আহতকে বাঁচাতে গ্রিন করিডর

দ্রুত সিটি স্ক্যানে ঢুকিয়ে দেওয়া হল জখম ওই ব্যক্তিকে। লালবাজারের ট্র্যাফিক-কর্তারা জানান, তাঁদেরই অফিসারদের তৎপরতায় তৈরি হয়েছিল ওই ‘গ্রিন করিডর’, যাতে চিকিৎসা শুরু হতে এতটুকুও দেরি না হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৫১
Share:

বেপরোয়া: বাসটি ধাক্কা মারে এই দু’টি গাড়িতেও। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

বুধবার সকাল সওয়া দশটা। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট মোড় ও গোলপার্কের সব ক’টি ট্র্যাফিক সিগন্যাল হঠাৎ সবুজ হয়ে গেল মিনিট পাঁচেকের জন্য। পথচারীরা দেখলেন, রাস্তা দিয়ে ছুটে যাচ্ছে একটি ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। ভিতরে গুরুতর জখম এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে পুলিশের পাইলট হিসেবে চলেছেন লাল মোটরবাইক আরোহী এক সার্জেন্ট। অ্যাম্বুল্যান্স সোজা ঢুকে গেল ঢাকুরিয়া ব্রিজের পাশে এক বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা ট্র্যাফিক-কর্তাদের থেকে খবর পেয়ে তৈরিই ছিলেন। দ্রুত সিটি স্ক্যানে ঢুকিয়ে দেওয়া হল জখম ওই ব্যক্তিকে। লালবাজারের ট্র্যাফিক-কর্তারা জানান, তাঁদেরই অফিসারদের তৎপরতায় তৈরি হয়েছিল ওই ‘গ্রিন করিডর’, যাতে চিকিৎসা শুরু হতে এতটুকুও দেরি না হয়।

Advertisement

কী ঘটেছিল এ দিন? পুলিশ জানায়, এর কিছু ক্ষণ আগে সকাল পৌনে দশটা নাগাদ রাসবিহারী অ্যাভিনিউ ও লেক ভিউ রোডের মোড়ে নিয়ন্ত্রণহীন বাসের ধাক্কায় গুরুতর জখম হন বিপ্লব দাস নামে এক মোটরবাইক আরোহী। বছর পঞ্চাশের বিপ্লববাবুর বাড়ি যাদবপুরে। বাসের চালক ট্র্যাফিক সিগন্যাল অমান্য করে জোরে এগোতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে বিপ্লববাবুকে আড়াআড়ি ধাক্কা মারেন। তার পরে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ও আরও কয়েকটি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িকে ধাক্কা মেরে পালাতে যান। কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশ অফিসারেরা বাসটি আটক করে চালককে ধরে ফেলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কিছু দোকানদার ও সাউথ ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসারেরা জানান, এ দিন সকালে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের সিগন্যাল বন্ধ করে মনোহরপুকুর রোডের সিগন্যাল সবুজ করেন কর্তব্যরত ট্র্যাফিক কর্মী। সিগন্যাল খোলা পেয়ে মোটরবাইক নিয়ে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে উঠতে যান বিপ্লববাবু। সেই সময়ে কসবামুখী ১৮সি রুটের একটি বাস সিগন্যাল অমান্য করে জোরে এগিয়ে যেতে গিয়েই ধাক্কা মারে বিপ্লববাবুর মোটরবাইকে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ইচ্ছে করে বান্ধবীকে দূরে পাঠায় প্যাডক

খবর পেয়ে গড়িয়াহাটের দিক থেকে মোটরবাইকে চেপে ঘটনাস্থলে যান সাউথ ইস্ট গার্ডের সার্জেন্ট অনীন্দ্রজিৎ ঘোষ। তত ক্ষণে বাসের চালক নেমে ছুটতে শুরু করেছেন। মোটরবাইক থামিয়ে চালককে ধরে ফেলেন ওই সার্জেন্ট। চালককে মারধর থেকে বাঁচাতে ট্র্যাফিক বুথের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

ইতিমধ্যে পৌঁছে যান ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি অঞ্জন দত্ত, অতিরিক্ত ওসি শান্তনু কুণ্ডু ও সার্জেন্ট গৌতম গুহ। পথচলতি লোকজন ও দোকানদারদের সাহায্যে বিপ্লববাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। তার পরে ‘গ্রিন করিডর’ (হাসপাতালে যাওয়ার পথে সব ক’টি সিগন্যাল সবুজ করে দেওয়া) তৈরি করে ‘ট্রমা কেয়ার’ অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে বিপ্লববাবুকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে। উল্লেখ্য, এক রোগীর মৃত্যুর জেরে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে এই হাসপাতালেই ভাঙচুর হয়েছিল।

সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, বিপ্লববাবুর মাথায় হেলমেট থাকায় খুলিতে তেমন চোট না লাগলেও মাথার ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে। চোয়ালেও চোট রয়েছে। কয়েকটি দাঁতও ভেঙে গিয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ ওই বাসের চালককে গ্রেফতার করেছে। আটক করা হয়েছে বাসটিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন