কান ফাটানো উদ্‌যাপনেই গা-জোয়ারির স্বাধীনতা

অনেকটা কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোর রাতের জলসার মতোই প্রস্তুতি। সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে জলসা। চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত। তার জন্য রাস্তা আটকে তৈরি হচ্ছে স্টেজ। লাগানো হয়েছে একাধিক ঢাউস সাউন্ড বক্স। কিন্তু কী উপলক্ষে জলসা? কাল কি কোনও পুজো আছে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২৪
Share:

জোর যার: হাসপাতালের সামনে চলছে মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। মঙ্গলবার, হাজরা মোড়ে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অনেকটা কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোর রাতের জলসার মতোই প্রস্তুতি। সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে জলসা। চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত। তার জন্য রাস্তা আটকে তৈরি হচ্ছে স্টেজ। লাগানো হয়েছে একাধিক ঢাউস সাউন্ড বক্স। কিন্তু কী উপলক্ষে জলসা? কাল কি কোনও পুজো আছে?

Advertisement

বাঘা যতীন মোড়ে স্টেজের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সারতে সারতে স্থানীয় এক যুবক এক গাল হেসে বললেন, ‘‘দেখে আসুন, স্টেজের সামনে লেখা আছে সব। মধ্যরাতে আমরা স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন করছি। রাত বারোটায় পতাকা উত্তোলন। তার আগে পর্যন্ত চলবে গান-বাজনা।’’

শুধু বাঘা যতীন মোড়ই নয়, মধ্যরাতে স্বাধীনতা দিবস পালনের এই হিড়িক দেখা গেল গোটা কলকাতা জুড়েই। তারই প্রস্তুতি হিসেবে মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্ন এলাকায় চলল রাস্তা জুড়ে স্টেজ তৈরি ও লাউড স্পিকার বসানোর কাজ। কোথাও দেখা গেল, স্টেজের ঢিল ছোড়া দূরত্বেই রয়েছে হাসপাতাল বা নার্সিংহোম। কোথাও বা রয়েছে স্কুল। কোথাও আবার ঘিঞ্জি মোড়ে স্টেজ বাঁধার জন্য এলাকায় রীতিমতো যানজট। কিন্তু তাতে কী? হাজরা মোড়ে মাইক পরীক্ষা করতে করতে এক যুবকের জবাব, ‘‘একটু অসুবিধা তো হতেই পারে। তা বলে স্বাধীনতা দিবসে জলসা হবে না?’’

Advertisement

বাঘা যতীন মোড়ে যেখানে মঞ্চ ও মণ্ডপ বাঁধা হচ্ছে, তার সামনেই ‘নো হর্ন জোন’ সাইনবোর্ড ঝোলানো। কারণ, সামনেই বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু তাতে কী? উদ্যোক্তাদের কোনও পরোয়াই নেই। এলাকাটি যে ওয়ার্ডে, সেই ১০১ নম্বরের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘মাত্র ১৩০ মিটার রাস্তা আটকানো হয়েছে। ফলে যানজট হচ্ছে না। শব্দদূষণ যাতে না হয়, তার জন্য কোনও চোঙা লাগানো হয়নি।’’

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কী বলছে? এলাকা ঘুরে দেখা গেল, বাঘা যতীন মোড়ের কাছে রাজা সুবোধ মল্লিক রোডের অর্ধেকটা জুড়ে বানানো হয়েছে স্টেজ। ফলে সোমবার থেকেই সেখানে শুরু হয়েছে তীব্র যানজট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বাঘা যতীন হাসপাতালের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘ওদের জলসার ধার ঘেঁষেই আমাদের মেল ওয়ার্ড, ফিমেল ওয়ার্ড ও প্রসূতি বিভাগ। বাঘা যতীন মোড়ে মিটিং-মিছিল হলেই সেই আওয়াজে রোগীরা তিষ্ঠোতে পারেন না। রাতভর জলসা হবে শুনে রোগীরা তো রীতিমতো সন্ত্রস্ত। কিন্তু কাকে আর অভিযোগ জানাব?’’ একই ছবি পণ্ডিতিয়ার গড়চা মোড়ে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে হাজরা রোড জুড়ে তৈরি হয়েছে মঞ্চ। আর ফুটপাত আটকে ইতিমধ্যেই বসে গিয়েছে ভিআইপি-দের বসার জন্য চেয়ার আর সোফা।

জলসা শুরু সন্ধ্যা সাতটায়। কিন্তু বিকেল চারটেতেই দেখা গেল, হাজরা মোড়ে রাস্তা জুড়ে তৈরি হওয়া স্টেজে প্রবল আওয়াজে ‘মাইক টেস্টিং’ চলছে। গান বাজিয়ে বক্স পরীক্ষাও শুরু হয়ে গিয়েছে। মঞ্চের বাঁ দিকেই চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল। সামনে ‘নো হর্ন’ সাইন বোর্ড। দেখা গেল, সে দিকেই তাক করে ঝোলানো হয়েছে চোঙা। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘হাজরা মোড়ে মিটিং-মিছিল লেগেই থাকে। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান নতুন করে শুরু হয়েছে। অসুবিধা তো অবশ্যই হয়। একটা আচরণবিধি থাকা উচিত।’’

পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য এ সব নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। তাঁর এক কথায় জবাব, ‘‘স্বাধীনতা দিবসেও শব্দদূষণ খুঁজতে হবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন