রাস্তার দায় একা পুরসভার নয়, খোঁচা দিলেন শোভন

রাস্তার হালের কথা বলতে গিয়ে নিজের দলের সরকারেরই একাধিক সংস্থার দিকে আঙুল তুললেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বুধবার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাটগাছিয়ায় একটি মডেল বস্তির শিলান্যাস করেন মেয়র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪২
Share:

রাস্তার হালের কথা বলতে গিয়ে নিজের দলের সরকারেরই একাধিক সংস্থার দিকে আঙুল তুললেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বুধবার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাটগাছিয়ায় একটি মডেল বস্তির শিলান্যাস করেন মেয়র। সেখানেই শোভনবাবু সংবাদমাধ্যমের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “ওরা রাস্তা খারাপ নিয়ে খবর করে। এমন ভাবে বলে যেন সব রাস্তাই পুরসভার। কিন্তু তা তো নয়, সব এজেন্সির রাস্তাই রয়েছে। কেএমডিএ, কেইআইপি, সেচ দফতরেরও রয়েছে।” অনুষ্ঠান মঞ্চের পাশেই ইএম বাইপাস দেখিয়ে জানিয়ে দেন, ওই রাস্তা তো দেখে কেএমডিএ। অন্য সংস্থার রাস্তা খারাপ থাকলে তার দায়ও যে পুরসভার উপরে পড়ে, তা বোঝাতে ভোলেননি মেয়র। প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, অন্য সংস্থার দায়িত্বে থাকা রাস্তার হালও খারাপ থাকে, যা পুরসভার দায় নয়।

Advertisement

মেয়রের কথা শুনে সেচ দফতরের এক কর্তা বলেন, “এমন কথা মেয়র কেন বলেছেন জানি না। যত দূর জানি, শহরের রাস্তা সেচ দফতরের অধীনে নেই।” আর কেইআইপি তো কলকাতা পুরসভার অধীনেই রয়েছে। আর কেএমডিএ-র রাস্তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠলে তার দায় যে মেয়রের ঘাড়েও পড়ে, তা জানাতে ভোলেননি কেএমডিএ-র একাধিক অফিসার। তাঁদের কথায়, “মেয়র নিজেও তো কেএমডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান।”

আসন্ন পুরভোটের দিকে নজর রেখে শহরের উন্নয়নে তৃণমূল বোর্ড যে খুব শীঘ্রই কোমর বেঁধে নামবে, তা জানাতে ভোলেননি মেয়র। তাঁর সভাস্থল ছিল শম্ভুনাথ কাওয়ের ওয়ার্ডে, যিনি খুনের মামলায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলবন্দি। অনুষ্ঠানের মঞ্চে মূলত নির্বাচনী বক্তৃতাই শোনা যায় মেয়রের মুখে। তিনি বলেন, “আগামী কয়েক মাসে কলকাতার উন্নয়নে আমরা ৪০০ কোটি টাকা খরচ করব।” তিনি জানান, ১৪৪ ওয়ার্ডে ঘুরে তিনি দেখেছেন কী কাজ বাকি রয়েছে। রাস্তা, নিকাশি, জল সরবরাহ থেকে বস্তি সব বিষয়েই জোর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Advertisement

তবে মেয়র যা-ই বলুন, পুরসভার ভাঁড়ারের অবস্থা খুবই খারাপ বলে পুরসভা সূত্রের খবর। পুরসভার এক পদস্থ কর্তার কথায়, “কীসের ভিত্তিতে মেয়র ওই কথা বলেছেন জানি না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ফিক্সড্‌ ডিপোজিট ভেঙে টাকা মেটাতে হচ্ছে।” পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১০ সালে বাম বোর্ড প্রায় ৪৫০ কোটি ফিক্সড্‌ ডিপোজিট রেখে গিয়েছিল। তার দুই-তৃতীয়াংশ খরচ হয়ে গিয়েছে। পুর-ভাণ্ডারের ওই অবস্থার পরও কী ভাবে ওই টাকা মিলবে, তা নিয়ে ধন্দে পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরেরাও।

হাটগাছিয়া থেকে ফিরে পুরভবনে বিভিন্ন দফতরের পদস্থ কর্তাদের নিয়ে এক বৈঠকও করেন মেয়র। সূত্রের খবর, জল সরবরাহ, রাস্তা, নিকাশি, কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন-সহ পুরসভার প্রতিটি দফতরে যেখানে যা কাজ বাকি রয়েছে, ভোটের আগেই তা শেষ করার নির্দেশ তিনি। এবং এর জন্য কত টাকা লাগবে, তা-ও জানাতে বলেন বিভাগীয় কর্তাদের। মেয়রের নির্দেশে প্রতিটি দফতর তাঁদের চাহিদার কথা মেয়রকে জানিয়েছেন। তবে কবে সেই টাকা মিলবে, তা জানানো হয়নি বলে একাধিক অফিসার জানিয়েছেন।

পুরসভা সূত্রের খবর, হাটগাছিয়ায় একটি মডেল বস্তি করতে চায় তৃণমূল বোর্ড। শহরের অন্যতম বড় ওয়ার্ড ৫৮। বস্তির সংখ্যাও বেশি। সে কারণেই ওই এলাকার দিকে নজর দিয়েছে পুরসভা। মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার জানান, এখানে ৩৫ বিঘা এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার পরিবার থাকেন। সেখানে নিকাশি, জল সরবরাহ এবং রাস্তা ঘাটের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা হবে। থাকবে কমিউনিটি হল এবং জলাশয়ও। এটি হবে শহরের একমাত্র মডেল বস্তি। এর জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আগামী ৫ মাসের মধ্যে ওই বস্তি উন্নয়নের কাজ শেষ করা হবে স্বপনবাবু জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন