তেলের শিশি বা দেশ নয়, দেশের আকাশটাকেই এ বার চার ভাগে ভাগ করে ফেলা হচ্ছে! আকাশের এক একটি টুকরো পাচ্ছে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই ও কলকাতা! চেন্নাই তার ভাগের আকাশ পেয়ে গিয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার পেতে চলেছে কলকাতা। এই শহরের ভাগেই পড়ছে সব চেয়ে বেশি আকাশ!
হেঁয়ালি নয়, বাস্তবেই ঘটতে চলেছে এমনটা। যাতে এখনকার চেয়ে খানিকটা কম খরচে দেশ-বিদেশের এক শহর থেকে আর এক শহরে উড়ে যাওয়া যায়।
উঁচু আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানগুলিকে এখন নিয়ন্ত্রণ করে দেশের ছোট-বড় অনেকগুলি শহর। এ বার থেকে সেটি করা হবে চারটি বড় শহর থেকে। তাতে যে উচ্চতায় উড়লে সবচেয়ে কম জ্বালানি খরচ হয়, বিমানকে সেই উচ্চতায় ওড়ার অনুমতি দেওয়া যাবে। ফলে জ্বালানি সাশ্রয় হবে। আর তাতে সুবিধে হবে যাত্রীদের। প্রতিযোগিতার বাজারে আরও কমবে বিমান টিকিটের দাম। বিমান পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জ্বালানি কম পুড়লে দূষণও কমবে বাতাসে। সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
কী ভাবে বাঁচবে জ্বালানি?
এত দিন কলকাতা থেকে যে সব বিমান দিল্লি যেত, মাঝ পথে সেগুলির নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হত বারাণসী এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর হাতে। একই ভাবে মুম্বই উড়ে যাওয়া বিমানের নিয়ন্ত্রণ মাঝ পথে তুলে নিত নাগপুর এটিসি।
এ ভাবে বার বার নিয়ন্ত্রণ বদলে যাওয়ায় বিমান তার কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় ওড়ার সুযোগ পায় না। কলকাতা বা দিল্লি এটিসি আকাশে দুই বিমানের মধ্যে দূরত্ব যতটা কম রাখতে পারে, নাগপুর বা বারাণসী এটিসি ততটা পারে না। ফলে, ওই সব শহরের এটিসি-র আওতায় ঢুকলেই গতি কমিয়ে দিতে হয়। বেশি দূরত্ব রাখতে হয় দু’টি বিমানের মধ্যে। সব চেয়ে বড় কথা চাইলেই কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় ওঠা যায় না। এতে জ্বালানি পোড়ে বেশি। সেই অনুপাতে দূষণ বাড়ে বাতাসে। নতুন পরিকল্পনায় সেই সমস্যার সমাধান হতে চলেছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে চেন্নাইয়ে। এ বার কলকাতার পালা। ২০ অগস্ট, বৃহস্পতিবার থেকে বেড়ে যাওয়ার কথা এই শহরের আকাশসীমাও। এর পরে দিল্লি ও মুম্বইয়ের পালা।
তবে, এ নিয়ে কিছু সমস্যাও রয়েছে। এটিসি অফিসারদের নিয়ে তৈরি সংগঠন এটিসি গিল্ড-এর অভিযোগ, কলকাতায় এখনই অফিসারের সংখ্যা কম। বর্তমান ব্যবস্থাতেই তাঁদের বাড়তি সময় কাজ করতে হচ্ছে। আকাশসীমা বেড়ে গেলে আরও চাপ বাড়বে। এক অফিসারের কথায়, ‘‘বিমানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মনিটরের সামনে একটানা ২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সে সময় এক মুহূর্তও মনিটর থেকে চোখ সরানো যায় না। এর পরে আধ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতেই হয়। নইলে ক্লান্তি চলে আসে।’’ গিল্ডের সবর্ভারতীয় সভাপতি ডি কে বেহরার তাই দাবি, কর্মী সংখ্যায় বিশাল ঘাটতি নিয়ে আকাশসীমা বাড়ালে চাপ পড়বে অফিসারদের উপরে। তাতে বিঘ্নিত হতে পারে বিমানের নিরাপত্তা।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে চিঠিও দিয়েছে গিল্ড। বলা হয়েছে, কলকাতা থেকে তুলনায় ছোট শহরে বদলি হয়ে যাওয়া এটিসি অফিসারদের অবিলম্বে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হোক। এবং কলকাতা থেকে অবিলম্বে বদলি বন্ধ করা হোক। এ ভাবে আপাতত ঘাটতি মেটানো সম্ভব। তা ছাড়া, দিল্লি-মুম্বইয়ে এই প্রকল্প চালু হতে কয়েক মাস বাকি। তত দিনে কলকাতার জন্য আরও কিছু অফিসারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে।
লোকবলের অভাবের কথা উঠেছে মুম্বই-দিল্লির ক্ষেত্রেও। তবে অফিসাররা চান, কলকাতাকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। কারণ চার ভাগের মধ্যে কলকাতার আকাশসীমাই হতে চলেছে সব চেয়ে বড়। তাই লোকবল বাড়ানোর আগে কলকাতায় এই প্রকল্প চালু না করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। তাতে অবশ্য সায় নেই কর্তৃপক্ষের। পূর্বাঞ্চলের রিজিওনাল এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ি জানান, আগাম পরিকল্পনা করেই ২০ তারিখ থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘বদলি স্থগিত করে, পুরনো অফিসারদের ফিরিয়ে আনার জন্য দিল্লিকে বলা হয়েছে। তা ছাড়া আগামী মাসেই সারা দেশে নতুন ২০০ জন অফিসার নিয়োগ করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জনকে প্রশিক্ষণ শেষে আমরা পাব।’’ আপাতত ৩১ অগস্ট পর্যন্ত নতুন প্রকল্পে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন অফিসারেরা। তার মধ্যে কর্মী সঙ্কটের সুরাহার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে কর্তৃপক্ষকে।
যার অর্থ, কলকাতার আকাশ বড় হচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকেই। তাতে বিমানযাত্রায় খরচের বহর কতটা কমে, সেটাই দেখার।