কেটে সরানো হচ্ছে ভেঙে পড়া গাছ। বৃহস্পতিবার, যাদবপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
বছর সতেরো-আঠেরোর মেয়েটির মাথার খুলি ফেটে ঘিলু প্রায় বেরিয়ে এসেছে। কোনও রকম সাড়াও মিলছে না হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে। আইসিইউ-তে ভেন্টিলেশনে রেখে যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, মেয়েটির শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। অতি উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। দিতে হচ্ছে রক্তও। কিন্তু এত সত্ত্বেও ভাবনা কাটছে না। পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বহু চেষ্টার পরেও খোঁজ পাওয়া যায়নি মেয়েটির পরিবারের কারও। তাই অচৈতন্য অবস্থায় থাকা ওই তরুণীর নাম-পরিচয় কিছুই জানা যায়নি এখনও।
বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে ঝ়ড়-জলের জেরে কলকাতা শহর জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে যায়। সে সময়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর গেটের কাছে বড় একটি গাছ পাঁচিল-সহ ভেঙে পড়ে। যার তলায় সাত জন চাপা পড়েন বলে জানায় পুলিশ। তাঁদেরই এক জন এই তরুণী। দুর্ঘটনার পর থেকেই মেয়েটির ছবি দিয়ে কলকাতার বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিতে বলা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কিন্তু লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবার ওই বেসরকারি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার অরবিন্দ রায় বলেন, ‘‘মেয়েটির চিকিৎসা যথাসম্ভব করা হচ্ছে। কিন্তু খারাপ লাগছে যে, এই অবস্থায় মেয়েটির বাড়ির লোক কাছে নেই।’’
ওই দুর্ঘটনাতেই জখম হয়েছেন আর এক যুবক অভিজিৎ ভৌমিক। মাথা, পেলভিস, ফিমার বোন-সহ একাধিক হাড়ে চিড় নিয়ে ওই বেসরকারি হাসপাতালেই ভর্তি তিনি। হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা অভিজিৎ ও তাঁর এক বন্ধু বিশাল ভট্টাচার্য পড়াশোনার জন্য বাঘা যতীনের একটি মেসে থাকেন। অভিজিৎ একটি বেসরকারি ইনস্টিটিউটে ফিজিওথেরাপির কোর্স করছেন। পুলিশ জানায়, বুধবার দুর্ঘটনার সময়ে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচিল লাগোয়া ওই জায়গায় প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। বিশাল জানান, তিনি ও অভিজিৎ সেখানে নিখরচার ওয়াই-ফাই দিয়ে সিনেমা ডাউনলোড করছিলেন। কানে হেডফোন থাকায় পাঁচিল ভেঙে পড়ার আওয়াজ তাই ভাল ভাবে তাঁরা শুনতে পাননি। ওঁদের দু’জনের আশপাশে তখন আরও অনেকেই ছিলেন। আচমকা পিছন থেকে গাছ-সহ পাঁচিল ভেঙে পড়লে তাঁরা অনেকই চাপা পড়ে যান। পরে পুলিশ তাঁদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বিশালের চোট কম থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছাড়া হয়। অভিজিৎকে ভর্তি করতে হয় আইসিইউ-তে। চিকিৎসেকরা জানিয়েছেন, বুধবারের দুর্ঘটনায় জখম তিন জনের মধ্যে দু’জন আপাতত আইসিইউ-তে রয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই তরুণীর তুলনায় অভিজিতের শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভাল। জ্ঞান রয়েছে। তবে অন্য বহু সমস্যা ধরা পড়ায় আইসিইউ-তেই রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আলিপুরদুয়ার থেকে অভিজিতের দাদা-বৌদি শহরে আসেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, যাদবপুরে ওই দিনের দুর্ঘটনায় মোট সাত জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সুমিত দাস নামে এক যুবক বেসরকারি এই হাসপাতালেই ভর্তি আর সুব্রত সরকার নামে আর এক জখমকে সেখান থেকে পরে কম্যান্ড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।