সিটি মার্টের অগ্নিকাণ্ডে অন্তর্ঘাত দেখছেন মন্ত্রী

কোনও আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়, ‘সিটি মার্ট’-এর অগ্নিকাণ্ডকে অন্তর্ঘাত বলে দাবি করলেন খোদ দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। সোমবার নবান্নে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আগুন লাগানো না হলে, এত অল্প সময়ে তা এত বড় আকার নিত না। তাই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।’’ তবে অন্তর্ঘাতের প্রমাণ না মিললেও প্রাথমিক তদন্তে দমকল আধিকারিকেরা দোকানে কোনও রকম অগ্নি-নির্বাপণের ব্যবস্থা দেখতে পাননি। তারই ভিত্তিতে সোমবার রাতে দোকানের মালিক জন মেন্টসের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৬
Share:

সিটি মার্টে তদন্তে পুলিশ ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। সোমবার।— নিজস্ব চিত্র।

কোনও আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়, ‘সিটি মার্ট’-এর অগ্নিকাণ্ডকে অন্তর্ঘাত বলে দাবি করলেন খোদ দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। সোমবার নবান্নে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আগুন লাগানো না হলে, এত অল্প সময়ে তা এত বড় আকার নিত না। তাই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।’’ তবে অন্তর্ঘাতের প্রমাণ না মিললেও প্রাথমিক তদন্তে দমকল আধিকারিকেরা দোকানে কোনও রকম অগ্নি-নির্বাপণের ব্যবস্থা দেখতে পাননি। তারই ভিত্তিতে সোমবার রাতে দোকানের মালিক জন মেন্টসের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

Advertisement

মন্ত্রী এ দিন অন্তর্ঘাতের যে দাবি তুলেছেন, তা নিয়ে তাঁর যুক্তি, ‘‘সিটি মার্ট-এর বিল্ডিংটি হেরিটেজ। এটিকে ‘ডি-হেরিটেজ’ করতে পারলেই ভাঙা যাবে এবং নতুন করে তৈরি করা সম্ভব হবে। কারণ তখন সেটি আর ‘হেরিটেজ’ থাকবে না। যেমন খুশি আয়তনে বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। তার জন্যই এই আগুন লাগানো হয়েছে।’’

সোমবার খোদ দমকলমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। পাশাপাশি, বিতর্ক তৈরি হয়েছে আগুন লাগার সময় নিয়েও। এক দিকে মালিক বলছেন আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে খবর গিয়েছে দমকলে। অন্য দিকে কর্মীরাই জানাচ্ছেন, আগুন লেগেছে দোকান খোলার আগে।

Advertisement

রবিবার দমকল জানিয়েছিল বেলা ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ তাঁদের কাছে সিটি মার্ট থেকে ফোন করে আগুনের খবর দেওয়া হয়। কিন্তু ঘটনার দিনই বিকেলে বিদায়ী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আগুন লেগেছে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পৌনে এগারোটার মধ্যে। শোভনবাবুর বক্তব্য, এ কথা তিনি জেনেছেন দোকানের কর্মীদের থেকেই। শুধু মেয়র নন, দমকলমন্ত্রীর কাছেও খবর, আগুন লেগেছিল ১১টার আগেই। মেয়র আরও জানিয়েছেন, দমকলে খবর দেওয়ার আগে দোকানের কর্মীরাই এগিয়ে যান আগুন নেভাতে। কিন্তু আয়ত্তে না আনতে পেরে অবশেষে দমকলে জানান।

অথচ মালিক জন মেন্টসের দাবি, দোকানে ১১টার আগে কোনও কর্মী থাকেন না। ফলে তার আগে আগুন লাগলেও কারও জানার কথা নয়। আগুন লেগেছিল বেলা ১১টা ৫০-এর কাছাকাছি সময়ে। জন মেন্টস জানিয়েছেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে বেলা ১১টা ৪৯ নাগাদ খবর দেওয়া হয় দোকান থেকে। তখনই জানানো হয়, দমকলে খবর দেওয়া হয়েছে। তবে কর্মীদের বক্তব্য, রোজই তাঁদের পৌঁছতে হয় সকাল দশটা-সাড়ে দশটার মধ্যে। ক্রেতাদের জন্য অবশ্য দোকােনর দরজা খোলে বেলা এগারোটায়।

বিতর্ক বেড়েছে দমকল দফতরের প্রতিক্রিয়া থেকেও। দমকল সূত্রের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের সদর দফতর মাত্র ৩-৪ মিনিটের পথ। খুব দেরি হলেও খবর পাওয়ার দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছয় তারা। দমকলের বিস্ময়, দশ মিনিটে দু’টি তলা অতটা আগুনের গ্রাসে চলে যায় কী করে! রবিবারই এক দমকল কর্তা সাফ জানান, অতটুকু সময়ে অত ধোঁয়া হওয়া সম্ভব নয়।

মালিক, কর্মচারী, দমকলকর্মীদের পরস্পর বিরোধী এই সব কথাই আরও ধোঁয়াশা তৈরি করেছে ‘সিটি মার্টে’ আগুন লাগার সময় নিয়ে। আর তাতেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে দমকলমন্ত্রীর দাবিও। আগুনের কারণ কী, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সোমবার সকালে ফের ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকলের আধিকারিকেরা। যান নিউ মার্কেট থানার অফিসারেরাও। পরে বিকেল ৪টে ২০ মিনিট নাগাদ পৌঁছয় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের একটি দল। তাঁরাও ওই দোকানের পুড়ে যাওয়া জায়গাগুলি পরিদর্শন করেন এবং নমুনা সংগ্রহ করেন। নমুনা সংগ্রহের পরে এক কর্তা জানান, ওই দোকানের কোনও জায়গাতেই অগ্নি-নির্বাপণের ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। এমনকী, ছিল না ‘স্মোক অ্যালার্ম’, ‘স্প্রিঙ্কলার’-এর মতো সামান্য সরঞ্জামও। অথচ পুরো চারতলা জুড়েই ভর্তি ছিল দাহ্য বস্তু। ছিল জামাকাপড়, চামড়ার ব্যাগ, জুতো থেকে শুরু করে প্লাইউডের নানা রকমের জিনিসপত্র।

সোমবার সকালেও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দমকলের দু’টি ইঞ্জিন দোকানের চারতলায় ধিকধিক করে জ্বলা আগুন নেভানোর কাজ করছে। পরে রাত পর্যন্ত একটি ইঞ্জিন ওই বিল্ডিংটি ঠান্ডা করার কাজ করে গিয়েছে। নবান্নে দমকলমন্ত্রী জানান, দমকল অফিসারেরা এ দিন সিটি মার্টের ওই দগ্ধ বাড়িটিতে সরেজমিন তদন্ত করেছেন। তিনতলা এবং চারতলায় যে গুদাম করা হয়েছিল, তার কোনও লাইসেন্স ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ দিকে এ দিন সন্ধ্যায় দোকানের এক ম্যানেজারের নির্দেশে এক কর্মচারীকে বেশ কিছু অর্ধদগ্ধ ফাইল নিয়ে বেরোতে দেখা যায়। প্রহরারত পুলিশকর্মীরা তা দেখেই সেগুলি কেড়ে নিয়ে নেন। কিন্তু কেন পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে তিনি ফাইল সরাচ্ছিলেন? এ বিষয়ে মালিক কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন