গড়া: তৈরি হচ্ছে শ্বেতপাথরের প্রতিমা। ছবি: শান্তনু হালদার
মুক্তো, সোনা, মণি-মাণিক্যের পরে শ্বেতপাথর আর রুপো!
জয়পুরের মার্বলে তৈরি প্রায় পাঁচ টন ওজনের দুর্গা প্রতিমা এ বার কলকাতা থেকে পাড়ি দিচ্ছে আগরতলায়। ১২ কেজি রুপোর গয়নায় মোড়া একই হাতে তৈরি প্রতিমার দর্শন মিলবে বারাসতে। আগেও সাত সমুদ্র পেরিয়ে ভিন্ দেশি মণ্ডপে গিয়েছে তাঁর প্রতিমা। এ বারও নানা আদলে কল্পিত প্রতিমায় কলকাতা ও শহরতলির মণ্ডপ আলো করেছেন মধ্য তিরিশের শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দার। তার মধ্যে অন্যতম শূন্যে ভাসমান প্রতিমাও!
প্রথা মাফিক আর্ট কলেজ বা কোনও স্থাপত্য বিদ্যায় শিক্ষা নেই তাঁর। তবু নিজের মনে বছর কয়েক ধরে রকমারি জিনিস দিয়ে প্রতিমা গড়ছেন ইন্দ্রজিৎ। এর আগে মুক্তো, ঝিনুক, শামুক, মণি-মাণিক্যের মতো ১০৮ রকমের সামগ্রী দিয়ে তাঁর তৈরি দুর্গা নজর কেড়েছে অনেকের। চায়না কাঠের বল দিয়ে প্রতিমা এবং গত বছর ৪ কোটি টাকার সোনার দেবী মূর্তিও নানা পুরস্কার এনে দিয়েছে ইন্দ্রজিতের ঝুলিতে।
মূল কর্মশালা হাবরার বাণীপুরে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পাঁচ টন ওজনের শ্বেতপাথরের দেবী মূর্তি প্রায় ১০ ফুট উঁচু। বুদ্ধের আদলে তৈরি আগরতলার এক ক্লাবের এই দেবী শান্তির বার্তা দেবেন ভক্তদের। আগরতলারই আর একটি ক্লাবের জন্য ইন্দ্রজিৎ বানিয়েছেন ভাসমান দুর্গা। শুধু ভারসাম্যের উপরে ভিত্তি করে কোনও ঠেকনা ছাড়াই শূন্যে ভেসে থাকবে প্রতিমা।
থিমও করছেন ইন্দ্রজিৎ। বারাসতের এক ক্লাবে ইন্দ্রজিতের থিম ‘ঠিকানা।’ সন্তানদের গড়ে পিঠে বড় করার পরে মা-বাবার ঠিকানা কোথায় হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইন্দ্রজিৎ। আর এক ক্লাবে তাঁর ভাবনাতেই থিম হয়েছে পাখির বাসা নিয়ে। টেরাকোটা আর ছৌয়ের মুখোশের মতো রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের হস্তশিল্প দিয়ে সোদপুরে আবার তাঁর হাতেই তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। থিম ‘কী নেই বাংলায়!’
নিজের বাড়ির কাছে ছোটদের জন্য একটি আশ্রমও চালান শিল্পী। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরাও পুজোর কাজ করেন ইন্দ্রজিতের কর্মশালায়। কাজে হাত লাগায় শিল্পীর একমাত্র ছেলে, চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া সায়নদীপও।