সস্তায় জনপ্রিয়তা পেতে ডেঙ্গি মোকাবিলায় লোক দেখানো অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আর নয়। কাউন্সিলর বা অন্য কেউ যাতে এমনটা করতে না পারেন, সে জন্য এ বার ব্লিচিং পাউডারের বরাদ্দই কমিয়ে দিল কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ।
ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্লিচিং পাউডারের যে কোনও ভূমিকাই নেই, তা নিয়ে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের দ্বিমত নেই। কিন্তু গত বছর মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজে রাস্তায় ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর পরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের মধ্যেও ব্লিচিং ছড়ানোর হিড়িক পড়ে। স্বাস্থ্য দফতরের আপত্তিতে কেউ কান দেননি। ডেঙ্গি নিয়ে কাউন্সিলরদের যে হেলদোল নেই, সেই সমালোচনা এড়াতে তাঁদের অনেকেই রাস্তায় নেমে পড়েন ব্লিচিং পাউডার হাতে।
সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি এবং ব্লিচিং পাউডারের অপব্যবহার এড়াতে এ বার ওই রাসায়নিকের সরবরাহই কমিয়ে দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আগামী অর্থবর্ষে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার কম ব্লিচিং পাউডার কেনা হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
পুর আধিকারিকদের একাংশ জানান, ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে ব্লিচিং পাউডারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৯৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষের জন্য ৬৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার ব্লিচিং পাউডার কেনার প্রস্তাব তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, এক ধাক্কায় বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্লিচিং পাউডারের ভূমিকা নেই। তাই তার পিছনে বাড়তি অর্থ খরচ করে লাভ কী! কর্তৃপক্ষও বিষয়টি হয়তো বুঝতে পেরেছেন, তাই বরাদ্দ কমানো সম্ভব হয়েছে।’’
পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, আন্ত্রিকের সময়ে কোনও এলাকায় জীবাণুনাশক হিসেবে ব্লিচিং পাউডারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা মারার জন্য ব্লিচিং পাউডারের কোনও ভূমিকাই নেই। পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্র বলেন, জীবাণুনাশক হিসেবে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করলে পরোক্ষে হয়তো কয়েকটি লার্ভা মরতে পারে। তাও নোংরা জলে যখন মশা বংশবিস্তার করে, তখন সেটা সম্ভব। কিন্তু এডিস ইজিপ্টাই প্রধানত পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ে। সেক্ষেত্রে ওই মশার লার্ভা মারার ক্ষেত্রে ব্লিচিং পাউডারের সরাসরি কোনও সম্পর্কই নেই।
ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা রাজেন্দ্র শর্মা বলেন, ‘‘মশার লার্ভা মারার জন্য ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারের বিজ্ঞানসম্মত ভূমিকাই নেই। তার বদলে মশার লার্ভা নিধনের অন্য কীটনাশক কেনা প্রয়োজন।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো মশা মারার কীটনাশকের খাতে গত বছরের তুলনায় প্রায় চার লক্ষ টাকার বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।