‘দায়সারা’ নিম্ন আদালত, জামিন জেলবন্দি কিশোরের

ঘটনাটি কী? উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই কিশোরের আইনজীবী অন্তরীক্ষ বসু ও মধুমিতা বসাক জানান, চলতি বছরের ৬ এপ্রিল এক কিশোরী মানিকতলা থানায় তাঁদের মক্কেলের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করে।

Advertisement

শমীক ঘোষ ও  শিবাজী দে সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০২
Share:

প্রতীকী চিত্র

নাবালকদের বিচার সংক্রান্ত আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে কারাবাসের ব্যবস্থা নেই ভারতীয় দণ্ডবিধিতে। অথচ, যৌন হেনস্থার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া এমনই এক নাবালককে ২০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিল শিয়ালদহের বিশেষ পকসো আদালত। সোমবার তাকে জামিন দিল কলকাতা হাইকোর্ট। নাবালকের আইনজীবীরা জানান, প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করণ নায়ার রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের মক্কেলকে জামিন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে, বিচারে চূড়ান্ত গাফিলতি হয়েছে নিম্ন আদালতে। প্রসঙ্গত, অভিযোগ দায়ের হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ওই নাবালককে কারাবাস এবং দু’লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছিলেন শিয়ালদহ পকসো আদালতের বিচারক জীমূতবাহন বিশ্বাস।

Advertisement

মেয়েটি জানায়, মাস পাঁচেক ধরে ওই নাবালকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। সে তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু পরে জানায়, বিয়ে করবে না। অভিযোগে নাবালিকা আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওই কিশোর তার সঙ্গে জোর করে সহবাসও করে।

অন্তরীক্ষ জানান, অভিযোগ পেয়ে মানিকতলা থানা নাবালকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ও পকসো আইনে মামলা রুজু করে। মামলায় সাত জন সাক্ষী ছিলেন। বিচার শেষে শিয়ালদহের বিশেষ পকসো আদালত নাবালক হিসেবে অভিযুক্তকে গণ্য না করেই সাজা ঘোষণা করে।

Advertisement

রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে ওই নাবালক। শুনানিতে তার আইনজীবী আদালতের ডিভিশন বেঞ্চকে জানান, ওই নাবালিকাকে জানুয়ারিতে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তিন মাস পরে কেন অভিযোগ দায়ের হল, খতিয়ে দেখেননি তদন্তকারী অফিসার। নিম্ন আদালতের বিচারকও তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করেননি। ওই আইনজীবীর আরও অভিযোগ, গ্রেফতারের সময়ে তাঁর মক্কেলের বয়স ছিল ১৬ বছর ৩ মাস। সেই তথ্য নিম্ন আদালতে পেশ করা হয়নি। এমনকি, বিচারকের কাছে ওই কিশোর নিজের বয়সের কথা জানালেও সেই দাবির সত্যতা বিচার করা হয়নি। কিশোরের আইনজীবী আরও জানান, তাঁর মক্কেলকে ৭ এপ্রিল গ্রেফতার করে চার দিন পরে আদালতে তোলা হয়েছিল। কেন চার দিন পরে আদালতে পেশ করা হল, মেলেনি সেই ব্যাখ্যাও।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে ওই নাবালককে সরকারি হোমে পাঠায়। আদালত জানায়, জুভেনাইল আইনে কোনও নাবালককে কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া যায় না। নিম্ন আদালতের নথি খতিয়ে দেখে ডিভিশন বেঞ্চ নাবালকের জরিমানার নির্দেশ খারিজ করে এবং তাকে জামিনের আবেদন করার অনুমতি দেয়।

সোমবার জামিন মামলার শুনানিতে নাবালকের আইনজীবী জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার সময়ে ওই কিশোরী এক বারও জানায়নি, তাকে বলপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন, নিম্ন আদালতের বিচারক বিচার করেছেন ‘যান্ত্রিক’ ভাবে (মেকানিক্যালি)। নির্যাতিতার ডিএনএ পরীক্ষা হয়েছিল কি না, তা-ও তিনি দেখেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন