ঝড় নেই, অল্প বৃষ্টিতেই গাছ পড়ার হিড়িক

ঝড় হয়নি। শুধু দু’এক দিনের বৃষ্টিতেই একের পর এক গাছ পড়েছে শহরে। আর একসঙ্গে এতগুলো গাছ পড়ার ঘটনায় ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনের কপালে। সোমবার রাতে শহরে মরসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টির পরেই বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ে। বুধবার আলিপুরে হেস্টিংস-এর কাছে একটি বড় গাছ পড়ে দু’টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৫ ০০:১৭
Share:

ধরাশায়ী গাছ সরানোর কাজে পুরকর্মীরা। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

ঝড় হয়নি। শুধু দু’এক দিনের বৃষ্টিতেই একের পর এক গাছ পড়েছে শহরে। আর একসঙ্গে এতগুলো গাছ পড়ার ঘটনায় ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনের কপালে।

Advertisement

সোমবার রাতে শহরে মরসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টির পরেই বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ে। বুধবার আলিপুরে হেস্টিংস-এর কাছে একটি বড় গাছ পড়ে দু’টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বুধবার রাতেই স্ট্র্যান্ড রোড এবং সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে নজরুল মঞ্চের কাছে একটি গাছ ভেঙে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকালে টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি গাছ ভেঙে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সির উপরে পড়ায় জখম হন ট্যাক্সিচালক। তাঁকে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিন গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও দু’টি গাড়ি। তার জেরে অফিসটাইমে যানজট হয়। পরে কলকাতা পুরসভার কর্মী এবং পুলিশ এসে গাছ সরায়।

এর পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে পুর-দায়িত্ব নিয়ে।

Advertisement

শহরে গাছ লাগায় কলকাতা পুরসভার উদ্যান দফতর এবং বন দফতর। এ ছাড়াও, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শহরের রাস্তা বা পার্কে ইতস্তত গাছ লাগিয়ে থাকে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক গাছ লাগানো রীতি। সেটি কি আদৌ মানা হচ্ছে?

কলকাতা পুরসভার উদ্যান দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই পুরসভা এবং বন দফতর ছোট গাছ লাগায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পুরনো বড় গাছ, যেগুলি অপরিকল্পিত ভাবে বেড়ে উঠেছে, সেগুলি পড়ে যায়। এই ধরনের দুর্ঘটনা রুখতেই পুরসভা বন দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে একটি সমীক্ষা করছে, যাতে পোকা খাওয়া বিপজ্জনক গাছ শহর থেকে সরানো হয়। সমীক্ষার কাজ চলছে। এ ছাড়াও, বৃক্ষ রোপণের নিয়মকানুনের ব্যাপারে নাগরিকদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’’

কিন্তু কলকাতা শহরে বড় বড় সব গাছ, মূলত বট, অশ্বত্থ, পাকুড় এই ভাবে বৃষ্টিতে পড়ে যায় কেন?

কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন উদ্যানবিদ রঞ্জিত সামন্ত বলেন, ‘‘গাছের শিকড় যদি আলগা থাকে, সে ক্ষেত্রে বৃষ্টি বা জলে তা নরম হয়ে যায়। ফলে, অনেক সময়ে ভার সহ্য করতে না পেরে গাছ পড়ে যায়। রাস্তার ধারে বট বা অশ্বত্থের মত বড় গাছ, যার তলায় মাটি অল্প, সেগুলি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার ফলেই এই ঘটনা ঘটে। যদিও শহরে যে সমস্ত বড় গাছ রয়েছে, সেগুলি বহু পুরনো।’’ ২০০৯ সালে আয়লা ঝড়ের পরে শহরে গাছ লাগানোর ব্যাপারে পুরসভা আরও সতর্ক হয়েছে বলে তাদের দাবি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এবং রাজ্য জীব বৈচিত্র পর্ষদের সদস্য নন্দদুলাল পাড়িয়া বলেন, ‘‘বর্ষায় ভিজে গাছের ওজন বেড়ে যায়। এই সময়ে গাছের মূলে এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণও হয়। মাটি নরম থাকে। ফলে, গাছের শিকড়ের আঁকড়ে রাখার ক্ষমতা শিথিল হয়ে য়ায়।’’

নিয়মানুযায়ী, বট বা অশ্বত্থের তুলনায় শহরের রাস্তার ধারে বা ফুটপাথে বকুল, ছাতিম, অর্জুন এবং নিম গাছ লাগানোয় কলকাতা পুরসভা বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এই ধরনের গাছ লাগাতে গেলে দু’টি গাছের মধ্যে ব্যবধান রাখতে হবে অন্তত ১৫ ফুট এবং মাটির গভীরতা থাকতে হবে অন্তত দু’ফুট। মেহগনি গাছ লাগাতে হলে বড় ফুটপাথ দরকার। রাস্তার ধারে কৃষ্ণচূড়া এবং রাধাচূড়ার মতো গাছ লাগানো পুরসভা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ হিসেবে এই গাছগুলির উচ্চতা এবং ভঙ্গুর ডালপালার ফলে নাগরিকদের জখম হওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। ফল গাছের মধ্যে আম, জাম ও পেয়ারা লাগানো হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে গাছ লাগানোর ব্যাপারে পুরসভা বা বন দফতরের নজরদারি কতখানি? পুর-কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে জানান, নজরদারি রয়েছে। প্রয়োজনে ব্যবস্থাও নেওয়া হয় বলে তাঁদের দাবি।

কিন্তু বন দফতরের আধিকারিক নীলাঞ্জন মল্লিক বলেন, ‘‘পুরসভা এবং বন দফতর শহরে যে গাছ লাগায়, তা পরিকল্পিত ভাবেই করা হয়। কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি বন দফতরের অনুমতি না নিয়ে গাছ লাগালে সমস্যা হতে পারে। সেই নজরদারির পরিকাঠামো বন দফতরের নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন