শহরে পার্কিংয়ের হাল নিয়ে এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় চোখ কপালে উঠেছে পুর-কর্তৃপক্ষের। দেখা গিয়েছে, একটি ওয়ার্ডে ফি-পার্কিং জোন থেকে পুরসভা যতগুলি গাড়ি রাখার টাকা পায়, সেখানে রাখা হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি গাড়ি। অর্থাৎ, যে টাকা পুরসভা পাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি কামিয়ে নিচ্ছে পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা সংস্থা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘গত ৩০ বছর ধরে এমনটাই চলছে। এর ফলে কোটি কোটি টাকার উপরে লোকসান হয়েছে পুরসভার।’’ মেয়র আরও জানান, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফি-পার্কিং জোনে ১১৬৪টি গাড়ি রাখার জন্য টাকা পাচ্ছে পুরসভা। কিন্তু বাস্তবে সেখানে থাকছে ২৪৭৬টি গাড়ি। শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ডেই পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের গরমিল ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে। তার পরেই নড়ে বসে রাজ্য প্রশাসন। ওই সমীক্ষার সূত্র ধরেই শহরের পার্কিং ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো এবং আয় বাড়ানোর জন্য এ দিন নবান্নে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে মেয়র ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, পরিবহণসচিব, পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্য পুলিশের ডি়জি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘ফি-পার্কিং’ এলাকায় যে সংখ্যক গাড়ি রাখার কথা, ততগুলি গাড়িই রাখতে হবে। সে জন্য নতুন করে সব সংস্থার থেকে দরপত্র চাওয়া হবে। নিয়মানুযায়ী, যে সংস্থার কাছ থেকে পুরসভা সব চেয়ে বেশি টাকা পাবে, সেই সংস্থাকেই দরপত্র দেওয়া হবে। যদিও এখন যে সব সংস্থা পার্কিংয়ের দায়িত্বে, আগামী নভেম্বর পর্যন্ত তাদের বরাত দেওয়া রয়েছে। তবে মেয়র জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে তাদের আগেই সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
বর্তমানে কলকাতা পুর এলাকায় গাড়ি রাখার দু’ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। কোথাও কোথাও গাড়ি রাখতে টাকা লাগে না। আবার কোথাও ঘণ্টাপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে গাড়ি রাখতে হয়। পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বর্তমানে শহরে পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা মোট সমবায় সংস্থার সংখ্যা ২৯। ১০০টি জায়গায় ঘণ্টাপ্রতি টাকা দিয়ে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
মেয়র শোভনবাবু জানান, যে সংস্থা দরপত্রের মাধ্যমে পার্কিংয়ের দায়িত্ব পাবে, নতুন নিয়মে সেই সংস্থার কর্মীদের একটি নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হবে। এ ছাড়াও, শহরের বিভিন্ন শপিং মলে কতক্ষণ গাড়ি রাখা থাকে, তা জানার জন্য একটি মেশিন ব্যবহার করা হয়। মেয়র জানান, শহরের রাস্তায় যে সংস্থা পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকবে, তাঁদের কর্মীদেরও বাধ্যতামূলক ভাবে ওই মেশিন ব্যবহার করতে হবে। পুরসভার আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখবেন, ওই মেশিন ঠিক ভাবে কাজ করছে কি না বা হিসেবে কোথাও কোনও গরমিল আছে কি না।
পুরসভা সূত্রে খবর, ‘ফ্রি’ ও ‘ফি’ পার্কিং জোনে গাড়ি ছাড়াও ট্যাক্সি রাখারও ব্যবস্থা থাকবে। প্রয়োজনে পার্কিং জোনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। শোভনবাবু জানান, প্রতিটি পার্কিং জোনে পার্কিং ফি-র তালিকা থাকবে। ‘নো-পার্কিং’ জায়গায় গাড়ি রাখা হলে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। এলাকায় কত গাড়ি রাখা যেতে পারে এবং পার্কিং জোনের সংখ্যা কত বাড়ানো যেতে পারে, তা নিয়ে সাত দিনে মুখ্যসচিবকে রিপোর্ট দেবেন পুর-কর্তৃপক্ষ।