noise pollution

Kali Puja 2021: রয়েছে শব্দ-জব্দের ‘ওষুধ’, তবু ব্যবহার হয় না রাজ্যে

ভুক্তভোগীদের দাবি, কালীপুজোর দু’দিন আগে থেকেই উদ্বোধনের নামে ‘সাউন্ড বক্স’ বাজানো শুরু হয়ে যায় পাড়ায় পাড়ায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রযুক্তি রয়েছে। রয়েছে উৎপাদন। সেই প্রযুক্তি ব্যবহার না করে বিধি-ভঙ্গের শরিক হলে রয়েছে কড়া শাস্তির ব্যবস্থাও। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাইক্রোফোন, লাউড স্পিকার বা ডিজে-র উৎপাত রুখতে ‘সাউন্ড লিমিটর’ লাগানোর প্রযুক্তি যে ব্যবহার করা হয় না, তা ফের প্রমাণ হল আরও একটি কালীপুজোয়। বাজির পাশাপাশি পর পর দু’দিন তারস্বরে বাজতে থাকা শব্দযন্ত্রের যে তাণ্ডব শহর জুড়ে দেখা গেল, তা ফের প্রশ্ন তুলে দিল, বাধ্যতামূলক ভাবে সাউন্ড লিমিটর লাগানোর বিধি বলবৎ করা নিয়ে কি আদৌ কোনও সদিচ্ছা আছে প্রশাসনের? পুলিশই বা এ নিয়ে এত নিষ্প্রভ কেন?

Advertisement

ভুক্তভোগীদের দাবি, কালীপুজোর দু’দিন আগে থেকেই উদ্বোধনের নামে ‘সাউন্ড বক্স’ বাজানো শুরু হয়ে যায় পাড়ায় পাড়ায়। রাত পর্যন্ত তারস্বরে বাজতে থাকায় যা বহু জায়গাতেই গৃহস্থের ঘুম ছুটিয়েছে। পুজোর দু’দিন এই সব লাউড স্পিকারেই আবার দেদার বেজেছে চটুল গান। জলসা বন্ধ থাকলেও এমন শব্দ-তাণ্ডবে কার্যত দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বয়স্কদের জন্য। অনেকেরই অভিযোগ, এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের হেল্পলাইন নম্বর বা থানায় বার বার ফোন করেও সুরাহা হয়নি। জানবাজারের এক বয়স্ক দম্পতির অভিযোগ, ‘‘উল্টে থানা থেকে খবর পেয়ে এলাকার কয়েক জন বাড়ি এসে শাসিয়ে গিয়েছেন, পাড়ায় থাকতে হলে কয়েক দিন একটু মানিয়ে-গুছিয়ে নিতে হবে।’’

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, শহরের বহু জায়গাতেই নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে উচ্চস্বরে শব্দ-যন্ত্র বেজেছে। শিল্পাঞ্চলে শব্দের নির্ধারিত মাত্রা দিনে ৭৫ এবং রাতে ৭০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ এবং রাতে ৫৫ ডেসিবেলের মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু এই দুই ধরনের জায়গাতেই পুজোর দু’দিন শব্দের মাত্রা ছিল অনেক বেশি। বসতি এলাকায় যেখানে দিনে ৫৫ এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল-এর মধ্যে শব্দমাত্রা থাকার কথা, সেখানে তা ছিল দিনে গড়ে ৬৮ এবং রাতে প্রায় ৭০ ডেসিবেলের কাছাকাছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৯০ ডেসিবেলের মাত্রাও ছাপিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এসএসকেএম বা আর জি করের মতো সাইলেন্স জ়োনের কাছেও ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবেলের শব্দমাত্রা পাওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, নব্বইয়ের দশকের পুজোর মরসুম থেকেই শব্দদূষণের মাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এই আওয়াজ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পরিবেশ আদালত বলে দেয়, উৎসে গিয়ে একে নির্মূল করতে সমস্ত ধরনের শব্দ-যন্ত্র তৈরির সময়েই (ইন-বিল্ট) সাউন্ড লিমিটর লাগানোর ব্যবস্থা করা হোক। সেই প্রেক্ষিতেই ২০০৪ সালে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’ (ওয়েবেল)-এর সহযোগিতায় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সাউন্ড লিমিটর তৈরি করে। ওই বছরই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ‘রাজ্যের সব মাইক্রোফোন ব্যবহারকারীকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, খোলা জায়গায় মাইক্রোফোন চালাতে হলে বাধ্যতামূলক ভাবে সাউন্ড লিমিটর লাগাতে হবে। না হলে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।’ এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ১৯৮৬-র ১৫ নম্বর ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৬৮/২৯০/২৯১ ধারা অনুযায়ী এটি না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধের মধ্যেও ফেলা হয়। কিন্তু ধারা থাকলেও বাস্তবে সবই শুধুমাত্র খাতায়-কলমে রয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। একটি সূত্রের আবার দাবি, এ রাজ্যে তৈরি হওয়া সাউন্ড লিমিটর যেখানে কিনে নিয়ে যায় অন্য রাজ্য, সেখানে এখানকার পুজোর আগে এমন যন্ত্র বিক্রি হয় মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার পদমর্যাদার এক শীর্ষ কর্তার যদিও দাবি, ‘‘এ বার পুজোর শুরুতেই সাউন্ড বক্সের দৌরাত্ম্য আটকাতে থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো কাজও করা হয়েছে। এর পরেও অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখা হবে।’’ একের পর এক বেপরোয়া উৎসব-যাপন চলতে থাকলেও পুলিশ-প্রশাসনের এই যুক্তি বদলায় না কেন? এ প্রশ্নের অবশ্য স্পষ্ট উত্তর মেলেনি কোনও মহল থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন