Launch

লঞ্চ মেরামতি না হলে মিলবে না শংসাপত্র, সঙ্কটের মুখে ফেরি পরিষেবা 

হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি দীর্ঘদিন ধরেই প্রবল অর্থসঙ্কটে ভুগছে। বছরের পর বছর নির্বাচিত বোর্ড না থাকায় ২০১৮ সালের পরে সমবায়টি ‘রেজিস্ট্রার অব কোঅপারেটিভ সোসাইটি’র নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৪৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

দুই পড়শি শহর কলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে জলপথে প্রতিদিন সফর করেন কয়েক হাজার যাত্রী। বছরে সেই সংখ্যাটা কোটি ছাড়িয়ে যায়। অথচ, দৈনিক এই পরিষেবা দিয়ে আসছে যে সংস্থা, সেই হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির ভাঁড়ারের হাল এমনই যে, তাদের পরিচালিত লঞ্চগুলির মেরামতির টাকায় টান পড়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্রতিদিন অতি কষ্টে জোগাড় করতে হচ্ছে জ্বালানি ডিজ়েল। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে মেরামতির টাকা মিলবে কি না, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। সব মিলিয়ে আগামী দিনে পরিষেবা বজায় রাখা নিয়েই তীব্র অনিশ্চয়তায় এই সংস্থার কর্তা থেকে শুরু করে কর্মীরা।

Advertisement

সমবায় সমিতি সূত্রে জানা যাচ্ছে, তাদের সব ক’টি লঞ্চেরই ফিট সার্টিফিকেটের সময়সীমা ফুরোচ্ছে আগামী জানুয়ারি মাসে। ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্টের (আইডব্লিউটি) ওই শংসাপত্র না পেলে সংস্থার ‘অন্তর্জলি যাত্রা’ প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন কর্মীরা। তাই ৩০০ জন কর্মীর ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে অবিলম্বে লঞ্চগুলি মেরামত করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। কারণ, লঞ্চগুলি মেরামত না করলে আইডব্লিউটি-র শংসাপত্র মিলবে না। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকারি সেই সাহায্য আসেনি।

প্রসঙ্গত, হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি দীর্ঘদিন ধরেই প্রবল অর্থসঙ্কটে ভুগছে। বছরের পর বছর নির্বাচিত বোর্ড না থাকায় ২০১৮ সালের পরে সমবায়টি ‘রেজিস্ট্রার অব কোঅপারেটিভ সোসাইটি’র নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বর্তমানে ওই সমবায় সমিতি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন রাজ্যের সমবায় দফতর নিযুক্ত এক জন স্পেশ্যাল অফিসার। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের নিজস্ব ১৩টি লঞ্চ প্রতিদিন হাওড়া-চাঁদপাল, হাওড়া-আর্মেনিয়ান, হাওড়া-শোভাবাজার-বাগবাজার, রামকৃষ্ণপুর-বাবুঘাট-সহ একাধিক রুটে পরিষেবা দিয়ে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী, আইডব্লিউটি-র শংসাপত্র পেতে হলে লঞ্চগুলি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ‘ড্রাই ডক’ করে মেরামত করতে হয়।

Advertisement

কিন্তু অভিযোগ, বর্তমানে সমিতি এতই রুগ্‌ণ হয়ে পড়েছে যে, লঞ্চ মেরামতির অর্থ কোষাগারে নেই। কর্মীদের বেতন যেমন নিয়মিত হচ্ছে না, তেমনই লঞ্চগুলির প্রতিদিনের ডিজ়েল জোগান দিতে বা ছোটখাটো মেরামত করতে গিয়েও ঘাম ছুটে যাচ্ছে কর্তাদের।

সমিতির জয়েন্ট ইন-চার্জ নিলয় চক্রবর্তী বললেন, ‘‘কোভিডের সময়ে রাজ্য সমবায় দফতর চার লক্ষ টাকা দিয়েছিল। তার পর থেকে সরকারের তরফে অর্থসাহায্য মেলেনি। সব চেয়ে বড় কথা, ডিজ়েলের দাম লিটার প্রতি ৫৫ টাকা থাকার সময়ে লঞ্চের টিকিটের মূল্য ছ’টাকা ছিল। আজ ডিজ়েল ৯৩ টাকা ছুঁলেও সেই একই দামে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।’’ অফিসারেরা মনে করছেন, টিকিটের দাম অন্তত দু’টাকা বাড়ানো হলেও সংস্থা ধীরে ধীরে লাভের মুখ দেখবে।

সংস্থার এক কর্মী বললেন, ‘‘পুজো এসে গিয়েছে। অথচ, আমরা দু’মাস বেতন পাইনি। তবে স্পেশ্যাল অফিসার আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী সোমবার ৮.৩৩ শতাংশ হারে পুজোর বোনাস দেওয়া হবে। তিনি চেষ্টা করছেন সংস্থাকে বাঁচাতে। তার জন্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদনও জানিয়েছেন।’’

সমবায় সমিতি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্পেশ্যাল অফিসার জয় ধর বলেন, ‘‘সংস্থাকে বাঁচাতে অবিলম্বে চার কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে তারও আগে দরকার, যে ১৩টি লঞ্চ বর্তমানে চলছে, সেগুলির মেরামতি। যা খুবই খরচসাপেক্ষ। তাই রাজ্যের পরিবহণ দফতরে ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা চেয়ে আবেদন করেছি। ওই টাকা না পেলে আগামী বছরের জানুয়ারিতে ১৩টি লঞ্চই বসে যাবে। আমরা গঙ্গাসাগরেও লঞ্চ দিতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন