এখনও ভাসছে কাঠামো ও পুজোর সরঞ্জাম

বিসর্জনের সাক্ষী পুকুর ভরা জঞ্জাল

কলকাতা, হাওড়া, ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় বিসজর্নের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জলাশয়, নদী ঘাটগুলি সাফাই করা হলেও ঠিক উল্টো ছবি দমদম, দক্ষিণ দমদম এবং বিধাননগর পুর এলাকায়।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় ও কাজল গুপ্ত

বিধাননগর ও দমদম শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৯
Share:

দমদম পার্ক ৪ নম্বর ট্যাঙ্কের ঘাট

কলকাতা, হাওড়া, ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় বিসজর্নের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জলাশয়, নদী ঘাটগুলি সাফাই করা হলেও ঠিক উল্টো ছবি দমদম, দক্ষিণ দমদম এবং বিধাননগর পুর এলাকায়।

Advertisement

বিসর্জনের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও জলাশয়গুলিতে পড়ে রয়েছে কাঠামো থেকে পুজোর যাবতীয় আবর্জনা। রবিবার দিনভর জলাশয়গুলি সাফ করার কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি।

বিধাননগর পুরসভার অন্তর্গত বাগুইআটির রেলপুকুর, দক্ষিণ দমদমের ৪ নম্বর ট্যাঙ্কপুকুর, দেবিঘাট এবং দমদমের ধোপাপুকুরের ছবিটাই এই অভিযোগ প্রমাণের পক্ষে যথেষ্ট। যদিও পুরসভাগুলির দাবি, এই জলাশয়গুলিতে যত প্রতিমা বিসর্জন করা হয়েছিল, তার অধিকাংশই জল থেকে তুলে ফেলা হয়েছে। সাফ করা হয়েছে জলাশয়ে ফেলা পুজোর আবর্জনাও। যেহেতু একটি বিসর্জনের পরপরই আরও একটি পুজো ও তার বিসর্জন রয়েছে, তাই তা মিটলেই বাকি কাজ শেষ করে ফেলা হবে।

Advertisement

কিন্তু এই যুক্তি যে কার্যত অসাড়, তা ইতিমধ্যেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কলকাতা, হাওড়া এবং ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকার পুরসভাগুলি। এতগুলি পুরসভা যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজ শেষ করতে পারে, তবে তিনটি পুরসভা কি সমগ্র প্রক্রিয়ার বাইরে? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।

দমদমের ধোপাপুকুর

শনিবার বিকেলে দেখা গেল, বাগুইআটির রেলপুকুরের এক ধারে ভাসছে প্রতিমার কাঠামো, সঙ্গে পুজোর শুকনো ফুল, থার্মোকল থেকে প্লাস্টিক। একই ছবি বাগুইপাড়ার পুকুরেও। বাগুইআটি, কেষ্টপুর, তেঘরিয়া, অর্জুনপুরের মতো বিভিন্ন এলাকার বড় বড় পুজোগুলি ওই পুকুর দু’টিতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়। ভিআইপি রোডের ধারে দেবীঘাটে জলে ভাসছে থার্মোকল এবং পুজোর বিভিন্ন আবর্জনা। ঘাটগুলির পাড়ের অবস্থাও তথৈবচ। যত্রতত্র পড়ে রয়েছে আবর্জনা।

কেন তৎপরতার অভাব? বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাউন্সিলর থেকে পুরকর্তাদের অনেকেই বিভিন্ন পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদেরই এই কাজে সবার আগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সদিচ্ছা নেই বলেই এমন অবস্থা। যত দিন যাবে, জলাশয় ততই দূষিত হবে।

যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ পুরকর্তারা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, এক-একটি ঘাটে গড়ে ১০০-রও বেশি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। চলতি সপ্তাহে শুক্রবার পর্যন্ত ছিল সময়সীমা। তার পরে সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকটি ঘাটে একটি-দু’টি কাঠামো এখনও পড়ে আছে। অধিকাংশ কাঠামোই জল থেকে তুলে ফেলা হয়েছে। সদিচ্ছা ছিল বলেই এই কাজ সম্ভব হয়েছে।

তবে পরিকাঠামোর অভাব যে দ্রুত জলাশয় ও ঘাটগুলি সাফ করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সে কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে পুরসভাগুলি। যেমন, বিধাননগর পুর এলাকার রেলপুকুরটি মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয়বাবুর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। তিনি বলেন, ‘‘গণেশ পুজোর পর থেকেই পুকুরের জলে প্রতিমা ফেলা শুরু হয়ে যায়। ওই সব পুকুরে প্রচুর মাছ রয়েছে। বিসর্জনের পরে পুকুরের জল পরিশোধনের কোনও ব্যবস্থা নেই।’’

কী ভাবে প্রতিমা তোলা হয় সেখানে? কোথাও কোথাও কুমোরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা কাঠামো তুলে পুকুরঘাটে রেখে দেন। পরে কাঠামোর আকারে বাঁধা খড় তুলে নিয়ে যান। কোথাও কুলি মারফত কাঠামো লরি করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সব জায়গায় যে পুর কর্তৃপক্ষের নজর পড়ে, তেমনও নয়। লুকিয়ে-চুরিয়ে ছোটখাটো পুজোর ঠাকুর পাড়ার পুকুরে নামিয়ে দেওয়া হয় অনেক জায়গাতেই। ফলে ওই সব পুকুরে বিসর্জনের পরে অনেক দিন ধরেই কাঠামো পড়ে থাকে।

বাগুইআটি রেলপুকুর ঘাটে।

বর্তমানে দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার অধীনে ভিআইপি রোডের ধারে তৈরি হয়েছে দেবী ঘাট। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অধিকাংশ কাঠামোই জল থেকে তোলা হয়ে গিয়েছে। তবে লক্ষ্মী পুজোও আসছে, তাই সোমবার থেকে যেটুকু কাঠামো থাকবে সবই দ্রুত তুলে ফেলা হবে।’’ একই বক্তব্য, দমদমের ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্টেরও।

কিন্তু কলকাতা, হাওড়া পারলে দমদম, দক্ষিণ দমদম পারল না কেন?

পুরকর্তাদের কথায়, কলকাতার মতো পরিকাঠামো তাঁদের নেই। ফলে ইচ্ছে থাকলেও সময়ে জলাশয় সাফ করা সম্ভব হয় না। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার অনেকটাই তাড়তাড়ি কাজ করা হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত শুধু বলেন, ‘‘পুকুরের জল কোনও ভাবে দূষিত হতে দেওয়া যাবে না। ভাসানের নির্দিষ্ট জায়গা এখানে নেই। কয়েকটি পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। সেখানে লরি দাঁড় করিয়ে কাঠামো-সহ অন্যান্য আবর্জনা তোলা হয়েছে। লক্ষ্মীপুজোর পরে সবটাই উঠিয়ে দেওয়া হবে।’’

বিধাননগর পুর এলাকায় সল্টলেকের অধিকাংশ প্রতিমাই নিউ টাউনে মায়ের ঘাটে বিসর্জন হয়। কিন্তু সল্টলেকের বাইরে বিধাননগর পুর নিগম এলাকায় বাগুইআটি, কেষ্টপুর, রাজারহাটের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছোট-বড় অনেক পুকুর রয়েছে। সব পুকুর বিসর্জনের জন্য উপযুক্ত না হলেও, অনেক ক্ষেত্রে সেখানে জায়গায় প্রতিমা নিরঞ্জন হচ্ছে। যার জেরে পুকুরের জল দূষিত হচ্ছে। তাই এ বার থেকে কয়েকটি পুকুর বিসর্জনের জন্য আলাদা করে চিহ্নিত করার পরিকল্পনা চলছে।

শনিবার ছবিগুলি তুলেছেন শৌভিক দে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন