জলের সরবরাহ নিয়ে কাটেনি আশঙ্কা

কী ভাবে পাম্পিং স্টেশনে এত বড় বিপর্যয় হল, তার কারণ অনুসন্ধানের আগে আপাতত  জল সরবরাহ দ্রুত স্বাভাবিকের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৯
Share:

বিপর্যয়: এই পাম্প ফেটেই ব্যাহত হয় গার্ডেনরিচ পাম্পিং স্টেশনের জল সরবরাহ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

মেরামতির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। আরও বেশ কিছু দিন সময় লাগবে। তাই রবিবারের পরে আজ, সোমবারও বেহালা, মহেশতলা, পূজালি, গার্ডেনরিচ-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর। কী ভাবে পাম্পিং স্টেশনে এত বড় বিপর্যয় হল, তার কারণ অনুসন্ধানের আগে আপাতত জল সরবরাহ দ্রুত স্বাভাবিকের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকেরা।

Advertisement

শনিবার রাতে গার্ডেনরিচ পাম্পিং স্টেশনের এক নম্বর ফেজের একটি পাম্প অতর্কিতে ফেটে যাওয়ায় এক সময়ে প্রায় ৪০ ফুট জলের তলায় চলে যায় স্টেশনটি। শোধনের জন্য রাখা জলাধারের জল অনিয়ন্ত্রিত ভাবে পাম্পিং স্টেশনে ঢুকে পড়ে। উল্টোপথে ঢোকে পরিস্রুত জলও। তারই জেরে এ দিন জল সরবরাহ ব্যাহত হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকাল থেকে বেহালা, মহেশতলা, গার্ডেনরিচ-সহ একাধিক এলাকায় জলই আসেনি। বেলার দিকে পুরসভা জল দিলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। জলের চাপও ছিল কম। এমনিতে পাম্পিং স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের সময়ে আগের থেকে নোটিস দেওয়া হয়। ফলে সেইমতো জলের ব্যবস্থা করে রাখেন বাসিন্দারা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই সুযোগই ছিল না!

এই বিপর্যয়ের জেরে কলকাতা পুরসভার ১১৬, ১১৭, ১১৮, ১১৯, ১২০, ১২১, ১৩৪ এবং ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ড-সহ অনেক জায়গায় জলকষ্টের অভিযোগ উঠেছে। ১২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘এত বড় একটা বিপর্যয়, তার প্রভাব তো পড়বেই। বুস্টার পাম্পিং স্টেশন সংলগ্ন কয়েকটি ওয়ার্ডে জল দেওয়া গেলেও বেহালার বেশির ভাগ ওয়ার্ডই পর্যাপ্ত জল পায়নি।’’ ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অশোকা মণ্ডল বলেন, ‘‘সকাল থেকেই জল ছিল না এলাকায়।’’ মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস জানান, তাঁর এলাকায় অনেক দেরিতে জল গিয়েছে এ দিন। জলের চাপও কম ছিল।

Advertisement

পরিস্থিতি সামলাতে পুরসভা জলের গাড়ি পাঠায়। জল নেওয়ার জন্য রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায় বাসিন্দাদের মধ্যে। যদিও পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সকালে যতটা সময় ধরে জল দেওয়া হয়, ততটা সময় না দেওয়া হলেও মোটামুটি সব ওয়ার্ডই জল পেয়েছে। তবে বিকেলে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। অন্য স্টেশনগুলির পাম্প চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জল সরবরাহে গুরুতর প্রভাব পড়বে বলে যে আশঙ্কা ছিল, ততটাও সমস্যা হয়নি। সময়ের একটু এ দিক-ও দিক হলেও জল দেওয়া হয়েছে সব জায়গাতেই। নতুন পাম্প কেনাও হবে।’’

তবে কী ভাবে ওই পাম্প ফাটল, আপাতত তা-ই খতিয়ে দেখছেন পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা। বিস্ফোরণের জেরে পাম্পের যন্ত্রাংশ ছিটকে যাওয়ায় আরও বড় বিপদ হতে পারত বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। এমনিতে শনিবার রাত থেকে এ দিন পর্যন্ত ২০টি পাম্প চালিয়ে পাম্পিং স্টেশনের জল বার করে দেওয়া হয়েছে। আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ওই পাম্পটি বসানো হয়েছিল ১৯৮০ সাল নাগাদ। পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে ওই বিপর্যয় কি না, না কি অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এক পদস্থ পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘পলতা জলপ্রকল্পে ৫০ বছরের পুরনো পাম্পও চলছে। ফলে শুধু পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে, তেমনটা ভাবা ঠিক নয়। এটা নিছকই দুর্ঘটনা। গত ৪০ বছরের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি।’’ ছ’হাজার ভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন যে তিনটি মোটর জলের তলায় চলে গিয়েছিল, সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অন্য পাম্পিং স্টেশনের পাম্পগুলির অবস্থা কেমন, সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে পুর প্রশাসন সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন