পরীক্ষা এক, বিভ্রান্তি অনেক!
সাতসকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে রওনা দিয়েছিলেন পরীক্ষার্থী। মাঝপথে এসএমএস মারফত জানতে পারলেন, এখনই তাঁর পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির হওয়ার দরকার নেই! কোথাও আবার পরীক্ষার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত অ্যাডমিট কার্ডের লিঙ্ক-ই খুঁজে পেলেন না পড়ুয়া! কেউ আবার অ্যাডমিট কার্ড না পেলেও পরীক্ষায় হাজির হওয়ার এসএমএস পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন! বিভ্রান্ত হয়ে কেউ কেউ ফোন করেছিলেন হেল্পলাইনে। অভিযোগ, কেউ ফোন ধরেননি়। অনেকে সরাসরি ছুটে এসেছিলেন পরীক্ষাকেন্দ্র। কিন্তু সাহায্যের জন্য কাউকে পাননি!
উপলক্ষ: প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা। যার দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। রবিবার সেই পরীক্ষা ঘিরেই বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। প্রেসিডেন্সির ভর্তি কমিটির চেয়ারম্যান সোমক রায়চৌধুরীর অবশ্য দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মীরা ছিলেন। তাঁর আরও দাবি, ‘‘অ্যাডমিট কার্ড না পেলে এসএমএস পাওয়া সম্ভব নয়।’’
প্রেসিডেন্সির প্রবেশিকা পরীক্ষা ঘিরে অবশ্য প্রথম থেকেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল। ১৬ জুন অনলাইনে আবেদন শুরু করার দিন ঠিক হলেও ফর্ম মিলছিল না। প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর, মুম্বইয়ের সার্ভারে গোলমাল হওয়ার ফলেই ফর্ম মিলছিল না। তার ফলে ১৯ জুন থেকে আবেদন করার কাজ শুরু হয়েছিল। সোমকবাবু বলছেন, ভর্তির ক্ষেত্রে অনেকেই নানা গোলমাল করেছিলেন। আবেদনপত্রে দেওয়া আবেদনকারীদের ফোন নম্বরে এসএমএস করে সেগুলি ঠিক করা হয়েছিল। তবে অনেকেই এসএমএস দেখে ভুল না শোধরানোর ফলে আবেদনপত্র অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল। সেই সব পড়ুয়ারা অ্যাডমিট কার্ড পাননি।
প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ এই দাবি করলেও বাস্তবে কিন্তু আরও বহু বিভ্রান্তি ধরা পড়েছে। যেমন, অ্যাডমিট কার্ডে পরীক্ষার সময় বেলা ১১টা লেখা থাকলেও তার নীচে লেখা ছিল সকাল ৯টার মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রের গেট বন্ধ হয়ে যাবে। এ দিন সকাল পৌনে ন’টা থেকে এসএমএস করে পরাক্ষার্থীদের জানানো হতে থাকে, সকাল ৯টার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যেতে। অর্থাৎ বেলা ১১টায় পরীক্ষা শুরু হবে, কিন্তু সকাল ৯টায় গেট বন্ধ হবে না।
কেন এই বিভ্রান্তি? জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাস্কর গুপ্ত স্বীকার করছেন, ‘‘ওটা ছাপার ভুলের জন্যই হয়েছিল।’’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, পরীক্ষার্থীরা সবাই নাকি ছাপার ভুল ধরতে পেরেছিল। তা সত্ত্বেও জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড সতর্ক করতেই এসএমএস করেছিল।
প্রেসিডেন্সির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং যার প্রবেশিকা পরীক্ষার দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের মতো অভিজ্ঞ সংস্থা, যারা প্রতিবার লক্ষ-লক্ষ ছাত্রছাত্রীর জন্য পরীক্ষা আয়োজন করে, তাদের এমন ভুল নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। মাত্র ছ’-সাত হাজার পরীক্ষার্থীর জন্য আয়োজন করতে এমন বিভ্রান্তি ছড়াল কেন, তার জবাব খুঁজছেন অনেকেই।
বোর্ডের একটি সূত্র বলছে, পরীক্ষার আয়োজনে আরও গলদ ছিল। শুক্রবার দেখা যায়, অনেক সেন্টারে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হয়ে গিয়েছে। সেই হ্যাপা সামলাতে তড়িঘড়ি পরীক্ষাকেন্দ্র বদলাতে হয়। সে দিনই ফোন করে ওই পরীক্ষার্থীদের জানানো হয়েছিল। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড অবশ্য জানিয়েছে, পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই হয়েছে। হেল্পলাইনে সমস্যা হলে সেটা লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়েছে। তাঁদের ব্যাখ্যা, অনেকে এক সঙ্গে ফোন করায় লাইন হয়তো ‘জ্যাম’ হয়ে গিয়েছিল।