প্রতীকী ছবি।
দরপত্র আহ্বান করে পার্কিং লটের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাকে। কিছু দিন বাদেই সেই সংস্থা জানিয়ে দিচ্ছে, পার্কিং লটের দায়িত্ব তারা আর নিতে পারবে না। কলকাতা পুরসভার কাছে সংশ্লিষ্ট পার্কিং লট ‘সারেন্ডার’ করছে তারা। আর তার পর থেকেই ওই এলাকায় শুরু হচ্ছে বেআইনি পার্কিং! পুর আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, এমনই এক চক্র চলছে শহর জুড়ে। তাতে পুরসভার রাজস্বের ক্ষতি তো হচ্ছেই, সেই সঙ্গে বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেও।
পুরসভার অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবারই রবীন্দ্র সরোবর থানা এলাকার লেক ভিউ রোড থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরেই তারা ওই এলাকায় বেআইনি পার্কিংয়ের কারবার চালাচ্ছিল বলে পুরসভা সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, গত চার মাসে বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য শুধু রবীন্দ্র সরোবর থানা এলাকা থেকেই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাস দুই আগে রাসবিহারী মো়ড় থেকে দুই যুবককে ধরেছিল পুলিশ।
পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই পার্কিং লটের দায়িত্ব যে সংস্থার হাতে ছিল, তারা তিন মাস আগে এসে পুরসভাকে জানায়, ওই দায়িত্ব তারা আর নেবে না। তাদের অসুবিধা আছে। এখন দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া যে হেতু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং দীর্ঘদিন ধরে তা হচ্ছেও না, তাই ওই পার্কিং লট তার পর থেকে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। আর সেই সুযোগেই সেখানে এত দিন ধরে বেআইনি পার্কিং চলছিল। নতুন পার্কিং-নীতি তৈরি না হওয়ার কারণেই সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে বলে দাবি পুরকর্তাদের একাংশের।
পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পার্কিং লটের দায়িত্ব সারেন্ডার করা এবং সেখানে বেআইনি পার্কিং চালু হয়ে যাওয়া, এটা আসলে একটা চক্র! আমরা লক্ষ করেছি, দরপত্রে নির্বাচিত সংস্থা যে সব জায়গায় কাজ চালাতে পারবে না বলে আমাদের জানিয়েছে, সেই সমস্ত জায়গাতেই বেআইনি পার্কিং শুরু হয়েছে। কারণ, শূন্যস্থান তো আর পড়ে থাকে না!’’ পার্কিং দফতরের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার অবশ্য পার্কিং-নীতি তৈরি না হওয়ার কারণে বেআইনি পার্কিং হচ্ছে, এ যুক্তি মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে পার্কিং-নীতি তৈরি হচ্ছে। তাই কিছুটা সময় লাগছে। কিন্তু তার জন্য বেআইনি পার্কিং হচ্ছে, এমনটা নয়।’’
বিষয়টি নিয়ে সরব কাউন্সিলরদের একাংশও। উত্তর কলকাতার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘রাত হলেই যেখানে-সেখানে পার্কিং করা হচ্ছে। কারও কোনও হেলদোল নেই।’’ প্রসঙ্গত, বেআইনি পার্কিংয়ের বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি পাঁচ নম্বর বরো অফিসে বিশেষ বৈঠক করেছিলেন সংশ্লিষ্ট বরোর অধীনস্থ কাউন্সিলরেরা। সেখানে কলেজ স্ট্রিট-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বেআইনি পার্কিং বন্ধের জন্য রূপরেখাও ঠিক করা হয়। কোথায় কোথায় বেআইনি পার্কিং হচ্ছে, তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরির কথাও বলা হয়। বরো চেয়ারম্যান অপরাজিতা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বেআইনি পার্কিং চলছে। রিপোর্ট পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পার্কিং দফতরের আধিকারিকেরা সেই রিপোর্ট তৈরি করবেন।’’
পুলিশের একাংশের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি পার্কিংয়ের বিষয়ে জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ট্র্যাফিক গার্ডের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতারা অভিযুক্তের পাশে দাঁড়িয়ে বিষয়টি মিটমাট করে নেন। তা হলে আর কী করা যাবে!’’ নিয়ম অনুযায়ী, পুরসভার অনুমোদনপ্রাপ্ত কোনও এলাকায় ক’টা গাড়ি পার্কিংয়ে রাখা যাবে, তা ঠিক থাকে। অভিযোগ, পুরসভার নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনেক ক্ষেত্রে সেখানে বাড়তি গাড়ি রাখা হয়। মূল রাস্তায় নজরদারি চললেও ছোট রাস্তায় পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে অনেক ক্ষেত্রেই বেআইনি ভাবে পার্কিং ফি-ও আদায় করা হয়। ট্র্যাফিক গার্ডের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুজো আসছে। এমনিতেই এ সময়টা শপিং মল বা মার্কেটের সামনে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যায়। আর সেই সুযোগেই এই চক্র আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।’’
শহর জুড়ে বেআইনি পার্কিংয়ের সিন্ডিকেট ঠেকাতে পুলিশ কী করছে? এ প্রসঙ্গে যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) মিতেশ জৈনকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এসএমএস করা হলেও জবাব মেলেনি।