোলা ও পূজাকে ঘিরে ধরে মারধরও করেন তাঁরা। এলাকাবাসীদের দাবি, বাবা ও সৎমা মিলে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক ভাবে নিগ্রহ করতেন ওই কিশোরীকে। পরে অবশ্য ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আসার পর পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার ইঙ্গিত মিলেছে। একই দাবি করছেন মৃত কিশোরীর বাবা-সৎমাও। তবে এ বার খুনের মামলা দায়ের হওয়ায় বিষয়টি ফের তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।