অসচেতন: এসএসকেএম হাসপাতালের সামনের ফুটপাতে প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে স্টল। নিজস্ব চিত্র
গড়িয়াহাট কিংবা হাতিবাগানে যখন ফুটপাতের হকারেরা প্লাস্টিকের ছাউনি খুলছেন, তখন বহাল তবিয়তে প্লাস্টিকের ছাউনি রয়েছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমের সামনে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে গত কয়েক বছর ধরেই প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে বসে ব্যবসা করছেন এসএসকেএমের সামনের হকারেরা।
গড়িয়াহাটে আগুনের ঘটনার পরে সেখানকার হকারদের স্টিলের স্টল দেওয়ার পরিকল্পন করেছে কলকাতার পুর প্রশাসন। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেও দিয়েছেন, শহরের রাস্তায় হকারেরা আর প্লাস্টিকের ছাউনি দিতে পারবেন না। কিন্তু বৃহস্পতিবার এসএসকেএমের সামনের ছবি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে হকার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে মেয়রের সদিচ্ছাকে কলকাতার হকারেরা কত দিন মান্যতা দেবেন তা নিয়ে।
ক্ষমতায় আসার বছর খানেক পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক দিন মহাকরণ যাওয়ার পথে দেখতে পান এসএসকেমের দু’পাশে হকারেরা আগুন জ্বালিয়ে খাবার তৈরি করছেন। হঠাৎ করেই তিনি গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। পায়ে হেঁটে গোটা এলাকা ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। যে কোনও সময় আগুন লাগলে আগুন, প্লাস্টিক, পলিথিন একসঙ্গে মিলে বড় বিপদ হতে পারে আঁচ করেই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন ওই হাসপাতালের উল্টো ফুটপাতে হকারদের স্টল বানিয়ে দিতে।
পলিথিন কিংবা প্লাস্টিকের ছাউনি ব্যবহার করা যাবে না এই শর্তেই ওই হকারদের চার বছর আগে স্টিলের স্টল দেওয়া হয়েছিল। কিছু কাল তা মানা হলেও আজ পরিস্থিতি পুরনো চেহারাতেই ফিরে গিয়েছে।
হকারদের যুক্তি, বিভিন্ন স্টলের ছাদ ফুটো হয়েও জল পড়ে। রোদ বৃষ্টির থেকে বাঁচতেই প্লাষ্টিকের ছাউনির ব্যবহার করছেন তাঁরা। একই হাল এম আর বাঙুর হাসপাতালের সামনের ফুটপাতেও। হাসপাতাল তল্লাটে এ ভাবে হকারদের প্লাস্টিক বা পলিথিনের ছাউনি ব্যবহারের দৃশ্য প্রশ্ন তুলছে পুলিশ ও পুরপ্রশাসনের নজরদারি নিয়েও।
গড়িয়াহাটের বহুতলে আগুন ফুটপাতের হকারদের প্লাষ্টিকের ছাউনি থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছিল। এর পরেই হকারদের স্টল প্লাষ্টিকের ছাউনি মুক্ত করতে পুরভবনে পুলিশ এবং পুরসভার অফিসারদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেখানে মেয়র স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনও অবস্থাতেই রাস্তায়, ফুটপাতে থাকা হকারেরা প্লাস্টিক, পলিথিনের ছাউনি ব্যবহার করতে পারবেন না। সব জায়গা থেকে হকারদের প্লাস্টিকের ছাউনি সরিয়ে দিতে হবে। এমনকি তাইল্যান্ডের রাস্তায় যে ভাবে হকারের ছাতার নীচে বসেন, কলকাতায়ও তা করা সম্ভব কিনা তারও পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে মেয়রের বক্তব্য, ‘‘প্রথমে আমরা ওঁদের অনুরোধ করছি প্লাস্টিক, পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য। কাজ না হলে তখন অন্য কিছু তো ভাবতেই হবে। হকারদের প্রতি আমাদের মানবিক কর্তব্য যেমন রয়েছে, তেমনই দেখতে হবে এমন কিছু যেন না ঘটে যাতে মানুষের ক্ষতি, এমনকি জীবনহানির মত ঘটনাও ঘটতে পারে।’’
তবে মেয়রের বক্তব্য ইতিমধ্যেই জেনেছেন এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে বসে থাকা হকারেরাও। তা স্মরণে রেখে এ দিন তাঁদের বক্তব্য, সরকারের পক্ষ থেকে জোর করলে ওই ছাউনি তাঁরা সরিয়ে দেবেন।