Local News

তরুণীর সঙ্গে চ্যাট, ফুচকা, আড্ডা, প্রেম... কলকাতায় কী ভাবে জাল ছড়াল এটিএম-কাণ্ডের পাণ্ডা

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, সাহিল অনেক মাথা খাটিয়ে প্রথমে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব শুরু করে। তার পর ধীরে ধীরে এক তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। বেশ কয়েক মাস ধরে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে আলাপচারিতার পর, তাঁকে সঙ্গে নিয়েই কলকাতায় ঘুরে বেড়াত এটিএম জালিয়াতি-কাণ্ডে ধৃত আব্দুল সইদ ওরফে সাহিল খান।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ১৫:৪২
Share:

পুলিশের জিম্মায় এটিএম কাণ্ডে ধৃতরা। —ফাইল ছবি

মুম্বইয়ের বাসিন্দা সাহিল খানের কাছে কলকাতা এক অচেনা শহর। রাস্তাঘাটের নাম জানা নেই। একা একা ঘুরতে হলে পথ চলতি মানুষকে বারে বারে জিজ্ঞেস করতে হবে। ব্যস্ত শহরে কে কার কথা শোনে? দিক্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ালে কারও সন্দেহ হতে পারে। সাদা পোশাকে পুলিশও তো থাকে!

Advertisement

অথচ ‘রোমানীয় গ্যাং’-এর নির্দেশ এ বার কলকাতার গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ হবে। তবেই মোটা টাকার কমিশন মিলবে। এত দিন জালিয়াতির পরিধি ছিল পুণে, মুম্বইয়ের মধ্যে। স্থানীয় হওয়ায় সেখানে সমস্যা হয়নি। কিন্তু, ভিন্‌ রাজ্যের অচেনা শহরে তা হলে কাজ হাসিল হল কী ভাবে?

তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন বিভিন্ন তথ্য। তাঁদের একাংশের দাবি, সাহিল অনেক মাথা খাটিয়ে প্রথমে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব শুরু করে। তার পর ধীরে ধীরে এক তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। বেশ কয়েক মাস ধরে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে আলাপচারিতার পর, তাঁকে সঙ্গে নিয়েই কলকাতায় ঘুরে বেড়াত এটিএম জালিয়াতি-কাণ্ডে ধৃত আব্দুল সইদ ওরফে সাহিল খান। বিভিন্ন কফিশপে আড্ডা, শহর জুড়ে হেঁটে ঘোরাফেরা, আড্ডা, এমনকি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকাও খেয়েছে তারা।

Advertisement

আরও পড়ুন: পাঁচতারায় ডেরা, ইনদওরে পুলিশি জালে এটিএম-কাণ্ডের দুই রোমানীয়

আর তাতেই কেল্লা ফতে হয়েছে। কোন বাসে করে নিউমার্কেট যেতে হবে? কোন বাস কসবায় যায়? একটা ফোনই যথেষ্ট। বান্ধবীর সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে রাস্তায় বেরিয়ে সাহিলের নজর থাকত কিন্তু বিভিন্ন এটিএমের উপর। এ ভাবেই বেশ কয়েক মাস ধরে কলকাতা শহর জুড়ে রেকি করে রোমানীয় গ্যাং-এর ‘ম্যানেজমেন্ট স্কুল’-এর ওই ‘কৃতী’ ছাত্র। কলকাতায় বান্ধবীর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে রাস্তাঘাট চেনার পর সাহিলের কোনও সমস্যাই হয়নি। পরে গভীর রাতে ঢিলেঢালা নিরাপত্তার এটিএমে সঙ্গীদের নিয়ে স্কিমার লাগাতে শুরু করে।

সাহিলের বিষয়ে আরও জানতে পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলেছে। জানা গিয়েছে, ওই তরুণী শহরেরই একটি বিউটি পার্লারের মালিক। সাহিল পরে তার দলের অন্য দুই সঙ্গী ইলেক্ট্রনিক্স ই়ঞ্জিনিয়ার রোহিত সুরেশ নায়ার এবং সুধীর রাজনের সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “সাহিলের সঙ্গে কলকাতার ওই তরুণীর যোগাযোগ ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

আরও পড়ুন: এক বছর পরও ডেঙ্গির ভয় মৃতের পরিবারে, নির্বিকার প্রশাসন

রোহিতের বাড়ি মুম্বইয়ের মীরা রোডে। উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে সুধীর রাজনের বাড়ি হলেও, কর্মসূত্রে সাহিলের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। মুম্বইয়ের মীরা রোডের বাসিন্দা সাহিলের ‘ব্রড ব্যান্ড’-এর ব্যবসা রয়েছে। বিত্তশালী ঘরের ছেলে। ৬ ফুটের কাছাকাছি লম্বা, সুদর্শন। খুব অল্প সময়েই ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছিল। বিভিন্ন মোবাইল সংস্থার দৌলতে হঠাৎ ইন্টারনেটের মাশুল কমে যাওয়া ব্যবসায় আর্থিক টানাটানি শুরু হয়। তত দিনে সাহিল অন্য জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

পুলিশ সূত্র খবর, দু’বছর অস্ট্রেলিয়াতে ছিল সাহিল। ও দেশে থাকার জন্য সেখানকার এক তরুণীকে এ ভাবেই সে ফাঁসিয়ে ছিল বলে জানা গিয়েছে। পরে অবশ্য ভারতে ফিরে আসে। রোমানীয় গ্যাং-এর মাথা ‘নানা’ ওরফে আইকো আরেলের সঙ্গে এই ত্রয়ীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তার পর একে একে লখনউয়ে ধৃত আদ্রিয়ান লিভিউ এবং করনেল কনস্ট্যানটিয়ান, দিল্লিতে ধৃত এবং ফেরার আর এক রোমানীয় ‘ক্রিস’-এর সঙ্গে তারা বিভিন্ন এটিএম জালিয়াতির ঘটনাতে যুক্ত হয়ে পড়ে।

পুলিশ সূত্রে খবর, এই দলের আরও চক্রী নেপালে ঘাপটি মেরে রয়েছে। কলকাতা পুলিশের একটি দল ইতিমধ্যেই নেপালে পৌঁছে গিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন এটিএম থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করা হত, নেপালে বসেই সেই সব তথ্য কাজে লাগিয়ে নকল কার্ড তৈরি করা হত। পরে সেগুলি পৌঁছে দেওয়া হত জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন