পাথরের জোগানে জট, সঙ্কট ইস্ট-ওয়েস্টে

ফুলবাগান মোড় লাগোয়া এলাকায় কয়েক সপ্তাহ আগের মতো সিন্ডিকেটের ‘দুষ্কৃতী’দের বোমাবাজিতে ত্রাসের আবহ শুরু না হলেও সরঞ্জামের অভাবে কাজের গতি ঢিমে থেকে ঢিমেতর হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০১:৪৭
Share:

বন্ধ: থমকে গিয়েছে ফুলবাগানে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো স্টেশন তৈরির কাজ। সোমবার। ছবি: শৌভিক দে

মাসখানেক আগে মালমশলা সরবরাহ নিয়ে দু’টি সিন্ডিকেটের সংঘাতে কাজকর্ম লাটে উঠেছিল নির্মীয়মাণ ফুলবাগান স্টেশনে। এ বার নির্মাণকাজের মালমশলা সরবরাহই কার্যত থমকে গিয়েছে। ফলে, গোটা শহর জুড়েই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোরেলের কাজ নিয়ে ঘোর সঙ্কটের ছায়া।

Advertisement

এ বার জট পাকিয়েছে ‘ওভারলোডিং’-এর নিয়ম। সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের কড়াকড়িতেই নিয়ম ভেঙে বাড়তি পাথর ট্রাকে বোঝাই করে আনা যাচ্ছে না কলকাতায়। এর ফলে, নির্মাণকাজও বিঘ্নিত হচ্ছে। ফুলবাগান স্টেশন তথা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ লেগের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার প্রকল্প অধিকর্তা রূপক সরকারের অবশ্য দাবি, ‘‘শুধু ফুলবাগানে নয়, গোটা কলকাতাতেই নির্মাণকাজের পাথর খাদান বা ক্রাশার থেকে ট্রাকে করে ঢুকছে না। ফলে, নির্মাণকাজের একটা সমস্যা শহর জুড়েই দানা বাঁধছে।’’ এ বার ফুলবাগান মোড় লাগোয়া এলাকায় কয়েক সপ্তাহ আগের মতো সিন্ডিকেটের ‘দুষ্কৃতী’দের বোমাবাজিতে ত্রাসের আবহ শুরু না হলেও সরঞ্জামের অভাবে কাজের গতি ঢিমে থেকে ঢিমেতর হয়েছে।

কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশনের তরফে এক কর্তা সোমবার বলেন, ‘‘ফুলবাগান এলাকার মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমস্যাটি নিয়ে কথা হয়েছে।’’ তিনিও জানিয়েছেন, রামপুরহাট, নলহাটি বা ঝাড়খণ্ডের পাকুড়, পাচামির খাদান থেকে পাথরের জোগান রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছে। এই সব খাদান থেকে পাথর সাধারণত ক্রাশারে পাঠানো হয়। ক্রাশারে পেষাই করা পাথর নির্মাণকাজের দরকারে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া মাপের থেকে বাড়তি পাথর সরবরাহের প্রবণতা নিয়েই যত গোলযোগ। পুলিশের বক্তব্য, বাড়তি পাথর বোঝাই করে নিয়ে গেলে জাতীয় সড়কের ক্ষতি হয়। তাতে বাড়তি মাল ঠাসা ট্রাক-লরির দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু পাথর সরবরাহকারীরা সাধারণত, মুনাফার লোভে ট্রাকে বাড়তি পাথর বোঝাই করে সরবরাহ করেন বলেই অভিযোগ। পুলিশি কড়াকড়িতে এই ব্যাপক হারে পাথর সরবরাহে হাত পড়ায় ধাক্কা খেয়েছে পাথরের জোগান।

Advertisement

তবে মেট্রো নিগমের এক কর্তার দাবি, এই মুহূর্তে পাথরের জোগানের খামতিতে ফুলবাগানেই সমস্যা বেশি। কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, খাদানের পাথরের অভাবে কয়েকটি কংক্রিট প্ল্যান্ট থেকে বিটুমিন মিক্স বা কংক্রিটমাখা আমদানি করা চলছে। তাতে খানিক জোড়াতালি দিয়েই বেশির ভাগ জায়গায় কাজ হচ্ছে। সেটাও সম্ভব হচ্ছে না ফুলবাগানে। কারণ, ফুলবাগানে এখন স্টেশনের উপরের রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। ওই মেট্রোকর্তার কথায়, ‘‘রাস্তা তৈরির পাথর জমিয়ে রাখা যায় না। দিনের দিন তা আমদানি করতে হয়। সেই পাথর নেই, তাই কাজ মোটামুটি বন্ধই বলা যায়।’’ এ দিন দুপুরে ফুলবাগান স্টেশন-চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, কাজ চলছে ঢিমেতালে। জনৈক কর্মীর হতাশ মন্তব্য, যে ভাবে কাজ চলছে ২০২০-সালেও শেষ হবে কি না সন্দেহ। সিন্ডিকেট-জটে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ ধাক্কা খাওয়া নিয়ে আগে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। ফুলবাগানের ঠিকাদার সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘চার বছর আগে সব কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। বহুবার সময়সীমার মেয়াদ পার হয়েছে। আরও কত দিন লাগবে, মালমশলা সরঞ্জামে নিশ্চয়তা না-মিললে বলতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন