হকারের ডালায় পথ ‘চুরি’ শহর জুড়েই

বাড়তি ভিড়ের কথা মাথায় রেখে হাতিবাগান বাজারের সামনে রবীন্দ্র সরণিতে, এসপ্লানেড মোড়ের কাছে এবং গড়িয়াহাট বাজার সংলগ্ন রাস্তায় গার্ডরেল বসিয়ে ব্যারিকেড করেছে কলকাতা পুলিশ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৫০
Share:

দখল: গড়িয়াহাট (বাঁ দিকে) এবং হাতিবাগানে (ডান দিকে) পথচারীদের জন্য ঘিরে দেওয়া অংশে অস্থায়ী দোকান। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছিল আগেই। এ বার পথের দখলও নিয়ে নিলেন হকারেরা। পুজোর বাজার চলাকালীন পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শহরের বড় বড় বাজার এলাকার আশপাশের পথ ধরে হাঁটাই এখন দায়! গাড়ি চলাচলের রাস্তাও অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে দুপুরের পরে। সমস্ত কিছু প্রত্যক্ষ করেও যেন নীরব দর্শক পুলিশ-প্রশাসন। প্রশ্ন করলে উত্তর আসছে, ‘‘এই পুজোর আগেই তো ওদের একটু ব্যবসা! কী করে কড়া হই বলুন!’’ পথচারীদের হয়রান করেও ব্যবসা চলতে পারে? উত্তর নেই কোনও মহলেই।

Advertisement

গত মাসের শুরু থেকেই পুজোর কেনাকাটা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বাজার সংলগ্ন ফুটপাত পেরিয়ে ভিড় নেমে এসেছে রাস্তায়। বাড়তি ভিড়ের কথা মাথায় রেখে হাতিবাগান বাজারের সামনে রবীন্দ্র সরণিতে, এসপ্লানেড মোড়ের কাছে এবং গড়িয়াহাট বাজার সংলগ্ন রাস্তায় গার্ডরেল বসিয়ে ব্যারিকেড করেছে কলকাতা পুলিশ। নিয়ম করা হয়েছে, গার্ডরেলের ব্যারিকেডের মধ্যে আড়াই ফুট রাস্তা ধরে হাঁটবেন পথচারীরা। রাস্তার বাকি অংশে গাড়ি চলাচল করবে। যদিও দুপুরের পরে এই নিয়মই শিকেয় উঠছে। ব্যারিকেডের মধ্যেই দোকান পেতে বসে পড়ছেন হকারেরা। কিছু পরেই ভিড়ের চাপে আড়াই ফুট পেরিয়ে গার্ডরেল উঠে আসছে রাস্তায়। দাঁড়িয়ে যাচ্ছে একের পর এক গাড়ি।

মহালয়ার দুপুরে স্বামীর সঙ্গে হাতিবাগান বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন দত্তপুকুরের শ্রাবণী রায়। রবীন্দ্র সরণিতে গার্ডরেলের মধ্যে ঢুকতেই ঘটে বিপত্তি। শাড়ি, গামছা, তোয়ালে, ব্যাগ নিয়ে সেখানে তখন মাটিতেই বসে পড়েছেন হকারেরা। প্রবল ধাক্কাধাক্কিতে গার্ডরেলের চাকায় লেগে ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ উঠে যায় শ্রাবণীর। রক্তারক্তি কাণ্ড। ক্ষুব্ধ শ্রাবণী বলেন, ‘‘বাজে নিয়ম করেছে। মানুষ খুন করবে!’’ পাশে দাঁড়ানো পুলিশকর্মী তখন বলছেন, ‘‘আপনাদের ভালর জন্যই এই ব্যবস্থা।’’ তাঁকে থামিয়ে শ্রাবণী বললেন, ‘‘ভালর জন্য যখন, তখন গার্ডরেলের মধ্যেই হকার বসিয়েছেন কেন?’’ উত্তর নেই।

Advertisement

গড়িয়াহাট মোড়ে বিখ্যাত শাড়ির দোকান পেরিয়েই গার্ডরেল বসানো অংশে ঢুকতে হল শ্যামবাজারের কলেজপড়ুয়া সুলগ্না সাহাকে। কিছু দূর হেঁটেই বিরক্ত তিনি। বলছিলেন, ‘‘যেন পুজোয় ঠাকুর দেখার ব‌্যারিকেড। সবই ঠিক ছিল, দোকানগুলোকে বসতে দিয়েছে কেন?’’ এসপ্লানেডে কেনাকাটায় ব্যস্ত আর এক ক্রেতার আবার দাবি, ‘‘ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে আগেই। পুলিশ কিছু করতে পারেনি। এ বার তো দেখছি রাস্তাও খালি রাখছে না।’’ রবীন্দ্র সরণি ধরে শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোয় যাওয়ার পথে এক ট্রাম কন্ডাক্টর বলছিলেন, ‘‘ব‌্যারিকেড করে আসলে হকারদের জন্য ভাল ভাবে বসার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। যাঁরা ট্যাক্স দেন, তাঁদের জন্য কোনও ভাবনা নেই।’’

পথ জুড়ে বসে পড়া হকারদের দায় অবশ্য নিতে চান না গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি অভিজিৎ সাহা। তিনি বললেন, ‘‘ওঁরা আমাদের লোক নন। পুজোর সময়ে আসেন। আমরা বলতে পারব না।’’ হাতিবাগান বাজার মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রঞ্জন রায় বললেন, ‘‘বহু দিন ধরে আমরা এই হকারদের রাস্তায় বসা আটকাতে আন্দোলন করছি। কিছুই লাভ হচ্ছে না।’’ কলকাতা পুরসভার বাজার দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ আমিরুদ্দিন ববি বলেন, ‘‘আমরাই বা কী করব? হকার নিয়ে আমাদের সত্যিই কিছু করার নেই। তা ছাড়া, পুজোর এই সময়ে ওঁরা একটু ব্যবসা করেন।’’ পথচারীদের হয়রানি সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? কলকাতার সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে বললেন, ‘‘ব্যারিকেড করা হয়েছে পথচারীদের জন্যই। ট্র্যাফিক পুলিশের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বলছি ব্যবস্থা নিতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন