আগুন নেভানোর চেষ্টা।—নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদন আর ময়দান স্টেশনের মধ্যে দমদমগামী মেট্রোয় আগুন লেগেছিল। ভয় আর আতঙ্কে নরক-যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন যাত্রীরা। তার তিন দিনের মাথায়, রবিবার ঘটনাস্থলে গেলেন কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটির আধিকারিকেরা। খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার পাশাপাশি ঘটনার পুনর্নির্মাণও করেন তাঁরা। পরে দমকলের তদন্তকারী দলও ময়দান স্টেশনে গিয়ে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খুঁটিয়ে দেখে।
মেট্রো সূত্রের খবর, ইস্টার্ন সার্কলের রেলওয়ে সেফটি কমিশনার মহম্মদ লতিফ খানের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল এ দিন মেট্রো পরিষেবা শুরুর প্রায় দু’ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা নাগাদ কবি সুভাষ স্টেশনে পৌঁছয়। সেখান থেকে একটি এসি রেকে চেপে তাঁরা আসেন ময়দানে। ময়দানের স্টেশন সুপার-সহ অন্য আধিকারিকদের উপস্থিতিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঘটনার সময়ে আপ লাইনের যেখানে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে পড়েছিল, সেখানে গিয়ে লাইনে নেমে খুঁটিয়ে চারপাশ পরীক্ষা করেন রেলের আধিকারিকেরা। কী ভাবে এবং কোন পরিস্থিতিতে কামরায় ধোঁয়া ঢুকেছিল, তা-ও সরেজমিন খতিয়ে দেখা হয়। প্রায় দু’ঘণ্টা ময়দানে কাটিয়ে সকাল ১০টা নাগাদ তদন্তকারী দলের সদস্যেরা নোয়াপাড়া কারশেডের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে গিয়ে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রেকটি পরীক্ষা করেন তাঁরা। পুড়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় নমুনাও সংগ্রহ করেন।
বৃহস্পতিবার ময়দানে অগ্নিকাণ্ডের সময়ে মেট্রোর যে কর্মী-অফিসারেরা দায়িত্বে ছিলেন, এ দিন তাঁদেরও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। তবে কারও বয়ান নেওয়া হয়নি। আজ, সোমবার পার্ক স্ট্রিটে মেট্রো ভবনে অগ্নিদগ্ধ মেট্রোর চালক এবং গার্ড ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সব কর্মীকে সকাল ১০টার মধ্যে হাজির হতে বলা হয়েছে। ঘটনার সময়ে কে, কোথায়, কোন দায়িত্ব পালন করছিলেন তা জানতে চেয়েছেন রেলওয়ে সেফটি কমিশনার। রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঘটনার অব্যবহিত পরে কার, কী ভূমিকা ছিল তা পুঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ে দেখে নথিভুক্ত করা হবে। স্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটে়জ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি মেট্রোকর্মীদের থেকে ঘটনার বয়ানও নেওয়া হবে।’’
এ ছাড়া, প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীদের বয়ানও নথিভুক্ত করবে তদন্তকারী দল। লিখিত ভাবে অথবা ডাকযোগে সরাসরি কমিশনকে ঘটনা সম্পর্কে তথ্য জানানোর সুযোগও থাকছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করে তার পরেই রিপোর্ট দেবেন রেলওয়ে সেফটি কমিশনার।
এ দিন রেলের তদন্তকারী দলের সদস্যেরা ময়দান স্টেশন ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে সেখানে পৌঁছয় দমকলের চার সদস্যের তদন্তকারী দল। তারা এ দিন থেকেই কাজ শুরু করেছে। অগ্নি-সুরক্ষা ছাড়াও যাত্রিসুরক্ষাও দেখবেন তাঁরা। এ দিন ওই দলের সদস্যেরা স্টেশনের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও প্যানেল অপারেটরের ঘর এবং পরে স্টেশন সুপারের ঘরে যান তাঁরা। স্টেশনে জলের উৎস, অগ্নি-নির্বাপক কী কী রয়েছে, সেগুলির মেয়াদ কত দিন— সে সবও পরীক্ষা করা হয় বলে সূত্রের খবর।