রক্তের জন্য সই দিতে দেরি কেন, তদন্তে স্বাস্থ্য দফতর

তদন্ত কমিটি মঙ্গলবারই তৈরি করা হচ্ছে বলে রবিবার রাতে হাসপাতাল সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে।  ওই দিনই তদন্ত কমিটি কার নেতৃত্বে তৈরি হবে, কমিটিতে কারা থাকবেন, কত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে— এ সংক্রান্ত সব চিত্রই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২১
Share:

মহম্মদ সুভান। ফাইল চিত্র

মাত্র কুড়ি দিনের শিশুর চিকিৎসায় বিরল বম্বে গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন মেটাতে দরকার ছিল একটি মাত্র সইয়ের। অভিযোগ উঠেছে, তার জন্য রোগীর পরিবারকে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করানো হয়েছে। এর কারণ বুঝতে পারছে না স্বাস্থ্য ভবনও। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এর পিছনে কারও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

Advertisement

সেই তদন্ত কমিটি মঙ্গলবারই তৈরি করা হচ্ছে বলে রবিবার রাতে হাসপাতাল সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে। ওই দিনই তদন্ত কমিটি কার নেতৃত্বে তৈরি হবে, কমিটিতে কারা থাকবেন, কত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে— এ সংক্রান্ত সব চিত্রই পরিষ্কার হয়ে যাবে। শনিবার সকালে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট-এ (এসএনসিইউ) চিকিৎসাধীন লেক টাউনের দক্ষিণদাঁড়ির বাসিন্দা মহম্মদ সুভানের মৃত্যু হয়। মৃত সদ্যোজাতের বাবা মহম্মদ সফিকুল জানিয়েছিলেন, রক্ত যে লাগবে, শুক্রবারেই এসএনসিইউ থেকে তা জানানো হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে রক্তদাতা জোগাড় করা হয়। পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা সুধীর মান্না শনিবার ঠিক সময়ে বিরল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে চলে আসেন। দাতার রক্ত থেকে সংগৃহীত উপাদান এনআরএসে আনানোর কথা ছিল। মৃত শিশুর দাদু মহম্মদ আসলামের অভিযোগ, তার জন্য এনআরএসের ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে রক্তের রিকুইজিশন স্লিপে দু’টি লাইন লিখে সই করতে হত। অভিযোগ, সকাল সাতটা নাগাদ আসলাম সেই সইয়ের জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কের কাউন্টারে মুখ বাড়িয়ে আধিকারিকের খোঁজ করলে, তাঁকে সাড়ে ন’টার সময়ে ফের আসতে বলা হয়। সইয়ের জন্য আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা চলার মধ্যেই শিশুটির মৃত্যুর খবর পান পরিজনেরা।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেই সময়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বে ছিলেন মেডিক্যাল অফিসার চিকিৎসক সুজিত ভট্টাচার্য। সই করতে আড়াই ঘণ্টা দেরির অভিযোগ প্রসঙ্গে সুজিতবাবুর বক্তব্য ছিল, সকাল সাতটার সময়ে শিশুর পরিবার থেকে যে রিকুইজিশন স্লিপ নিয়ে আসা হয়েছিল, তা তাঁকে জানানোই হয়নি। ওই সময়ে চিকিৎসকের সঙ্গে নাইট ডিউটি করছিলেন গ্রুপ-ডি কর্মী সুশান্ত দাস। রবিবার তিনি জানান, শিশুর আত্মীয় রক্তের রিকুইজিশন স্লিপ হাতে সকাল সাতটা নয়, সাড়ে সাতটা নাগাদ ব্লাড ব্যাঙ্কে এসেছিলেন। ঠিক যেমন রেফারের প্রয়োজনীয় কাগজে সইয়ের জন্য সাড়ে ন’টা পর্যন্ত মৃত শিশুর দাদুকে অপেক্ষা করতে হয়নি বলে দাবি করেছিলেন চিকিৎসক সুজিতবাবু। তবে সুশান্তবাবু জানিয়েছেন, ঘড়ি তিনি দেখেননি। তখন যে সাড়ে সাতটা বাজছিল, সেটি তাঁর অনুমান মাত্র। চিকিৎসক সুজিতবাবু দাবি করেছিলেন, সকাল ন’টা পরে ঘটনাটি জানতে পেরেই তিনি স্লিপে সই করে দেন। সুশান্তবাবুর দাবি, ‘‘সাড়ে সাতটা নাগাদ রিকুইজিশন স্লিপ পাওয়ার পরেই স্যরের কাছে কাগজ নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, ‘কাগজ তোমার টেবিলে রাখো, আমি যাচ্ছি।’ কাগজের উপরে যা লিখতে হত, সকাল ন’টা নাগাদ তিনি তা লিখে দেন।’’ যদি তাঁদের দু’জনের দেওয়া সময়ের হিসেব ঠিকও হয়, তা হলেও তো দেড় ঘণ্টা দেরি হয়েছে।

Advertisement

বস্তুত, এই ঘটনায় হাসপাতালের আধিকারিকদের একাংশই হতবাক। তাঁদের বক্তব্য, শিশুর রক্তের গ্রুপ বিরল হওয়ায় যে কোনও উপায়ে রক্তদাতা জোগাড়ে রাজি ছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালের ঘটনা সেই উদ্যোগকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে বলে মনে করছেন হাসপাতালের আধিকারিকদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন