Earth Day

বাজকা-বসন্তবৌরীর সঙ্গে পরিচয়, পাখি চিনতে হাঁটল ছোটরা

সোমবার আন্তর্জাতিক পৃথিবী দিবস। সেই উপলক্ষে দেশের আটটি শহরে ছোটদের জন্য পাখি চিনতে শেখার কর্মশালার আয়োজন করে বেঙ্গালুরুর একটি পাখি দেখিয়ে সংগঠন ‘আর্লি বার্ড’।

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৬
Share:

রবীন্দ্র সরোবরে চলছে পাখি দেখা। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

দূরবীনের সাহায্যে রবীন্দ্র সরোবরে নীলকণ্ঠ বসন্তবৌরী, কুবো পাখির সঙ্গে প্রথম পরিচয়ে উত্তেজিত কেউ কেউ। কেউ টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে দূরের দ্বীপে বসে থাকা সোনাজঙ্ঘা, শামুকখোল, বাজকা, সাদা-বুক মাছরাঙার ডানা ঝাপটানো দেখেই আহ্লাদে আটখানা। কারও আবার বেশি মজা লেগেছে খাতা-পেন নিয়ে কাল্পনিক পাখি আঁকতে। ‘আন্তর্জাতিক পৃথিবী দিবস’ উপলক্ষে রবিবারের সকালে পাখি চেনার পাঠ নিতে আসা ১৪ জন খুদে জানাচ্ছে, পাখিদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার এই অভিজ্ঞতা চেটেপুটে উপভোগ করেছে তারা।

Advertisement

আজ, সোমবার আন্তর্জাতিক পৃথিবী দিবস। সেই উপলক্ষে দেশের আটটি শহরে ছোটদের জন্য পাখি চিনতে শেখার কর্মশালার আয়োজন করে বেঙ্গালুরুর একটি পাখি দেখিয়ে সংগঠন ‘আর্লি বার্ড’। কলকাতা-সহ নয়াদিল্লি, সালেম, শ্রীনগর, মাইসুরু, আগরতলা, তিরুপতি এবং পানজিমে রবিবার একযোগে ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সিদের জন্য পাখি দেখার ওয়াকের আয়োজন করে তারা। তাদের যোগ্য সঙ্গত করেছে এ রাজ্যের পাখি দেখিয়ে সংগঠন ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’। তারই অংশ ছিল রবীন্দ্র সরোবরে পাখি দেখার জন্য হাঁটা। ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র সদস্য তিতাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রকৃতির সঙ্গে ছোটদের পরিচয় করানোর অন্যতম পথ হল ওদের পাখি দেখতে শেখানো। কারণ, আন্টার্কটিকা থেকে কালাহারি মরুভূমি— সর্বত্রই পাখির দেখা মেলে। পাখিদের মাধ্যমে ছোটরা আশপাশের হ্যাবিটাটকেও (বাসস্থান) চিনবে। কী ভাবে নগরায়ণের ফলে সেই বাসস্থান নষ্ট হচ্ছে, তাও বুঝতে পারবে।’’ তাই শুধু পাখি চেনানোই নয়, পাখিদের আচার-ব্যবহার, বাসস্থান সম্পর্কেও খেলাচ্ছলে ছোটদের শেখানোর চেষ্টা করলেন তিতাস ও তাঁর সঙ্গীরা। ফ্ল্যাশ কার্ড, কাল্পনিক পাখি আঁকা, প্রশ্নোত্তর-পর্বের মাধ্যমে পাখি নিয়ে খুদেদের আগ্রহ আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিলেন তাঁরা।

যেমন, পাখি চেনার আগ্রহই সাউথ পয়েন্টের ছাত্র, সন্তোষপুরের ১১ বছরের অভিজ্ঞান আইচকে টেনে এনেছিল এ দিনের ওয়াকে। সে জানাল, বাড়ির ছাদে সে চাল ছড়িয়ে দিলে অনেক পাখি তা খেতে আসে। মায়ের হাত ধরে সেই সব পাখির সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয়টুকু রয়েছে তার। তবে এ দিন অনেক অচেনা পাখি দেখে উত্তেজিত অভিজ্ঞান। উড়ন্ত ডাইনোসর অথবা ডানায় নখরযুক্ত পাখি আদৌ হয় কি না— সেই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত অভিজ্ঞান ও তার নতুন বন্ধুরা। তারাই আবার রীতিমতো অবাক ডানায় নখরওয়ালা, আমাজ়ন জঙ্গলের পাখি হোয়াটজ়িনের কথা জেনে।

Advertisement

সল্টলেকের ভারতীয় বিদ্যাভবনের ছাত্র আর্য কুণ্ডুরও পাখিদের সঙ্গে প্রথম আলাপ বাবার হাত ধরে। পড়াশোনা সামলে রোজ রোজ পাখি দেখতে যাওয়া হয় না তার। এ দিন অবশ্য গরমকে উপেক্ষা করে, ভোর ভোর নাগেরবাজার থেকে সে রবীন্দ্র সরোবরে এসে হাজির। আর্য বলছে, ‘‘এসেই ব্যাগে থাকা দূরবিন নিয়ে একটা রেখা বসন্ত (লেনিয়েটেড বারবেট) দেখেছি। একটা ছোট বসন্তবৌরী (কপারস্মিথ বারবেট) ভাল করে দেখতে না দেখতেই উড়ে গেল।’’ এ দিন সরোবর চত্বরে পরিযায়ী বর্ণালী পাখি (ইন্ডিয়ান পিট্টা) ঘুরঘুর করলেও খুদেদের চোখে ধরা দেয়নি সে। তবে তাতে দুঃখ নেই সাউথ পয়েন্টের ষষ্ঠ শ্রেণির ঐশিক দাশগুপ্তের। সে বলছে, ‘‘বাবার সঙ্গে সুভাষ সরোবর, রবীন্দ্র সরোবরে পাখি দেখতে এসেছি আগেও। তবে আজ বেশি মজার লেগেছে কাল্পনিক পাখি আঁকার খেলাটা। আমার আঁকা পাখিটার নাম দিয়েছি ‘ম্যাড আই বার্ড’!’’

এ দিনের ওয়াকে পাখি চেনাতে ছোটদের সঙ্গে হাঁটছিলেন ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র সদস্য, মেজর ভারতেন্দ্র পারিহার। সরোবর চত্বরে পেঁচা খোঁজার ফাঁকে বললেন, ‘‘ছোটরা সবচেয়ে তাড়াতাড়ি শেখে। তাই আমরা চাই, ওরা আগে পাখিদের জানুক, বুঝুক। তার পরে বড় হয়ে পাখির ছবি তোলা বা পাখি নিয়ে গবেষণা— যা খুশি করতে পারবে। পাখিদের জগতে আরও বেশি সময় কাটালে শুধু চোখ নয়, কান দিয়েও পাখি চিনতে শিখবে। কোন পরিবেশে কোন ধরনের পাখি দেখা যেতে পারে, তারও ধারণা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন