শেহনাজ খাতুন
রাতে ফোন করে বাইশ বছরের মেয়েটি জানিয়েছিলেন, ‘বাবা আমাকে নিয়ে যাও। খুব মারছে।’ ভোর হতেই মেয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলেন বাবা। মাঝরাস্তায় সেই বাবার মোবাইলে ফোন এল থানা থেকে। জানানো হল, শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই তরুণীর ঝুলন্ত দেহ।
শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বরাহনগরে। মৃতার নাম শেহনাজ খাতুন। বধূ নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তাঁর স্বামী মহম্মদ রফিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আড়াই বছর আগে খিদিরপুরের বাসিন্দা মহম্মদ অসগরের মেয়ে শেহনাজের সঙ্গে বিয়ে হয় বরাহনগরের মহারাজা নন্দকুমার রোডের বাসিন্দা, পেশায় গাড়িচালক রফিকের। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই কখনও বাড়ি কেনা, বাড়ি ভাড়া দেওয়া, কখনও চিকিৎসা বা বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসতে চাপ দেওয়া হত শেহনাজকে। না পারলেই জুটত মারধর।
শনিবার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে ওই তরুণীর মামা মহম্মদ জাহিদ জানান, এক বছর আগে শেহনাজকে নিজের কাছে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন অসগর। কিন্তু এর কয়েক দিন পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রফিক। সেই সময়ে ফের এক প্রকার জোর করেই শেহনাজকে বরাহনগরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান জাহিদ। তিনি বলেন, ‘‘জামাইয়ের লিভারের সমস্যা হয়েছিল। সেই সময়ে চিকিৎসার খরচও দিয়েছেন অসগর। তাতেও রফিকের দাবি মেটেনি।’’
জাহিদের আরও অভিযোগ, এর কয়েক দিন পরেই অ্যাপ-ক্যাব কেনার জন্য টাকা দাবি করেন রফিক। কিন্তু একসঙ্গে কয়েক লক্ষ টাকা তাঁর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান অসগর। কিন্তু এর পরে অসগর একটি ফ্ল্যাট কিনলে আরও খেপে ওঠেন রফিক। তাঁকে গাড়ি কেনার টাকা না দিয়ে ফ্ল্যাট কেন কেনা হল, প্রশ্ন তোলেন তা নিয়ে। ফ্ল্যাট বিক্রি করে টাকা দেওয়ার জন্য ওই যুবক চাপ দিতে থাকেন বলেও অভিযোগ। জাহিদ বলেন, ‘‘অসগর যে প্রোমোটারের কাছে কাজ করতেন, তিনিই মাসিক কিস্তিতে ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন। সব কিছু জানা সত্ত্বেও অশান্তি শুরু করেছিলেন রফিক।’’
পরিবারের অভিযোগ, গাড়ি কেনার টাকা চেয়ে শেহনাজকে মারধর করতেন রফিক। মেয়ের উপরে অত্যাচার বাড়তে দেখে অসগরও জানিয়েছিলেন, কয়েক মাস সময় দিলে তিনি টাকা জোগাড় করে দেবেন। কিন্তু সমস্যা কমেনি। বৃহস্পতিবার রাতেও তাঁকে মারধর করা হচ্ছে বলে ফোন করেন শেহনাজ। অসগর বলেন, ‘‘অত রাতে গাড়ি পাওয়া যাবে না বলে মেয়েকে বলেছিলাম ভোর হলেই যাব। বেরিয়েও পড়েছিলাম। কিন্তু যাওয়ার আগেই সব শেষ।’’ শেহনাজ ও রফিকের দেড় বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। ঘটনার পরে পুলিশের কাছে মেয়ের শাশুড়ি, ননদের বিরুদ্ধেও মারধর করে মেরে ফেলার অভিযোগ দায়ের করেছেন অসগর।
পুলিশ জানায়, জেরায় রফিক দাবি করেছেন, ওই দিন সকালে শেহনাজের সঙ্গে বচসা হয়েছিল তাঁর। এর পরে তিনি বেরিয়ে যান। কিছু ক্ষণ পরে এসে দেখেন, ঘরের দরজা খোলা। ভিতরে গলায় ওড়নার ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায় ওই তরুণীকে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘মৃতার স্বামীকে জেরা করে ঘটনার তদন্ত চলছে।’’