হরিমোহন ঘোষ কলেজ

‘আর পারছি না’ ইস্তফা অধ্যক্ষের

পদত্যাগ করলেন গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিজয় আচার্য। ক’দিন আগেই কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি সে কথা জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:২৬
Share:

বিজয় আচার্য

পদত্যাগ করলেন গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিজয় আচার্য। ক’দিন আগেই কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি সে কথা জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও। শনিবার বিজয়বাবু বলেন, ‘‘কিছু দুভার্গ্যজনক ও অনভিপ্রেত ঘটনার জন্যই অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে রেহাই চেয়েছি।’’ আর শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘‘উনি তো আগেও একাধিক বার পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। এ বার ওই কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ পাঠাতেই হবে।’’

Advertisement

২০১৩ সালে ছাত্রভোটকে কেন্দ্র করে এই কলেজের বাইরেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল কলকাতা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর তাপস চৌধুরীর। বিহার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ১৫ নম্বর বরোর তৎকালীন তৃণমূল চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাকে। ওই ঘটনার জেরে সে বছর রাজ্য জুড়ে ছাত্র ভোট স্থগিত রেখেছেল রাজ্য সরকার। তখনও বিজয়বাবু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সেই ঘটনাও সামলেছি। আর পারছি না।’’ বিজয়বাবু গত ৩৩ বছর ধরে ওই কলেজেরই অর্থনীতির শিক্ষক। এ দিন তিনি জানান, ৩০ জানুয়ারি থেকে তিনি আর অধ্যক্ষ থাকতে চান না। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আগে যেমন ছাত্র পড়াতেন, তেমনই পড়াবেন।

কী কী দুভার্গ্যজনক ও অনভিপ্রেত ঘটনার জেরে তাঁর এই সিদ্ধান্ত, সে কথা খোলসা না করলেও বিজয়বাবুর ঘনিষ্ঠমহল জানাচ্ছে, ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঘিরে তাঁর উপরে যে ভাবে লাগাতার চাপ দেওয়া হচ্ছিল, সেটাই নিতে পারেননি তিনি। কলেজে ছাত্র সংসদের ভোট ছিল শনিবার। ভোট মিটেছে শান্তিপূর্ণ ভাবে। নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রেখেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কিন্তু বিরোধীরা যাতে ভোটে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় থেকে শাসক দলের ছাত্র নেতারা সারাক্ষণ অধ্যক্ষের ঘরের সামনে বসে থাকতেন বলে অভিযোগ। আড়ালে-আবডালে চলত নানা হুঁশিয়ারি ও হুমকি। কলেজের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘বেশ কিছু স্থানীয় নেতাও ভোটের আগে কলেজে আসা-যাওয়া বাড়িয়ে ছিলেন। বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা সৃষ্টি করার পিছনে তাঁদের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাঁরাই অধ্যক্ষের উপরে চাপ তৈরিতে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন।’’

Advertisement

এ দিন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ২৫%। ৩২টি আসনের ২৯টিই পেয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। দু’টি পেয়েছে ছাত্র পরিষদ। একটি আসনে ভোট বাতিল হয়েছে। ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহিরাগতরাই তো কলেজের নিয়ন্ত্রক। তাদের ছায়ায় তৃণমূলের যা দৌরাত্ম্য, তাতে অধ্যক্ষ যে এত দিন কাজ করতে পেরেছেন সেটাই আশ্চর্যের।’’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্তের অবশ্য দাবি, ‘‘হরিমোহন ঘোষ কলেজে নির্বাচন শান্তিতে হয়েছে। অধ্যক্ষ কেন পদত্যাগ করলেন, জানি না।’’ আর কলেজের বাইরে যাঁর সক্রিয়তা নিয়ে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা, সেই স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীল বলেছেন, ‘‘আমি এ সবের কিছুই জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন