আইআইএমের পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে এখনও রহস্য

সব মিলিয়ে মাস দু’য়েক আগে লখনউয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম)-এর হস্টেলের ঘরে সেখানকার স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, কলকাতার যোধপুর কলোনির সোহম মুখোপাধ্যায়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে রহস্য ঘোরালো হচ্ছে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৫
Share:

সোহম মুখোপাধ্যায়

কলকাতায় মা-বাবা মানতে নারাজ যে, লখনউয়ে তাঁদের ছেলে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ছেলেকে খুন করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা বললেও জানাচ্ছে, এখনও এই রহস্যমৃত্যুর ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। এরই মধ্যে ছেলের সঙ্গে তাঁর কথা হওয়ার প্রমাণ মোবাইলের কল লিস্ট থেকে কেউ প্রযুক্তিগত কারিকুরি করে উড়িয়ে দিয়েছে এবং এর সঙ্গে ছেলের রহস্যমৃত্যুর সম্পর্ক আছে, এই দাবি করে লেক থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন মৃতের মা।

Advertisement

সব মিলিয়ে মাস দু’য়েক আগে লখনউয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম)-এর হস্টেলের ঘরে সেখানকার স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, কলকাতার যোধপুর কলোনির সোহম মুখোপাধ্যায়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে রহস্য ঘোরালো হচ্ছে।

গত ১৫ নভেম্বর ২৫ বছরের ওই পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পরে জানায়, মানসিক অবসাদের কারণে ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। তবে মৃত ছাত্রের বাড়ির লোকজনের মত, বিষয়টি এত সোজা নয়। একাধিক এটিএম কার্ড ভরা সোহমের মানিব্যাগ, তাঁর আধার কার্ড ও আইআইএম লখনউয়ের সচিত্র পরিচয়পত্রও লোপাট হয়ে গিয়েছে বলে বাড়ির লোকজনের দাবি।

Advertisement

সোহমের মা প্রণতি বন্দ্যোপাধ্যায় ২০ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি-কে চিঠি দিয়ে আবেদন করেন, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলেই তিনি সন্দেহ করছেন এবং পুলিশ সেই মতো তাঁর এই চিঠিকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করে তদন্ত করুক। প্রণতিদেবীর বক্তব্য, তাঁদের জানানো হয়েছিল, হস্টেলে ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল এবং সেই দরজা ভেঙে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর ছেলের দেহ ১৫ নভেম্বর উদ্ধার করা হয়।

‘‘অথচ ১৬ তারিখ সকালে লখনউয়ে সোহমের হস্টেলের ঘরে গিয়ে দেখি, দরজা ভাঙার এতটুকু চিহ্ন নেই। ওখানে শুনি, হাল্কা চাপ দিতেই দরজা খুলে গিয়েছিল,’’— বলছেন প্রণতিদেবী।

লখনউয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হরেন কুমার ফোনে অবশ্য বলেন, ‘‘মৃতের মায়ের চিঠি বা এই ব্যাপারে ডিজি-র কাছ থেকে কোনও নির্দেশ আমরা পাইনি।’’ অতিরিক্ত এসপি-র কথায়, ‘‘ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট ও কিছু খোঁজখবর করে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্র গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে আমাদের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। কোনও গন্ডগোল থাকলে বা অন্য রকম সূত্র পাওয়া গেলে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’ মৃত ছাত্রের মায়ের চিঠি পৌঁছলে কি পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে নতুন করে তদন্ত শুরু করবে? অতিরিক্ত এসপি বলেন, ‘‘ওই চিঠি পেলেও আমরা আগে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে দেখব, উনি যে সব অভিযোগ তুলছেন, তার মধ্যে সারবত্তা আছে কি না।’’

প্রণতিদেবী বলেন, ‘‘এটা প্রচার করা হচ্ছে যে, সোহমের সঙ্গে ওর বাবা আর আমি যোগাযোগ রাখতাম না বলে ও মানসিক অবসাদে ভুগত। এটা সর্বৈব মিথ্যে।’’ তাঁর বক্তব্য, গত ১০ নভেম্বর ছেলে তাঁকে ফোন করেছিল। ১১ তারিখ তিনি ছেলেকে ফোন করেছিলেন। দু’দিনই ছেলের কথা শুনে মায়ের মনে হয়েছিল, সে দিব্যি ভাল আছে। ১২ তারিখ প্রণতিদেবী অসুস্থ ছিলেন বলে ছেলেকে ফোন করতে পারেননি। তবে ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখ বার বার সোহমের মোবাইলে ফোন করলেও বেজে যায়। সেই জন্য প্রণতিদেবী ও তাঁর স্বামী নীহারেন্দু মুখোপাধ্যায় উদ্বেগে ছিলেন। ১৫ তারিখ দুপুর দেড়টা নাগাদ আইআইএম থেকে তাঁদের ফোন করে জানানো হয়, সোহম আর নেই।

লেক থানায় হওয়া জেনারেল ডায়েরিতে (১১০ নম্বর) প্রণতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, সোহমের আত্মহত্যার তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতেই ছেলের ও তাঁর মধ্যে হওয়া কথোপকথনের প্রমাণ তাঁর মোবাইল ফোনের কল লিস্ট থেকে কেউ মুছে দিয়েছে। প্রণতিদেবী ও নীহারেন্দুবাবু দু’জনেই অসুস্থ। প্রণতিদেবী বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ পুলিশ উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে আমরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন