Businessman

হাওড়ায় বান্ধবীর বাড়িতে এসে রহস্যজনক ভাবে খুন ব্যবসায়ী

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান, খুনের আগে ওই ব্যক্তির সঙ্গে প্রবল ধস্তাধস্তি হয় অভিযুক্তদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০৩:৪২
Share:

অকুস্থল: খুনের তদন্তে পুলিশকর্মীরা। শুক্রবার, হাওড়ার জেলিয়াপাড়ায়। (ইনসেটে) ধৃত বিশাল দুবে। । নিজস্ব চিত্র

হাওড়ার বাসিন্দা এক মহিলার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই আলাপ গড়ায় ঘনিষ্ঠতায়। শুক্রবার সেই বান্ধবীর বাড়িতে এসেই রহস্যজনক ভাবে খুন হয়ে গেলেন কলকাতার এক পরিবহণ ব্যবসায়ী। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, একটি বড় কাঁচি দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে। এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার জেলিয়াপাড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যবসায়ীর নাম আশিস সিংহ (৪৫)। বাড়ি কলকাতার হাইড রোডে। খুনের অভিযোগে কবিতা দুবে নামে ওই মহিলা ও তাঁর মেজো ছেলে বিশাল দুবেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান, খুনের আগে ওই ব্যক্তির সঙ্গে প্রবল ধস্তাধস্তি হয় অভিযুক্তদের। সেই সময়ে কবিতাও ভাল রকম চোট পান। এর পরে দুবে পরিবার কবিতাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলেও গুরুতর জখম আশিস দু’ঘণ্টা মেঝেতেই পড়ে থাকেন।

কবিতাদের প্রতিবেশীরা আশিসকে ওই অবস্থায় যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখেও উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেননি। পরে আশিস নিজেই কোনও মতে ফোন করে ছেলেদের ডেকে আনেন। তাঁর দুই ছেলে কলকাতা থেকে এসে আশিসকে যখন হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান, তখনও বেঁচে ছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু একটু পরেই চিকিৎসকেরা এসে দেখেন, তিনি মারা গিয়েছেন।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে আশিসের সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় জেলিয়াপাড়া এলাকার ১২১ নম্বর জিটি রোডের বাসিন্দা কবিতার। তাঁরা কুড়ি বছর ধরে ওই বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে রয়েছেন। বছর চল্লিশের কবিতার তিন ছেলে। স্বামী বিনোদ দুবে স্থানীয় একটি স্কুলের দারোয়ান। পুলিশ জানায়, ফেসবুকে আলাপ হওয়ার পরে কবিতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে আশিসের। তার পর থেকে প্রায়ই ওই মহিলার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন তিনি।

পাড়ার লোকজন জানিয়েছেন, কবিতা এলাকায় ধর্মপ্রাণ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় কীর্তন গাইতে যেতেন। আশিস যাওয়া-আসা করলেও তাঁদের কখনও কিছু সন্দেহ হয়নি। এ দিনও এলাকার অনেকে আশিসকে কবিতার ঘরে ঢুকতে দেখেন। কিছু ক্ষণ পরেই ওই বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে প্রবল চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পান তাঁরা। অনেকে ছুটে যান ঘরের সামনে। কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় তাঁরা ফিরে আসেন।

এ দিন জেলিয়াপাড়ার ওই পুরনো দোতলা বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। বাড়ির অন্য ভাড়াটেরা জটলা করছেন এক দিকে। লিলি সিংহ নামে এক ভাড়াটে জানান, ঘরে যখন গোলমাল হচ্ছিল, তখন আশিস ছাড়াও সেখানে বিশাল ও কবিতা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘরের ভিতরে যে প্রবল মারপিট হচ্ছে, তা বুঝতে পারছিলাম। জিনিসপত্র ছোড়ার আওয়াজ হচ্ছিল। কিছু ক্ষণ পরেই সব থেমে গেল। দেখলাম, বাইরে থেকে ছুটতে ছুটতে আসছেন কবিতার বড় ছেলে সৌরভ ও স্বামী বিনোদ। ওঁরাও ঘরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন।’’

প্রতিবেশীরা জানান, তখনও তাঁরা বুঝে উঠতে পারেননি, ভিতরে ঠিক কী ঘটেছে। এর পরে কবিতাকে তাঁর স্বামী ও দুই ছেলে মিলে যখন পাঁজাকোলা করে বাইরে বার করছেন, তখন দেখা যায়, মহিলার পিঠ দিয়ে রক্ত ঝরছে। আর ঘরের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছেন আশিস। পরে ওই ব্যক্তিই ফোন করে ছেলেদের জানান তাঁর অবস্থার কথা। প্রায় দু’ঘণ্টা আশিসকে ওই ভাবে পড়ে থাকতে দেখেও এলাকার কেউ তাঁকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেননি। পরে দুই ছেলে এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা বড় কাঁচি উদ্ধার হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ওই কাঁচি দিয়েই আশিসের পেটে কোপানো হয়েছিল। কাঁচিটি ফরেন্সিক তদন্তে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে কবিতা ও তাঁর মেজো ছেলে বিশালকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের শনিবার আদালতে তোলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন