নিরুত্তাপ কিশোর খুনি, বিস্মিত পুলিশ

পুলিশ বলছে, শুধু ওই কিশোরই নয়, খুনে মূল অভিযুক্ত সদ্য তরুণ শম্ভু কয়ালের মনোভাবও অবাক করেছে তদন্তকারীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০৩:২৮
Share:

ধৃত: শম্ভু কয়াল। —নিজস্ব চিত্র।

দুপুরবেলায় খুনের সময়ে পা চেপে ধরেছিল বছর সতেরোর কিশোর। শনিবার সন্ধ্যায় সেই খুনের খবরই টিভিতে তারিয়ে তারিয়ে দেখেছে সে। এমনকি, রবিবার বিকেলে এলাকার মাঠে দিব্যি হাওয়া খেতেও বেরিয়েছিল ওই কিশোর। সেখান থেকেই তাকে পাক়ড়াও করেন তদন্তকারীরা। জেরার সময়েও দিব্যি ভাবলেশহীন দেখিয়েছে কসবায় শীলা চৌধুরী খুনে অভিযুক্ত ওই কিশোরকে। তার সম্পর্কে এক তদন্তকারী অফিসার বলছেন, ‘‘যত দেখছি, ততই অবাক হচ্ছি!’’

Advertisement

পুলিশ বলছে, শুধু ওই কিশোরই নয়, খুনে মূল অভিযুক্ত সদ্য তরুণ শম্ভু কয়ালের মনোভাবও অবাক করেছে তদন্তকারীদের। শুরু থেকেই সে বিভ্রান্ত করেছিল গোয়েন্দাদের। ধরা পড়ার পরে ঘটনার পুনর্নির্মাণের সময়েও তার মনোভাব তাজ্জব করেছে দুঁদে পুলিশকর্তাদের। এক পুলিশকর্তা বলছেন, একাধিক খুনের আসামিকে জেরা করেছেন তিনি। বেশির ভাগ সময়েই দেখেছেন, জেরায় ভেঙে পড়ে কেউ খুনের জন্য অনুতাপ করেছে, কেউ আবার কেঁদে ফেলেছে। কিন্তু শম্ভু? ‘‘একটা পাশবালিশ দিয়ে শীলাদেবীকে খুনের পুনর্নির্মাণ করতে বলা হয়েছিল। ওর আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল, যেন শীলাদেবীকেই দ্বিতীয় বার খুন করছে ও,’’ বলেন ওই পুলিশকর্তা। লালবাজারের একটি সূত্র বলছে, জেরার সময়ে কপালে দু’-এক ফোঁটা ঘাম ছাড়া কোনও ফারাক নজরে আসেনি। দাগি খুনিদেরও এমন হয় না।

এ প্রসঙ্গে অনেকেই দাগি অপরাধী সজল বারুইয়ের কথা বলছেন। ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে দমদমে বাবা, সৎ মা, সৎ ভাইকে খুন করার পরে সেখানে বসেই বন্ধুদের নিয়ে মিষ্টি ও মদ খেয়েছিল সে। পরে বন্ধুদের দিয়ে নিজেকে বেঁধে তদন্তের মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সজল। পরে জেল থেকেও পালায় সে। ফের নাম ভাঁড়িয়ে অপরাধ করে ধরা পড়েছিল।

Advertisement

পুলিশেরই একাংশ বলছে, দু’জনেরই এটি প্রথম বড় ধরনের অপরাধ। এক জন পরিচিত মহিলাকে এ ভাবে খুন করার পরেও ভাবলেশহীন মুখে বিবরণ দিয়েছে শম্ভু। তার শাগরেদ অবশ্য প্রথমে পুলিশের উপরেই তড়পাতে শুরু করে। বয়ান দেওয়া নিয়েও নানা ভাবে বিভ্রান্ত করেছে।

মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেলের মতে, এ ধরনের ছেলেমেয়েরা আসলে ‘লো-অটোনমিক অ্যারাউজ়ার’-এর শিকার। কোনও অবস্থাতেই এদের শারীরিক পরিবর্তন হয় না। তাই খুন বা বড় ধরনের অপরাধের পরেও এদের রক্তচাপ বাড়া কিংবা হৃৎস্পন্দন বাড়ার লক্ষণ দেখা যায় না। এদের জন্ম থেকে শারীরিক গঠনটাই এমন হওয়ায় অপরাধ করতে অসুবিধা হয় না।

তবে এর পিছনে পরিবেশগত বেড়ে ওঠাও অনেক সময়ে কাজ করে বলে মনে করছেন মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম। তাঁর কথায়, ‘‘বহু ছেলেমেয়ে ছোট থেকে বঞ্চনার পরিবেশে বড় হতে হতে নির্বিকার হয়ে যায়। এদের মধ্যে অনুভূতি, সহানুভূতি কিংবা সহমর্মিতা তৈরি হয় না। কোনও কিছু হারানোর ভয়ও থাকে না এদের। ফলে খুন করে যে জেলে যেতে হবে, তা নিয়েও চিন্তিত নয় এরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন