অবরোধ-অশান্তি, তবু স্কাইওয়াকে অটল প্রশাসন

প্রথমে রাস্তা অবরোধ করে নাগরিক দুর্ভোগ। তার পরে রাস্তার ব্যারিকেড ভেঙে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের পরিস্থিতি তৈরি করা। স্কাইওয়াকের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই দু’ভাবে বিক্ষোভ শুরু করলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনের রাস্তার দোকানদাররা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৩৯
Share:

পুলিশকে চ্যালেঞ্জ দোকানদারদের। বৃহস্পতিবার, দক্ষিণেশ্বরে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রথমে রাস্তা অবরোধ করে নাগরিক দুর্ভোগ। তার পরে রাস্তার ব্যারিকেড ভেঙে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের পরিস্থিতি তৈরি করা। স্কাইওয়াকের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই দু’ভাবে বিক্ষোভ শুরু করলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনের রাস্তার দোকানদাররা। রাতে ছিল তাঁদের প্রতিবাদ মিছিল। তবে কোনও কিছুই অবশ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের তাঁদের অবস্থান থেকে নড়াতে পারেনি। শীর্ষ নেতৃত্ব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, স্কাইওয়াকের পথে সমস্ত বাধার ক্ষেত্রে অটল রয়েছেন তাঁরা। কোনও রকম আপসের পথে না হেঁটে এই প্রকল্প হবেই।

Advertisement

তবে দোকানদারদের বিক্ষোভ রুখতে পুলিশ ও প্রশাসন যথেষ্ট সতর্ক ছিল। আগামী ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে দোকানদারদের অস্থায়ী জায়গায় সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশ পালন হল কি না, তার রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দিতে হবে ২১ তারিখ। এই পরিস্থিতিতে এ দিন রাস্তা অবরোধ, ব্যারিকেড ভাঙা হলেও প্রশাসন এমন কিছু কড়া পদক্ষেপ নিতে চায়নি, যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারেট নীরজ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা পুরসভাকে সহযোগিতা করছি। আদালত ১৯ তারিখের মধ্যে দোকানদারদের সরে যেতে বলেছেন। সেই কাজে পুলিশকে সহযোগিতা করতে বলেছেন। আমরা তাই নিজে থেকে কোনও পদক্ষেপ করছি না।’’

Advertisement

কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের গোপাল সাহা এ দিন বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়েই আমরাও কাজ শুরু করতে চাইছি। তাই রানি রাসমণি রোড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দোকানদাররা সেই ব্যারিকেড ভেঙে দিয়েছেন। আমরা তাই পুলিশকে দিয়ে ব্যারিকেড করে দিয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আদালতে ২১ তারিখ রিপোর্ট জমা পড়বে। তার পরে আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে কী করা হবে। আমরাও তাই আজ কোনও কড়া পদক্ষেপ করিনি। মানুষ যাতে জানতে পারেন, এর পরে কোথা দিয়ে যেতে হবে, তাই আজ থেকেই রাস্তা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুরসভার তরফে দক্ষিণেশ্বর মোড়ে মন্দিরে যাওয়ার বিকল্প পথ-নির্দেশ লেখা ফ্লেক্সও লাগিয়ে দেওয়া হয়।’’

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনের রাস্তা রানি রাসমণি রোড বুধবার রাত থেকেই লোহা ও বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিশাল পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়। এ দিন সকাল থেকেই সমস্ত দর্শনার্থী-পুণ্যার্থীকে বিকল্প পথ ধরে মন্দিরে পাঠানো হয়। সকাল ৯টা নাগাদ এর প্রতিবাদে প্রথমে পিডব্লিউডি রোডে দক্ষিণেশ্বর মোড় অবরোধ করেন দোকানদারেরা। প্রায় আধ ঘণ্টার সেই অবরোধে দুর্ভোগে পড়েন অফিসযাত্রী-সাধারণ মানুষ। এর পরে দোকানদারেরা বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে দিলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের মৃদু ধস্তাধস্তিও হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহ-সহ অন্যান্য পুলিশকর্তারা। আসেন দু’জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটও। বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয় এলাকায়।

বেলা বাড়তেই পুরসভা ও পুলিশের যৌথ সিদ্ধান্তে রাস্তার উপরে ফের পুলিশ দিয়ে ব্যারিকেড বসানো হয়। এর মধ্যে এলাকায় রটে যায়, স্কাইওয়াক তৈরির জন্য বস্তি উচ্ছেদ করা হবে। ফের শুরু হয় বিক্ষোভ। এর পরে পুরসভার তরফে রিকশা-অটোয় মাইক লাগিয়ে শুরু হয় ঘোষণা করা হয়, দোকানদারেরা যেন অস্থায়ী দোকানের চাবি নিয়ে নেন। প্রকল্পের কাজের জন্য কোনও বস্তি উচ্ছেদ করা হবে না। তাই কেউ যেন মিথ্যা প্ররোচনায় পা না দেন। দোকানদার সমিতির সংগঠনের সম্পাদক অজিত সিংহ জানান, এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছেন তাঁরা। প্রয়োজনে এর পরে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন