নন্দনে সিনেমা দেখে অ্যাকাডেমির সামনে এসে থমকে গিয়েছিলেন ইংরাজির অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী। জমাট বাঁধা প্রতিবাদী ভিড়। মিশে গেলেন সেই ভিড়ে। দেখা হল বন্ধু, চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। দু’জনে দাঁড়িয়ে শুনলেন বক্তার উচ্চকন্ঠ।
বেরনোর মুখে সুকান্তবাবু প্রশ্ন করে গেলেন, ‘‘এর পরে কি কোনও কথা বলার আগে আমাদের ভাবতে হবে? কোনও কাজ করার আগে মেপে করতে হবে? সুস্থ নাগরিক জীবনের সংজ্ঞা কি বদলে যাবে?’’
অ্যাকাডেমিতে হুসেনের চিত্র প্রদর্শনীর ফাঁকে দেখানো হচ্ছিল চিত্রকর সনাতন দিন্দার তোলা ভিডিও। গণেশ টকিজ-এ ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ সেতুর প্রেক্ষাপটে তোলা সেই ভিডিও গত মঙ্গলবার বন্ধ করে দিতে চায় পুলিশ। প্রতিবাদ তা নিয়েই। শুক্রবার বিকেলে সে জন্য জড়ো হয়েছিলেন অনেকেই। সেই ভিড়ের সামনে এসে থমকে যান সুকান্তবাবু। বলেন, ‘‘শিল্পীর স্বাধীনতা, নাগরিকের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।’’ সঞ্জয়বাবুর কথায়, ‘‘এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা?’’
সামিল ছিলেন চিত্রকর সর্বাণী দাশগুপ্তও। প্রদর্শনীর শুরুর দিন, গত শনিবার তিনি এসে ভিডিও দেখে গিয়েছিলেন। তার পরের ঘটনা পরম্পরা দেখে তাঁর কথায়, ‘‘এখনও যদি দৌড়ে না আসি, তা হলে কবে আসব? নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। নয়তো আরও দুঃখ আছে কপালে।’’
সনাতন নিজে ছিলেন সেখানে। ছিলেন অন্য অনেক চিত্রকর ও শিল্পরসিকেরা। দেখা যায়, অ্যাকাডেমির গেটে ঝুলছে তৃণমূল কর্মী ইউনিয়নের পতাকা।
অ্যাকাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি স্বপ্নেশ চৌধুরী জানান, বহুবার বলা সত্ত্বেও ওই পতাকা সরানো হয়নি। পালাবাদলের পরে অ্যাকাডেমির তৃণমূল কর্মী ইউনিয়নের দাপটের কথা স্বীকার করে নিয়ে কমিটির অন্য সদস্যেরা জানিয়েছেন, কার্যত সমস্ত সিদ্ধান্ত এখন ইউনিয়নই নিতে চায়। এমনকী কারা অ্যাকাডেমিতে নাটক করবে, তা-ও বকলমে ঠিক করতে চান নেতারা। এ নিয়ে কমিটির সঙ্গে নিত্য দিনের বিরোধ। ইউনিয়নের নেতারা অবশ্য কোনও অভিযোগই মানতে চাননি।