প্রতিমা বিসর্জন দিতে এসে গঙ্গায় তলিয়ে যাচ্ছিলেন এই দুই যুবক। পুলিশি তৎপরতায় প্রাণে বাঁচেন তাঁরা। মঙ্গলবার, জাজেস ঘাটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
গত দু’দিন, সোমবার ও মঙ্গলবার সব মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার কালী প্রতিমা বিসর্জন হল গঙ্গায়। বেশির ভাগ ঘাটেই পড়ে নেই প্রতিমার কাঠামো, ডাকের সাজ বা অন্য কিছু। বাজেকদমতলা, নিমতলা, গ্বালিয়র— সব ক’টি ঘাট সাফ-সুতরো। দু’দিনের বিসর্জন-পর্ব মিটতেই প্রতিটি ঘাট পরিষ্কার করে দিয়েছেন কলকাতা পুরসভার কর্মীরা। প্রতিমার কাঠামো, রং বা ডাকের সাজ যাতে কোনও ভাবেই গঙ্গার দূষণের কারণ না হতে পারে, সে জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন তাঁরা। পুরসভার উদ্যান দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘সজাগ ছিলেন আমাদের কর্মীরা। তাই বিসর্জন-পর্ব চুকতেই সব সাফ।’’
মঙ্গলবার গঙ্গার বাজেকদমতলা, গ্বালিয়র এবং নিমতলা ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, গঙ্গায় প্রতিমা পড়ার আগেই কোমর জলে দাঁড়িয়ে পড়ছেন পুরকর্মীরা। ঘাটের মুখে এক দিকে সার দিয়ে দাঁড় করানো ক্রেন এবং পে-লোডার। একটু দূরেই রাখা কলকাতা পুরসভার নাম লেখা লরি। প্রতিমা জলে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই লম্বা দড়ি দিয়ে প্রতিমাকে টেনে ডাঙায় তুলছেন পুরকর্মীরা। তার পরে পে-লোডার বা ক্রেনের মাধ্যমে সেই প্রতিমা তুলে নেওয়া হচ্ছে লরিতে। সব ভর্তি করে লরি সোজা চলে যাচ্ছে ধাপায়।
এমনকী, কলকাতা পুর এলাকার বাইরে থেকে ভেসে আসা প্রতিমার পরিকাঠামো দেখতে পেলেও পুরকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে জলে নেমে সেগুলি তুলে নিচ্ছেন। কেউ বাইরে থেকে ফুল ফেলার চেষ্টা করলে দৌড়ে এসে তা-ও আটকাচ্ছেন তাঁরা। মাঝেমধ্যেই ঝাঁট দিয়ে ঘাট পরিষ্কার করা হচ্ছে।
পুরসভার উদ্যান দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রতিমা বিসর্জনে কড়াকড়ি তো ছিলই। পাশাপাশি, পুজোর ফুল যাতে গঙ্গায় সরাসরি না পড়ে সে ব্যাপারেও যতটা সম্ভব নজরদারি চালানো হয়েছে। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘অনেক সময়ে বাইরে থেকে প্লাস্টিকের প্যাকেটে ফুল এনে গঙ্গায় ছুড়ে দেন অনেকে। এমন দেখলেই পুরকর্মীদের বাধা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই বাড়তি নজরদারির ফলে ইতস্তত গঙ্গায় ফুল ছোড়া কিছুটা হলেও আটকানো সম্ভব হয়েছে।’’ পুরসভার ওই আধিকারিক আরও জানান, প্রতিটি ঘাটে ফুল এবং পুজোর আনুষঙ্গিক জিনিস ফেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত ছিল।
এ দিন আহিরীটোলা ঘাট এবং বাগবাজারে মায়ের ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, গঙ্গার পাড়ে পড়ে রয়েছে কিছু কাঠামো এবং ফুল। যদিও পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, বেশিরভাগই সরানো হয়ে গিয়েছে। কিছু কাঠামো ইতস্তত পড়ে থাকতে পারে। মঙ্গলবার ভাসানের পরে সেগুলি সরিয়ে ফেলা হবে। তবে জায়গার অভাবে সব ঘাটে ক্রেন বা পে-লোডার রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজনে বড় ঘাট থেকে তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সে কারণেও কয়েকটি ক্ষেত্রে একটু সময় লাগছে।
মেয়র পারিষদ দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে বেশির ভাগ ঘাট থেকে প্রতিমা সঙ্গে সঙ্গে সরানো হচ্ছে ঠিকই। ফুল বা পুজোর অন্য সামগ্রীও জলে ফেলতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু অনেক সময়ে কলকাতা পুর এলাকার বাইরে থেকেও বিসর্জন হয়ে যাওয়া প্রতিমা বা প্রতিমার কাঠামো ভেসে আসছে। কিছুটা হলেও তা সমস্যা তৈরি করছে। তবে, পুরকর্মীরা সেগুলি দেখামাত্র সরিয়ে দিচ্ছেন।’’
পুরসভা সূত্রে খবর, কলকাতা পুর এলাকার ১৬টি ঘাট বিসর্জনের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এ ছাড়াও সংযোজিত এলাকার প্রায় ২০টি জলাশয়েও এ দিন প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। শহরের বাজেকদমতলা, গ্বালিয়র এবং নিমতলা ঘাটে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। এ বছর প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য কাজে লাগানো হয়েছিল ৭টি ক্রেন, ১৫টি পে-লোডার এবং প্রায় ১৫০টি লরি। প্রায় ১০০০ পুরকর্মী ছাড়াও ছিলেন কলকাতা বন্দরের কর্মীরা এবং পর্যাপ্ত পুলিশ।
দেবাশিসবাবু বলেন,‘‘গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে সব প্রতিমার নিরঞ্জনই আদালতের নির্দেশ মেনে হয়। এ বিষয়ে আমরা সাফল্যও পেয়েছি।’’ তিনি জানান, আসন্ন জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনেও একই রকম ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া, ছট পুজোর আগে গঙ্গার সব ঘাটও পরিষ্কার রাখা হবে।