খুশিতে মাতল সন্ত মা-র শহর

তিনি সকলের মা ছিলেন। ধর্মের বেড়াজাল কোনও দিন মায়ের স্নেহে সীমানা টানতে পারেনি। তাই মায়ের সন্ত হওয়ার আনন্দও ধর্মের বাঁধ মানল না। এক দিকে ভ্যাটিক্যান সিটিতে যখন মাদার টেরিজার সন্তায়ন চলছে, তখন কলকাতাবাসী নিজেদের মতো করেই দিনভর মাকে শ্রদ্ধা জানালেন।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় ও তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৭
Share:

কলামন্দিরে সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠানে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

তিনি সকলের মা ছিলেন। ধর্মের বেড়াজাল কোনও দিন মায়ের স্নেহে সীমানা টানতে পারেনি। তাই মায়ের সন্ত হওয়ার আনন্দও ধর্মের বাঁধ মানল না।

Advertisement

এক দিকে ভ্যাটিক্যান সিটিতে যখন মাদার টেরিজার সন্তায়ন চলছে, তখন কলকাতাবাসী নিজেদের মতো করেই দিনভর মাকে শ্রদ্ধা জানালেন। সন্তায়ন একটি বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও আনন্দে যোগ দিলেন নানা ধর্মে বিশ্বাসী শহরবাসী। বিশপ, ফাদার, সিস্টারদের সঙ্গে বহু সাধারণ মানুষও এই ‘উৎসবে’ সামিল হলেন। যাঁরা অনেকেই এই ধর্মাবলম্বী নন।

উৎসবই বটে। কোথাও বড় পর্দার মাধ্যমে ভ্যাটিক্যানের অনুষ্ঠান সরাসরি শহরবাসীর কাছে পৌঁছে দিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, কোথাও আবার রবিবারের সন্ধ্যায় গির্জার প্রার্থনা সভা হয়ে উঠল সর্বধর্মের মিলনক্ষেত্র।

Advertisement

স্কুলের কচিকাঁচা থেকে বয়োঃজ্যেষ্ঠ সিস্টার, সকলেই ছুটির দিন কাটালেন ভিন্ন ছন্দে। সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। এ দিন কলামন্দিরে স্কুলপড়ুয়াদের হাত ধরেই শহরবাসীর উদ্‌যাপন শুরু হল। শহরের কয়েকটি বেসরকারি স্কুল মাদার টেরিজাকে নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কেউ মাদার টেরিজা সেজে শহরবাসীকে মনে করিয়ে দেয় আজও সমাজে মায়ের কতটা প্রয়োজন। কেউ আবার মাদার ও প্রকৃতির সম্পর্ক নাচের ছন্দে তুলে ধরে। এই ভাবেই গান, কবিতা, নাটক, নাচের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করা হল মায়ের সন্ত হয়ে ওঠার দিন। এই অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক ছিলেন সৌরভ মুখোপাধ্যায়। মায়ের স্পর্শ তিনি পেয়েছিলেন। এ দিন তাঁর কথায় বারবার উঠে আসে সেই সব দিনের কথা। শহরের একাধিক স্কুলের সঙ্গে যুক্ত তিনি। সৌরভ বলেন, ‘‘মাদারের সেবা দর্শন আজকের প্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। টেরিজা যে ভাবে সমাজের সকল স্তরের জন্য কাজ করতেন, এই প্রজন্মও যেন সমাজ কল্যাণের ভাবনা নিয়ে বড় হয়, তাই এই অনুষ্ঠান।’’

এ দিনটা একটু অন্য রকম ভাবে কাটালেন লোরেটো হাউসের সদস্যেরা। সন্ত মায়ের দীর্ঘ কর্মজীবনের একটা অংশ সেখানেই কেটেছে। তাই এ দিনটা তাঁদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দিন তাঁরা রেনবো চাইল্ডদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। হাউসের সদস্যেরা মাদার টেরিজার মূর্তি ফুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছিলেন মূল ফটকের সামনে। হাউসের সদস্য থেকে পথচলতি সাধারণ মানুষ, সকলেই সেখানে ফুল দিয়ে মাদার টেরিজাকে শ্রদ্ধা জানান। ভিতরে হয় ‘পরিবেশ ও বিজ্ঞান চর্চা’ বিষয়ে একটি বিজ্ঞান প্রদর্শনী। তাঁর সঙ্গে ছিল বিভিন্ন প্রতিযোগিতাও। লরেটো হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রেনবো চিলড্রেন হল অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে সমাজে পিছিয়ে পড়া অংশের সন্তানেরা। তারা এই স্কুলের তত্ত্বাবধানেই থাকে। লোরেটো হাউসের সিস্টার সাবরিনা বলেন, ‘‘এই রেনবো চিলড্রেন আমাদের কাছে খুব আদরের। তাই এই বিশেষ দিনটা আমরা ওদের সঙ্গেই কাটালাম।’’


লোরেটো হাউসের সামনে মায়ের কাছে প্রার্থনা।

পিছিয়ে থাকেননি বড়রাও। উত্তর কলকাতার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মাদার টেরিজার একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং স্থানীয় কাউন্সিলর ইলোরা সাহা। এর পরেই এলাকায় একটি পদযাত্রাও হয়। তাতে অংশ নেন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মিশনারিজ অব চ্যারিটির সদস্যেরাও। বহু প্রতিবন্ধীরাও সেই মিছিলে যান হুইলচেয়ার নিয়ে। উল্টোডাঙায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও মাদারের ছবিতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর তথা ৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অনিন্দ্যকিশোর রাউত। এ দিন হাজরা মোড়ে টাঙানো বড় পর্দার সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। সেখান থেকেই ভ্যাটিক্যানে সন্তায়নের অনুষ্ঠান দেখেন তাঁরা।

তবে সম্মানের এত ভারেও চাপা পড়ল না মাতৃত্ব। মা কিন্তু মা-ই থেকে গেলেন। ভ্যাটিক্যান সিটির অনুষ্ঠানে তাঁকে সন্ত বলে ঘোষণা করা হলেও অনুগামীদের কাছে তিনি কেবলই মা। মাদার টেরিজা।

রবিবার ভ্যাটিক্যান সিটিতে তাঁর সন্তায়ন পর্বের পরে কলকাতায় মিশনারিস অব চ্যারিটির তরফে জানানো হয়, টেরিজা সকলের মাদার। এত দিন তাঁকে সম্বোধন করা হত ‘ব্লেসেড মাদার টেরিজা অব ক্যালকাটা’ বলে। এ বার থেকে বলা হবে ‘সেন্ট মাদার টেরিজা অব ক্যালকাটা’।

রবিবার ছবি দু’টি তুলেছেন সুমন বল্লভ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন