আমার পাড়া

ইতিহাস আজও বিরাজমান

কে কে রায় চৌধুরী রোডওই যে সামনের আটচালার থামগুলি কালের ঝড়-ঝঞ্ঝা অগ্রাহ্য করে দাঁড়িয়ে, সেখানেই মাত্র ১৩০০ টাকায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা— এই তিনটি গ্রামের প্রজাসত্ব হস্তান্তরিত হয়েছিল।

Advertisement

রঞ্জন রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ১২:০০
Share:

আমাদের এই প্রাচীন পাড়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে শহর কলকাতার পত্তনের কাহিনি! ওই যে সামনের আটচালার থামগুলি কালের ঝড়-ঝঞ্ঝা অগ্রাহ্য করে দাঁড়িয়ে, সেখানেই মাত্র ১৩০০ টাকায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা— এই তিনটি গ্রামের প্রজাসত্ব হস্তান্তরিত হয়েছিল। বাকিটা আজ ইতিহাস। পাড়ার রাস্তাটির নাম যদিও কালীকুমার রায়চৌধুরী ওরফে কে কে রায়চৌধুরী রোড, তবে সাবর্ণপাড়া নামটাই লোকমুখে বেশি প্রচলিত। সাবর্ণপাড়া নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে এক প্রচলিত কাহিনি। সাবর্ণ কোনও ব্যক্তির নাম নয়! সেটা পরিবারের গোত্র মাত্র। তার থেকেই পরিবারের এবং পাড়ার এমন নামকরণ।

Advertisement

পা়ড়ার মুখেই রয়েছে চারটি শিব মন্দির, আর টেরাকোটার অলঙ্করণ যুক্ত দ্বাদশ শিব মন্দির আজও ধরে রেখেছে অতীতের ছবিটা। কিছুটা ঔপনিবেশিক কিছুটা দেশীয় শৈলীর মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা বাড়িগুলির পাশাপাশি রয়েছে বহুতল আর বাড়ি। তবু পাড়াময় বিরাজমান এক মধুর, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।

এক কালে তো পাড়়াটাই ছিল আত্মীয়, পরিজনে ভরা। মনে হতো পাড়া মানে একান্নবর্তী পরিবার। আজ ছবিটা ভিন্ন। এসেছেন কত নতুন মুখ, কত পরিবার। তাঁদের কেউ কেউ পুরনোদের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছেন। কেউ বা অপরিচিতই থেকে গিয়েছেন। তবে সময়ের প্রভাবে জীবনযাত্রায় গ্রাস করেছে আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা। তবু এখনও যে কোনও সমস্যায়, প্রয়োজনে পাড়া-পড়শি, আত্মীয়দের পাশে পাওয়া যায়।

Advertisement

আজকের পাড়া আর অতীতের পাড়া যেন দুই ভিন্ন জগৎ। সময়ের সঙ্গে এখানেও এসেছে পরিবর্তন। পিচের রাস্তা, আলোকস্তম্ভের জোরালো আলো আর নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হওয়ায় পাড়াটা এখন পরিচ্ছন্ন থাকছে। মাঝেমাঝে কিছু গাছগাছালি থাকায় এখনও সবুজের ছোঁয়া পাড়া থেকে হারিয়ে যায়নি। তবে আকর্ষণের পাশাপাশি রয়েছে কিছু আক্ষেপ। যেমন বর্যায় জল জমা। এই সমস্যাটা এখনও বদলাল না। তেমনই ডায়মন্ড হারবার রোডে যেতে হলে ভরসা এক মাত্র রিকশা। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন।

পাড়ার শিব মন্দিরের রকটা আড্ডার অন্যতম ঠিকানা। এ ছাড়াও আড্ডা বসে ক্লাবে। নবীন প্রবীণ সকলে মিলেমিশে আড্ডায় মাতেন। অতীতে পাড়ার যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে পাড়ার ছেলেরাই পরিবেশন করত। পাড়াতেই রয়েছে শতবর্ষ পেরনো বড়িশা পাঠাগার। বই পাড়ার অভ্যাসটা এখনও এখান থেকে উধাও হয়ে যায়নি। টিকে আছে পাড়ার খেলাধুলোর ছবিটাও। সকাল-বিকেলে এখনও মাঠে খেলার দৃশ্য চোখে পড়ে।

এ পাড়ার আর এক আকর্ষণ প্রাচীন পারিবারিক দুর্গোৎসব। আর কাছেই হয় চণ্ডীমেলা। আজও দূর দূরান্ত থেকে এখানে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ।

পূর্বপুরুষের শিকড়ের টান আঁকড়ে এ ভাবেই কেটেছে জীবনের এতগুলি বছর। বাকি দিনগুলিও এ ভাবেই কাটাতে চাই।

লেখক চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন