‘ডালাময়’ বাজারে পদে পদে বিপদের শঙ্কা

শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের উৎসস্থল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরেও শহরে ডালার রমরমা নিয়ে পুলিশ বা প্রশাসন কারও হুঁশ নেই বলে অভিযোগ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২২
Share:

দখল: দোকানের বাইরে ফুটপাত জুড়ে সাজানো রয়েছে পসরা। নিউ মার্কেট। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মুখ্যমন্ত্রীর ছবি লাগানো স্টল পেয়েছেন দুই ভাই এবং তাঁদের মা। পরপর সেগুলি জুড়ে নেওয়ায় পুজোর আগে হাতিবাগান বাজারে এখন তাঁদের স্টলই সবচেয়ে বড়। তাতে কী? পুরনো ডালার ব্যবসা অবশ্য ছাড়তে পারেননি তাঁরা। স্টলের সামনেই ফুটপাতে পেতে বসা ডালাও সামলাচ্ছেন ভাগাভাগি করে।

Advertisement

শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের উৎসস্থল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরেও শহরে ডালার রমরমা নিয়ে পুলিশ বা প্রশাসন কারও হুঁশ নেই বলে অভিযোগ। পুজোর বাজার চলাকালীন সেই ‘ডালা-রাজ’ আরও লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে বলে দাবি ক্রেতাদের একটা বড় অংশের। তাঁরা জানাচ্ছেন, কোথাও ডালার জন্য ফুটপাতে ওঠাই যাচ্ছে না। কোথাও আবার ডালায় দোকানের প্রবেশপথ আটকে যাচ্ছে জানিয়ে প্রায় রোজ বাজার কমিটির দ্বারস্থ হচ্ছেন দোকান-মালিকেরা। তাঁদের আরও অভিযোগ, রাতে দাহ্য বস্তু নিয়েই ডালাগুলি ফুটপাতে পড়ে থাকছে। ধর্মতলার একটি পোশাকের দোকানের মালিক সমীর সিংহ বললেন, ‘‘রাত-দিন এই ডালার মালিকদের দৌরাত্ম্য চলে। স্রেফ প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিয়েই ডালাগুলো ফেলে রাতে চলে যান হকারেরা। সেখানে সুগন্ধি, গ্যাস লাইটার, কী নেই! একটায় আগুন লাগলে আর দেখতে হবে না। পুজোর আগে গোটা বাজার পুড়ে খাক হয়ে যাবে।’’

চলতি বছরের গোড়ায় গড়িয়াহাট বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ডালা-মালিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সে সময়ে পুলিশ দাবি করেছিল, রাতে বাড়ি ফেরার আগে এক ডালা-মালিকের জ্বালানো কাগজ থেকেই প্রথমে আগুন লাগে। সম্প্রতি বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে সরাসরি ডালাকেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানিয়েছিলেন, বাগড়ি মার্কেট ভবনের বাইরে সুগন্ধি রাখা একটি ডালায় প্রথমে আগুন লাগে। পাশে একটি পেনের দোকান হয়ে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাগড়ির আগুনের পরে পুরসভা ঘোষণা করেছিল, দ্রুত ডালা-মুক্ত বাজার তৈরি হবে। গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের মতো শহরের বড় বাজারগুলিতে হকারদের স্টলও তৈরি করে দেওয়া হয়। তবে স্টল পেলেও ডালার অবলুপ্তি হয়নি কোথাওই।

Advertisement

গড়িয়াহাট বাজারে দেখা গেল, হকারদের দেওয়া নীল-সাদা রঙের সেই স্টলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির পাশাপাশি লেখা, ‘হকার ভাইদের পাশে’। তবে ব্যবসার কাজে নয়, স্টলগুলি গুদাম ঘর হিসেবেই বেশি ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিক্রির সামগ্রী স্টলে ডাঁই করে রেখে ব্যবসায়ীরা তার বাইরে ডালা বা অস্থায়ী টেবিল পেতে বসছেন। একই অবস্থা হাতিবাগানেও। স্টল এবং তার সামনে পাতা ডালার জেরে ফুটপাতে ওঠার উপায় নেই। ‘হাতিবাগান বাজার মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি রঞ্জন রায় বলেন, ‘‘দোকান-মালিকদের খুব সমস্যা হচ্ছে। ডালা আর প্লাস্টিকের জন্য ক্রেতারা দোকান পর্যন্ত পৌঁছতেই পারছেন না। কাউকে বলেও কিছু হচ্ছে না।’’

প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের পরেও শহরে ডালার রমরমা এড়ানো গেল না কেন? গড়িয়াহাট এবং হাতিবাগান বাজার যথাক্রমে কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর ডিভিশনের অন্তর্গত। দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশনের ডিসি অজয় প্রসাদ এবং উত্তরের ডিসি দেবাশিস সরকার একই সুরে বললেন, ‘‘বাজারগুলিতে আমাদের নজরদারি চলে। নতুন হকার বসতে দেওয়া হয় না। বাকিটা পুরসভা বলতে পারবে।’’ অনেকটা একই কথা বলেছেন দমকলের ডিজি জগমোহন। তাঁর কথায়, ‘‘বাজারগুলির অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থার দিকে নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে। কিন্তু ডালার বিষয়টি পুরোপুরি পুরসভার দেখার কথা।’’ বারবার ফোন এবং মেসেজ করেও এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া মেলেনি মেয়র ফিরহাদ হাকিমের। তবে পুর প্রতিনিধি দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ডালা তো দূর, স্টলের বাইরে অন্য কোনও ধরনের দোকানই রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে মেয়র নিজে খুব কড়া।’’

কিন্তু এই কড়া অবস্থানের পরেও তো পরিস্থিতি বদলায় না? সেই প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন