কোনও শিশু তার বাবা বা মায়ের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে ‘শেখানো বুলি’ আওড়াচ্ছে কি না, আদালত তা সহজেই ধরে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী। পুজোর সময়ে নিজের সন্তানদের দেখতে চাওয়ার একটি আবেদনের শুনানিতে সোমবার ওই মন্তব্য করেন তিনি। এজলাসে এক নাবালিকার সঙ্গে তিন-তিন বার কথা বলে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘একই বিষয়ে প্রশ্ন করা হল। উত্তরের ভাষা বদলাল না। কথার ফাঁকে থামার ধরনও হুবহু এক। বোঝাই যাচ্ছে, তোতাপাখির মতো বুলি আওড়াচ্ছে।’’
নিউ টাউনের এক দম্পতির বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা চলছে নিম্ন আদালতে। তাঁদের দুই সন্তান। বারো বছরের ছেলে আর আট বছরের মেয়ে। বারাসত আদালতের বিচারক নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রতি শুক্রবার আদালতে ছেলেমেয়েকে নিয়ে গিয়ে তাদের বাবার সঙ্গে দেখা করাতে হবে মা-কে। বাবার অভিযোগ, নির্দেশ নিয়মিত মানা হয়নি। পুজো উপলক্ষে নিম্ন আদালত বন্ধ। ছেলেমেয়ের সঙ্গে অন্যত্র দেখা করার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ বাবা। তারই শুনানি ছিল এ দিন। ছেলেমেয়ে-সহ ছিলেন মা-ও। মায়ের আইনজীবী উদয় চট্টোপাধ্যায় আদালতে জানান, মেয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করতে চায় না। বাবার আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ী তার বিরোধিতা করেন।
তা শুনে বিচারপতি কোর্ট অফিসারদের নির্দেশ দেন, মেয়েটিকে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে। তিনি নিচু স্বরে মেয়েটির সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলেন। তার পরে এজলাসে হাজির আইনজীবীদের উদ্দেশে ওই মন্তব্য করে বলেন, ‘‘বাবার নাম জিজ্ঞাসা করায় তিন-তিন বারই মায়ের নাম বলল। অন্য কথাও বলল এক ধাঁচে, এক স্বরে।’’ এর পরে বিচারপতি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কোনও পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলা হল। পরীক্ষার সময়ে তিনি যে উত্তর লিখবেন, পরীক্ষার পরে সেই উত্তর লিখতে বসলে বিষয়বস্তু একই থাকবে, কিন্তু উত্তরের ভাষা আলাদা হবে। তার পরে ফের লিখতে বসলে সেই ভাষাও আগের চেয়ে অন্য রকম হবে।
এ দিন বিচারপতি মেয়েটির মা-কে নির্দেশ দিয়েছেন, সপ্তমী থেকে নবমী বিকেল পাঁচটার সময়ে নিউ টাউনের এক আবাসনের পার্কে ছেলেমেয়েকে নিয়ে যেতে হবে। আসবেন তাঁর স্বামী। সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত ছেলেমেয়ের সঙ্গে থাকবেন বাবা। নিউ টাউন থানার ওসি-কে বিচারপতির নির্দেশ, তখন সাদা পোশাকের কোনও পুলিশ অফিসার দম্পতি ও ছেলেমেয়েদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন অপ্রীতিকর কোনও পরিস্থিতি এড়াতে।
এ দিনই বাগুইআটির বাসিন্দা এক যুবকের আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে ছ’বছরের ছেলের সঙ্গে পুজোয় দেখা করতে দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি চক্রবর্তী। সম্প্রতি ওই যুবকের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুজোয় ছেলেকে জামাকাপড় কিনে দিতেও পারছেন না তিনি। যুবকের আইনজীবী হরেকৃষ্ণ হালদার জানান, ছেলেটি মায়ের সঙ্গে হরিদেবপুরে মামার বাড়িতে থাকে। হরিদেবপুর থানার ওসিকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ওই যুবক যে দিন ছেলেকে জামাকাপড় দিতে যাবেন, সেই দিন ওসি তাঁর সঙ্গে থাকবেন।