বিপজ্জনক: বঙ্কিম সেতুর নীচে অবাধেই চলছে থার্মোকলের প্যাকিং বাক্স তৈরির কারখানা। বুধবার, হাওড়ায়। নিজস্ব চিত্র
সেতুর নীচেই চলছে থার্মোকল প্যাকিং বাক্সের কারখানা। চার দিকে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে মাছের হাজার হাজার প্যাকিং বাক্স। সেতুর স্তম্ভকে কাজে লাগিয়ে আলাদা ফ্লোর বানিয়ে তৈরি হয়েছে গুদামঘর। ৪৪০ ভোল্টের বিদ্যুৎ সংযোগে চলছে থার্মোকলের বাক্স তৈরির যন্ত্র। তার পাশেই চলছে স্টোভ জ্বেলে রান্নাবান্না।
বঙ্কিম সেতুর নীচে এই পরিস্থিতি দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছেন সেতু বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মধ্যে এক ইঞ্জিনিয়ার ক্ষোভ গোপন করতে পারেননি। এক সঙ্গীকে তিনি বললেন, ‘‘কার অনুমতিতে সেতুর নীচে এই জতুগৃহ তৈরি হয়েছে, তা জানতে ইচ্ছে করছে। এখানে যে পরিমাণ দাহ্য পদার্থ রয়েছে, তাতে আগুন লাগলে সেতুর ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী।’’
গত দু’দিন ধরে মহানগরের বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে কেএমডিএ-র একটি বিশেষজ্ঞ দল। বুধবার বিকেলে ওই দলের সাত জন বিশেষজ্ঞ হাওড়ায় আসেন বঙ্কিম সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে। সেতুর উপরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তাঁরা গোটা সেতু হেঁটে পরিদর্শন করেন। এক্সপ্যানশন জয়েন্টের হাল খতিয়ে দেখেন। দেখেন গার্ডারের অবস্থাও। তার ছবি তোলেন তাঁরা। এর মধ্যে কেএমডিএ-র এক কর্মী দৌড়ে এসে জানান, সেতুর উত্তর দিকের ঢালে, অর্থাৎ গোলাবাড়ির দিকে একটি অংশের পিচের চাদর উঠে যেতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে সকলেই সেখানে পৌঁছনোর পরে কংক্রিটের উপরে সেই ফাটল দেখে ইঞ্জিনিয়ারেরা সিদ্ধান্ত নেন, ফাটল নীচ পর্যন্ত গিয়েছে কি না, তা দেখতে হবে। সেই মতো সেতুর নীচে যে জায়গায় মাছবাজার বসে, সেখানে গিয়েই চমকে ওঠেন বিশেষজ্ঞেরা।
তাঁরা দেখেন, সেতুর স্তম্ভ বলতে কিছু আর দেখা যাচ্ছে না। কারণ, স্তম্ভের পাশেই কংক্রিটের পিলার তুলে তৈরি হয়েছে দোতলা। সেখানেই তৈরি হয়েছে মাছের আড়ৎ। গোটা সেতুর নীচে একই অবস্থা। দখলদারে ঠাসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়ৎদারকে প্রশ্ন করতে তিনি বলেন, ‘‘এ সব করার আগে তো কেএমডিএ-র অনুমতি নিয়েছি। তখন তো কেউ বাধা দেননি।’’ কেএমডিএ অবশ্য এই অভিযোগ মানেনি।
সেতুর স্তম্ভ ও কংক্রিটের নীচের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘আজ পুরো সেতুর স্বাস্থ্য খুঁটিয়ে দেখা হল। ৪০ বছরের পুরনো সেতুর যা যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে। ঠিক কী হয়েছে, তা আরও যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এখনই তাই সব বলা যাবে না।’’