জোড়েনি হাত, বধূর সঙ্গী শুধুই যন্ত্রণা

বর্তমানে তিনি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রবিবার রাতে তপতীদেবীর ডান হাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৪০
Share:

অসহায়: হাসপাতালে তপতীদেবী।— নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের বিছানায় সারা রাত যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন তিনি। ঘুমোতে পারেননি। পরিবারের কোনও সদস্যকে দেখলেই ইশারায় ডান হাতের কাটা দিকটা দেখাচ্ছেন। তাঁদের কাছে ডুকরে কেঁদে উঠে শুধু একটাই কথা বলছেন, ‘‘ডাক্তারবাবুরা কি আমার ডান হাতটা কোনও ভাবেই জোড়া লাগাতে পারবেন না?’’

Advertisement

রবিবার ভোরে নিমতলা ঘাটে প্রতিবেশীকে দাহ করে বাড়ি ফেরার সময়ে আহিরীটোলার মোড়ে দু’টি ম্যাটাডর ভ্যানের সংঘর্ষে ডান হাত কাটা যায় বাগুইআটির বাসিন্দা তপতী রায়ের। বর্তমানে তিনি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রবিবার রাতে তপতীদেবীর ডান হাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘তপতীদেবীর হাত জোড়া লাগানো সম্ভব হয়নি। কারণ কাটা অংশটি বেশ খানিকটা রাস্তা ঘষটে যাওয়ায় সেটির এমন অবস্থা হয় যে তা জোড়া লাগানো যায়নি। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল।’’

রবিবার ভোরের দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে তপতীদেবী সোমবার হাসপাতালের বেডে শুয়ে বলেন, ‘‘আমাদের ম্যাটাডরটি বেশ জোরেই ছুটছিল। হঠাৎ উল্টো দিক থেকে অন্য ম্যাটাডরটি প্রচণ্ড গতিতে এসে আমাদের গাড়িকে ধাক্কা মারল। তার পরে আমার কিছুই মনে নেই। ঘটনার তিন ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বুঝতে পারি, আমার ডান হাতটা নেই।’’

Advertisement

অঙ্গ কাটা পড়লে কী করবেন


হাত বা আঙুল কাটা পড়লে প্রথমেই মোটা কাপড় দিয়ে চেপে ধরে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হবে।


কাটা অঙ্গটি ভাল ভাবে ধুয়ে একটি প্লাস্টিকের প্যাকেটে পুরতে হবে।


অন্য একটি প্যাকেটে বরফ নিয়ে তাতে কাটা অঙ্গের প্যাকেটটি ভরতে হবে।


যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

বাগুইআটির জ্যাংড়া চার নম্বর কলোনির তপতী রায়দের যৌথ পরিবারের বাস। স্বামী সঞ্জিত রায় পেশায় রাজমিস্ত্রি। দেওর আনাজ বিক্রেতা। বড় মেয়ে সুপর্ণা মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোট ছেলে সজল বাগুইআটির জ্যাংড়া আদর্শ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া। মায়ের দুর্ঘটনার পর থেকেই মুষড়ে পড়েছে সুপর্ণা-সজল। সোমবার সুপর্ণা কলেজে যাননি। আপাতত কলেজ যাওয়ার কথা ভাবতেই পারছেন না তিনি। বললেন, ‘‘স্কুলের স্যারের ছেলেকে বাড়িতে পড়াতে যেতাম। এমন অবস্থায় কিছুই ভাল লাগছে না। কলেজের দাদাদের জানিয়েছি, আগামী এক মাস কলেজের ক্লাস করতে যেতে পারব না।’’ সমস্ত আর্থিক অনটনের মধ্যেও ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে জোর দেওয়ার ক্ষেত্রে মা তপতীদেবীর ভূমিকার বারবার প্রশংসা করছিলেন জ্যাংড়া কলোনিতে তাঁদের প্রতিবেশীরা। এক পড়শির কথায়, ‘‘অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন তপতীরা। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য তপতীদেবীর ভূমিকা বিরাট। এ রকম অবস্থায় ওঁদের মায়ের এই বিপদ মানা যায় না।’’

মায়ের দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ উঠতেই মেয়ে সুপর্ণা বললেন, ‘‘বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য চালকদের আরও কঠোর শাস্তি হোক, এটাই চাইছি। পাশাপাশি গাড়িতে চড়ার সময়ে যাত্রীদেরও অনেক বেশি সাবধান থাকা উচিত।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার ভোরে নিমতলা শ্মশানঘাট থেকে বাগুইআটির বাড়ি ফেরার সময়ে ম্যাটাডরে বাইরের দিকে তপতীদেবী ছাড়াও আরও পাঁচ জনের হাত জানলার বাইরে ছিল। রবিবার ভোরের দুর্ঘটনায় ডান হাত ভেঙে যাওয়ায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তপতীদেবীর সঙ্গে জরুরি বিভাগে ভর্তি আছেন বাগুইআটির জ্যাংড়া কলোনির আর এক বাসিন্দী নীলিমা রায়ও। আরও চার জন জখম হয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের সকলকেই।

এক প্রতিবেশীকে দাহ করতে যাওয়াটাই যে তাঁর মায়ের কাল হল, সে কথাটাই বারবার আক্ষেপ করে বলছিলেন সুপর্ণা। তাঁর কথায়, ‘‘মা এমনিতে বাড়ি থেকে খুব কম বেরোয়। অথচ প্রতিবেশীকে দাহ করতে যাওয়াটাই আমাদের সব শেষ করে দিল।’’

স্ত্রীর ডান হাতটা নেই, এই কথাটা এখনও ভাবতেই পারছেন না তপতীদেবীর স্বামী সঞ্জিতবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর হাতেই তো আমার পুরো সংসারটা তিলে তিলে গড়ে উঠেছে। অথচ এখন ওঁর ডান হাতটাই আর নেই। এ কথাটা ভাবলেই কেমন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি!’’

মাথায় রাখুন


রোগীকে মানসিক জোর জোগান


কাটা অঙ্গটি যেন সরাসরি বরফের সংস্পর্শে না আসে।


অঙ্গ বাদ পড়লে তার কোষ-কলাগুলি অক্সিজেনের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, বিষক্রিয়াও শুরু হয়।


কম তাপমাত্রায় রাখলে বাদ যাওয়া অঙ্গটি বেশি সময় সতেজ থাকে।


হার্টের থেকে যত দূরে অঙ্গ কাটা পড়ে, ততই তাকে দেহের সঙ্গে জোড়া সহজ হয়।


ধারালো অস্ত্রে কাটলে জোড়া সহজ। কোনও কিছুতে থেঁতলে গিয়ে কাটলে তা জোড়া কঠিন।


এই ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য ট্রমা সার্জেন, প্লাস্টিক সার্জেন, অস্থি বিশেষজ্ঞ ও নিউরোসার্জেন নিয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ দল প্রয়োজন।


কাটা অঙ্গটি ফের জুড়ে দেওয়ার পরেও শরীর তা গ্রহণ না-ও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে অঙ্গটি ফের কেটে ফেলতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন