কলকাতা পুরসভা। ফাইল চিত্র।
দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতরের মেয়র পারিষদ জানলেন না। পুর হেরিটেজ কমিটির সদস্যদের একাংশও জানলেন না। অথচ, শহরের ‘আপডেটেড’ হেরিটেজ তালিকা পুরসভার ওয়েবসাইটে উঠে গেল! যা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ‘অস্বস্তিতে’ পড়তে হয়েছে কলকাতা পুর প্রশাসনকে।
পুরসভা সূত্রের খবর, গত ৪ অগস্ট ‘আপডেটেড’ হেরিটেজ তালিকা পুরসভার ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নিয়ে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল নন পুরসভার পরিবেশ ও ঐতিহ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার! স্বপনের কথায়, ‘‘জনগণের সুবিধার্থে তালিকা পরিমার্জন বা আপডেট করা নিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিক বার আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কাজটা যে হয়েছে, তা জানতাম। কিন্তু তা যে ৪ অগস্ট পুর ওয়েবসাইটে উঠে গিয়েছে, কে-ই বা তুলেছে, তার কিছুই জানি না!’’
পুর হেরিটেজ কমিটির সদস্যদের একাংশেরও বক্তব্য, পুর ওয়েবসাইটে ঐতিহ্য-তালিকা ওঠার কথা তাঁরাও জানেন না। হেরিটেজ কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘এমনিতে খুঁটিনাটি বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এটা কেন জানানো হল না, বুঝলাম না।’’ পুর হেরিটেজ কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য হিমাদ্রি গুহ বলছেন, ‘‘নতুন তালিকা যে ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে, সেটা আমাকে অন্তত জানানো হয়নি। অন্য কেউ জানে কি না, সে ব্যাপারে বলতে পারব না।’’ অথচ, নিয়মমতো তালিকা সংক্রান্তকোনও পরিবর্তন কমিটির অজানতে হওয়ার কথা নয়। অবশ্য আর এক সদস্যের কথায়, ‘‘এখানে তো শুনছি, দফতরের মেয়র পারিষদই জানতেন না যে, কবে তালিকা ওয়েবসাইটে তোলা হয়েছে!’’
গত ৪ অগস্ট পুরসভার ওয়েবসাইটে আপলোড করা এই তালিকা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
যার পরিপ্রেক্ষিতে পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে কোনও একটা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়ে গিয়েছে। আপডেটেড তালিকাটি ওয়েবসাইটে এই মুহূর্তে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। সেটি দেওয়া হত ঠিকই, তবে কিছু দিন পরে। কিন্তু ভুলবশত সেটি ‘আপলোড’ হয়ে গিয়েছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘তথ্য লেনদেনে খামতি থাকা নয়, তালিকাটি আগে আপলোড হয়েছে। তবে এতে ক্ষতি তো কিছু হয়নি। তা ছাড়া, এই তালিকা চূড়ান্ত নয়। এতে পরবর্তী কালে আরও পরিবর্তন হতে পারে।’’ আধিকারিকদের একাংশের তরফে এ-ও জানানো হচ্ছে যে, ২০০৯ সালের পুরসভার প্রধান হেরিটেজ তালিকার বাড়ি, ভবন বা জায়গার ক্ষেত্রে উল্লিখিত ‘গ্রেডেশন’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ‘আপডেটেড’ তালিকার খুব একটা ফারাক নেই।
তা হলে এই তালিকাকে ‘আপডেটেড’ কেন বলা হচ্ছে, এই প্রশ্নের উত্তরে এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘পুরনো তালিকায় ঐতিহ্যশালী বাড়ি, ভবন বা জায়গার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোনও তথ্য ছিল না। শুধু গ্রেডেশনের উল্লেখ ছিল। এখানে অতিরিক্ত কিছু তথ্যের সংযোজন করা হয়েছে।’’
মেয়র পারিষদ স্বপনবাবুর বক্তব্য, ওয়েবসাইটে তালিকা দেওয়ার নির্দিষ্ট দিনের খবরটি না জানলেও এটি যে ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে, তা তিনি জানতেন। ওয়েবসাইটে নতুন তালিকা দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন, ‘‘নাগরিকেরা তালিকা দেখে নিজেদের মতামত জানাতে পারবেন। কারও কোনও আপত্তি, অভিযোগ থাকলে জানাতে পারেন তা-ও। শহরের ঐতিহ্য সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতন করা এবং তালিকার ভুল সংশোধন করতেই তা জনসমক্ষে আনার কথা ছিল।’’
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, এমনিতেই অতীতে পুর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ‘ইচ্ছেমতো’ ঐতিহ্যবাহী ভবনের ‘গ্রেডেশন’-এর পরিবর্তন বা অবনমন নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হয়েছে। ফলে নতুন করে পরিমার্জন, সংশোধনের পরে প্রস্তুত হয়েছে ঐতিহ্য-তালিকার প্রাথমিক খসড়া। কিন্তু তা ওয়েবসাইটে তোলার ক্ষেত্রেই থেকে গেল বিপত্তি। যার ফল, এ বারও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না পুর হেরিটেজ তালিকার!