ঠাকুরঘর কে বানাল, খুঁজবে না পুরসভা 

ফিরহাদ হাকিম মেয়র হওয়ার পরপরই বেআইনি নির্মাণ নিয়ে বিল্ডিং দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি জানিয়ে দেন, বেআইনি নির্মাণ নিয়ে আপস করা হবে না।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০১:৫২
Share:

প্রোমোটারদের রেয়াত নয়। তবে গৃহস্থকে ছাড়! নির্বাচনোত্তর শহরে বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে এমনই নীতি চালু করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। যদিও এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা আগে জারি হয়েছিল, কিন্তু ভোটের ফল বেরোনোর পরে সেই নীতিই আলাদা মাত্রা পেয়েছে বলে জানাচ্ছে পুর প্রশাসনের একটি অংশ। পুরসভার সাফ কথা, গৃহস্থ যদি নির্মাণ-নীতি ভেঙে ছোট ঠাকুরঘর বা বারান্দা করেন, তা হলে ওই নির্মাণ সম্পর্কে কী করণীয়, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মেয়র পরিষদের বৈঠকে। কিন্তু প্রোমোটারদের বেআইনি নির্মাণ সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দেবে পুরসভা।

Advertisement

কেন এমন নীতি? পুর কর্তৃপক্ষ পরোক্ষে স্বীকার করে নিচ্ছেন, ছোট মাপের এই ‘বেআইনি’ নির্মাণ আটকানো সম্ভব নয়। তাঁদের সেই ‘পরিকাঠামো’ নেই। কিন্তু লুকিয়ে-চুরিয়ে সেই নির্মাণ যাতে বন্ধ হয়, তাই সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিককে তা আইনসিদ্ধ করার সুযোগ দিতে চান তাঁরা। তাই এই ধরনের ক্ষেত্রে ঠিক নির্মাণ ভাঙার নীতি চালু না করে ‘কেস-টু কেস’ বিচার করার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু প্রোমোটারদের সঙ্গে কোনও ভাবেই আপস করা হবে না বলে জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, ফিরহাদ হাকিম মেয়র হওয়ার পরপরই বেআইনি নির্মাণ নিয়ে বিল্ডিং দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি জানিয়ে দেন, বেআইনি নির্মাণ নিয়ে আপস করা হবে না। কিন্তু এত দিন তা ছিল শুধুমাত্র আলোচনার স্তরে। শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। গত মাসে নির্দেশিকাও জারি হয়েছে। তার পরেই ফিরহাদ জানিয়েছেন, বেআইনি বড় নির্মাণ কোনও ভাবে বরদাস্ত করা হবে না।

Advertisement

পুর প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুর এলাকার যে কোনও জায়গায় অনুমোদিত নকশার বাইরে একতলা বা তার বেশি তল তৈরি করা হলে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুর আইনের ৪০১ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নির্মাতাকে ‘স্টপ ওয়ার্ক’ নোটিস দেবেন। স্থানীয় থানাকেও ঘটনাটি জানিয়ে রাখবেন। সেই সঙ্গে ওই আধিকারিক পুরো বিষয়টি জানাবেন সংশ্লিষ্ট বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বিল্ডিং)-কে। পাশাপাশি তিনি তৈরি করবেন ‘ডেমলিশন স্কেচ প্ল্যান’।

এখানেই শেষ নয়। যদি পুরসভার দেওয়া ‘স্টপ ওয়ার্ক’ নোটিস অগ্রাহ্য করেই ওই নির্মাণকাজ চলতে থাকে, তা হলে পুর আইনের ৪০১এ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নির্মাতার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হবে। সংশ্লিষ্ট বরো ওই বেআইনি তল ভাঙার জন্য প্রস্তুতি নেবে। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে তার পরে সেটি ভেঙে দেওয়া হবে।

কিন্তু এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে বলে জানাচ্ছেন আধিকারিকদের একাংশ। তা হল, পুর নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেআইনি ওই নির্মাণ যদি ১০০ বর্গফুটের বেশি জায়গা জুড়ে হয়, তবেই তা ভেঙে দেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট নির্মাণ ১০০ বর্গফুটের কম হলে সেটি ভাঙা হবে না। সে ক্ষেত্রে ওই নির্মাণ নিয়ে কী করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মেয়র পরিষদের বৈঠকে। পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বহু বাড়ির মালিক একটু জায়গা বাড়িয়ে নেন। ছোট একটা ঠাকুরঘর বানান বা একফালি বারান্দা করেন। গৃহস্থদের এমন নির্মাণের ক্ষেত্রে মেয়র পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রোমোটারদের কোনও ভাবেই সাহায্য করা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন